একটি স্বপ্নের দৌড়ের পরে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার বাজার একটু বিশ্রাম নিয়েছে। ৯ দিন একনাগাড়ে ওঠার পরে এটি যথেষ্ট স্বাভাবিক। সেনসেক্স কিছুটা নামলেও কিন্তু ২৭,০০০ ধরে রাখতে পেরেছে। নিফ্টিও আছে ৮,০০০-এর উপরেই। এতটা চড়া বাজারে কিছু মানুষ শেয়ার বিক্রি করলেও বিদেশি লগ্নিকারীরা কিন্তু সওদা কমায়নি। এটিই বাজারের বড় ভরসা। ডলার প্রবাহে ঘাটতি না- থাকায় টাকার দামও কিছুটা বেড়েছে গত সপ্তাহে। অর্থনীতির দিক থেকে খারাপের তুলনায় ভাল খবরের আধিক্য থাকায় বাজারে বড় রকমের কোনও পতনের আশঙ্কা কেউ করছেন না। বরং বিক্রির চাপ কিছুটা কমলে বাজার আবার উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থনীতি সম্পর্কে আশা ক্রমশই বাড়ছে। আগামী ৩ বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার রঘুরাম রাজন। আগের তিন মাসে তা স্পর্শ করেছে ৫.৭%। কমেছে চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি, বেড়েছে গাড়ি বিক্রি। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে আশা জাগানোর পরিবেশ।
নরেন্দ্র মোদীর জাপান সফর সময় হলে ফল প্রসব করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন সরকারের বিভিন্ন আর্থিক পরিকল্পনা আস্থা জাগাতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষের মনে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির খবর আসতে শুরু করেছে। এখন প্রয়োজন শিল্প এবং পরিকাঠামোয় বড় আকারের লগ্নির। প্রাণ ফেরা প্রয়োজন নতুন ইস্যুর বাজারে। সুদ একটু কমলে শিল্পে লগ্নি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তা ছোট মেয়াদে হওয়ার সম্ভাবনা কম।
২৮ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী সূচনা করেছেন ‘জন-ধন’ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রকল্পের। লক্ষ্য, নতুন ১০ কোটি পরিবারকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আনা। এই সব পরিবারকে দেওয়া হবে ‘জিরো ব্যালান্স’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুবিধা। আগামী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ব্যাঙ্কিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে ৭.৫ কোটি পরিবারে, যাঁদের এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। নতুন অ্যাকাউন্টে থাকবে ১ লক্ষ থেকে ১.৩০ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমার সুবিধা। যাঁদের অ্যাকাউন্ট ভাল ভাবে পরিচালিত হবে, তাঁরা পাবেন ৫,০০০ টাকা ঋণের সুবিধা। এরই মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক খুলেছে ২০ লক্ষ প্রাথমিক অ্যাকাউন্ট। ১৬ অগস্টের পরে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক খুলেছে ১ লক্ষ অ্যাকাউন্ট। এই ব্যাঙ্কের লক্ষ্য, চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে নতুন ২ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে খুলেছে ৮ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্ট। সব ব্যাঙ্ক এই গতিতে অ্যাকাউন্ট খুললে অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যপূরণ খুব একটা কঠিন হবে বলে মনে হয় না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে এখনও ব্যাঙ্ক পৌঁছয়নি, সেখানে ডাকঘরের সুবিধা নেওয়া হবে। সারা দেশে যেখানে ব্যাঙ্কের মোট ৮৫,০০০ শাখা আছে, সেখানে ডাকঘরের সংখ্যা ১.৫৪ লক্ষ। একই ধরনের একটি প্রকল্পে ডাকঘরের সুবিধা নিয়ে সাফল্য পেয়েছে ব্রাজিল। দেশের অধিকাংশ পরিবারকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আনতে পারলে পেনশন-সহ নানা ধরনের ভর্তুকির টাকা সরাসরি পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগায় এবং গাড়ি বিক্রি বেড়ে ওঠায় বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতা নতুন করে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এম অ্যান্ড এম এবং টাটা মোটরস লগ্নি করবে ৪ হাজার কোটি টাকা, বজাজ অটো ২ হাজার কোটি টাকা এবং ফোক্সভাগেন ১,৫০০ কোটি টাকা। শেয়ার বাজারেও ভাল রকম দাম বেড়েছে মারুতি-সুজুকি, বজাজ অটো, হিরো মোটোকর্প, এম অ্যান্ড এম-সহ বিভিন্ন গাড়ি এবং বাইক নির্মাণকারী সংস্থার শেয়ারের। নতুন নতুন বরাত পাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। মার্কিন অর্থনীতির হাল ফেরায় বাড়তে শুরু করেছে ইনফোসিস, টিসিএস, এইচসিএল-এর মতো তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারের দাম। মধ্যপ্রদেশে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প স্থাপনের বরাত পেয়েছে এল অ্যান্ড টি। এর ফলে প্রভাবিত হয়েছে মূলধনী পণ্য নির্মাণকারী এই সংস্থার শেয়ারের বাজার দরও।