উচ্চ মধ্যবিত্ত ক্রেতা টানতে এ বার বিলাস-বৈভবের মোড়কে আবাসন প্রকল্প সাজাচ্ছে নির্মাণ শিল্প।
ক্রেতাদের উপর বাড়তি খরচ না-চাপিয়েই জল, হাওয়া ও শব্দ দূষণ ঠেকানোর ব্যবস্থা, স্কাইওয়াক থেকে শুরু করে ডিজাইনার টাইলের মতো বিলাসিতার উপকরণ জোগাচ্ছেন নির্মাতারা। প্রতিযোগিতার বাজারে আলাদা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে এই বিলাসিতাই এখন তাদের তুরুপের তাস।
সরাসরি ছাড় ও উপহারের চমক অবশ্যই ক্রেতা টানতে সাহায্য করে। কিন্তু একই সঙ্গে আর পাঁচটা প্রকল্পের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রকল্পের বিশেষত্ব বজায় রাখতে এই বাড়তি বিলাসিতার ছোঁয়া কাজে দেয় বলে জানান নির্মাণ শিল্প বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের বাড়তি সুবিধা সংস্থার ও আবাসন প্রকল্প, দুইয়েরই ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করে দেয়। বাড়তি খরচের জন্য লাভ কি়ঞ্চিৎ কমলেও দ্রুত বিক্রি হয়ে যায় এ ধরনের প্রকল্প।’’
আর এই বিপণন কৌশলকেই হাতিয়ার করছে টাটা হাউসিং-এর মতো জাতীয় স্তরের সংস্থা। এ বার তাদের বাজি ‘ওয়েলনেস হোম’ বা স্বাস্থ্যকর পরিবেশের বাড়ি। সংস্থার বিপণন কর্তা রাজীব দাশের দাবি, পরিবেশ দূষণ আটকাতে তাঁদের প্রকল্পে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ভিটামিন সি ক্যাপসুল মিশ্রিত জল ছাড়াও থাকবে শব্দ দূষণ ঠেকানোর জন্য বিশেষ কাচ ও প্রযুক্তি। প্রতিটি বাড়িতে বসানো হবে বায়ু শোধক যন্ত্র। আলাদা খরচ ছাড়াই ক্রেতা এই বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে তাঁর দাবি।
শুধুই বিপণনে চমক দিতে নয়। টাটা হাউসিং বাজার যাচাই করেই এই প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। ‘ওয়েলনেস’ বা সুস্থ থাকার বাজারের পরিমাণ এখন ৫০ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর যা প্রায় ৩০% হারে বাড়ছে। এই বাজারে আবাসনকেও সামিল করা সম্ভব বলে মনে করছে সংস্থা।
একই ভাবে ক্রেতার চাহিদা উসকে দিতে চাইছে স্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলিও। যেমন প্রতিযোগিতার বাজারে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে ইতালীয় ডিজাইনার ভার্সাশে-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রাজ্যের নির্মাণ সংস্থা জৈন গোষ্ঠী। সংস্থার দাবি, পূর্ব ভারতে তারাই প্রথম ভার্সাশে-র তকমা নিজেদের তৈরি আবাসনের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারল। গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা ঋষি জৈন জানান, রাজারহাটে ‘ড্রিম ওয়ান’ প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে ভার্সাশে টাইল ও ওয়ালপেপার। ইতালীয় ডিজাইনারের সঙ্গে চুক্তিপত্রও সই হয়ে গিয়েছে। তিন একরের একটু বেশি জমিতে গড়া হবে ২২৯টি ফ্ল্যাট। তৈরি হবে ভিলাও। গোষ্ঠীর দাবি, ডিজাইনার উপকরণ ছাড়াও প্রকল্পের বাড়তি আকর্ষণ রিমোট কন্ট্রোল দরজা, পর্দা, আলো ইত্যাদি।
বিলাসিতার আর এক উপকরণ হিসেবে আবাসন প্রকল্পে স্কাইওয়াক তৈরি করছে সিদ্ধা গোষ্ঠী। খোলা আকাশের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার এই বিলাসিতা এত দিন ক্রেতার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। আর সেই বিলাসিতাই এখন ক্রেতা জিতে নেওয়ার নতুন কৌশল সংস্থার। এই কৌশল যে কাজে দিয়েছে তা প্রমাণ করেছে এই নড়বড়ে বাজারেও ক্রেতাদের এ ধরনের প্রকল্পে বাড়তি আগ্রহ। সিদ্ধা গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় জৈনের দাবি, বাড়তি পাওনার টানে ইতিমধ্যেই ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে শুধু মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাট বিক্রি করে ব্যবসায় টিকে থাকা নয়। তুলনায় দামি ফ্ল্যাট দ্রুত বিক্রি করতে বিলাসিতার মোড়কও ব্যবহার করছে নির্মাণ শিল্প।