বিশেষ একটি সূত্র মেনে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা গ্র্যাচুইটির টাকা পেয়ে থাকেন। — প্রতীকী ছবি।
গ্র্যাচুইটির নিয়মে বড় বদল এনেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফলে এ বার থেকে এক বছর চাকরি করলেই এই আর্থিক সুবিধা পাবেন বেসরকারি সংস্থার চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়িজ়রা। সুনির্দিষ্ট একটি নিয়ম মেনে করা হয় গ্র্যাচুইটির হিসাব। সেটা জানা থাকলে এই খাতে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা ঘরে বসেই হিসাব করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মী। আনন্দবাজার ডট কম-এর এই প্রতিবেদনে তুলে দেওয়া হল গ্র্যাচুইটি হিসাবের সেই সূত্র।
কর্মী বা শ্রমিকদের সর্বশেষ মূল বেতনের (পড়ুন বেসিক পে) উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় গ্র্যাচুইটি। এর সূত্রটি হল (সর্বশেষ মূল বেতন X চাকরির বছরের সংখ্যা X ১৫)/২৬। এখানে ১৫ বলতে এক বছরের ১৫টি কর্মদিবসের মজুরি বোঝানো হয়েছে। রবিবারকে বাদ দিয়ে মাসিক কর্মদিবসের সংখ্যা হিসাব ২৬ দেখানো হয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে যদি কোনও কর্মীর সর্বশেষ মূল বেতন ৫০ হাজার টাকা হয় এবং তিনি ন’বছর চাকরি করেন, তা হলে সূত্র অনুযায়ী গ্র্যাচুইটি বাবদ তিনি পাবেন ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬১৫ টাকা। হিসাবটা দাঁড়াবে, (৫০,০০০ X ৯ X ১৫)/২৬। এখানে উল্লেখ্য, ছ’মাসের বেশি সময়কালকে পূর্ণ বছর হিসাবে ধার্য করা হবে। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যদি আট বছর সাত মাস কাজ করেন, তা হলে গ্র্যাচুইটির গণনার সময় তাঁর চাকরির বছরের সংখ্যা দাঁড়াবে ন’বছর।
গ্র্যাচুইটি কিন্তু আয়করের আওতার বাইরে নয়। আয়কর আইনের ১০(১০) নম্বর ধারা অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা এই খাতে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাবেন। গ্র্যাচুইটিতে তার বেশি টাকা পেলে কর দিতে হবে তাঁকে। সরকারি কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটিকে অবশ্য আয়করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
কর্মরত অবস্থায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে গ্র্যাচুইটি পাবেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সেই অর্থ সাধারণ ভাবে করমুক্ত। এই ধরনের ক্ষেত্রে অনেক সময় মৃত কর্মীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তরাধিকারের প্রশ্নে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেটা এড়াতে নমিনি করে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
সরকারি হোক বা বেসরকারি সংস্থা, উভয় ক্ষেত্রেই গ্র্যাচুইটির অর্থ দ্রুত প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। নির্ধারিত তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে সেটা না করলে আইন অনুযায়ী বিলম্বের জন্য সুদ দিতে হবে তাদের। কর্মীদের ওই সুদ দাবি করার বা প্রশাসনে অভিযোগ দায়ের করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে নিয়োগ সংস্থাকে জরিমানার বিধান রয়েছে।
১৯৭২ সালে গ্র্যাচুইটি পেমেন্ট আইন তৈরি করে কেন্দ্র, যা আজও চালু রয়েছে। ১০ বা তার বেশি কর্মী নিয়োগকারী সংস্থার ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গ্র্যাচুইটি কিন্তু নিয়মিত বেতনের অংশ নয়। দীর্ঘমেয়াদি চাকরির কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসাবে এই আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে নিয়োগকারী সংস্থা। আগে একটানা পাঁচ বছর চাকরি না করলে পাওয়া যেত না গ্র্যাচুইটি। সেই সময়সীমাকে এক বছরে কমিয়ে এনেছে কেন্দ্র। গত শুক্রবার, ২১ নভেম্বর এই ইস্যুতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শ্রম মন্ত্রক।