ইনফোসিসের প্রভাব বাজারে পড়বে আজ

তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ওঠায় যখন জীবন অতিষ্ঠ, তখন শেয়ার বাজারের লগ্নিকারীরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন বেড়ে ওঠা সূচকের উত্তাপ। বহু দিন ঝিমিয়ে থাকা বাজারে যেন আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে একটি ভাল লাগার (ফিল গুড) পরিবেশ।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ওঠায় যখন জীবন অতিষ্ঠ, তখন শেয়ার বাজারের লগ্নিকারীরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন বেড়ে ওঠা সূচকের উত্তাপ। বহু দিন ঝিমিয়ে থাকা বাজারে যেন আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে একটি ভাল লাগার (ফিল গুড) পরিবেশ।

Advertisement

বছরের গোড়াতেই সুদ কমানো হয়েছে। ৫ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। এতে পথ প্রশস্ত হয়েছে আরও সুদ কমার। ফেব্রুয়ারিতে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ২% আর যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, বর্ষার পূর্বাভাস। পরপর দু’বছর খরার পরে এ বার বর্ষা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হবে তা হবে দেশ জুড়ে— আবহাওয়া দফতরের এই পূর্বাভাস আনন্দের জোয়ার এনেছে অর্থনীতি, শিল্প এবং শেয়ার বাজারে। বর্ষা স্বাভাবিক হলে ও পণ্যমূল্য নীচের দিকে গেলে আরও সুদ কমানো হবে এমন ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন।

ভাল খবরের এখানেই শেষ নয়। ফলাফলের মরসুম ‘ওপ্‌ন’ করতে এসে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছে অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। আশার তুলনায় অনেকটাই ভাল ফল প্রকাশ করেছে বিশাল সিক্কার নেতৃত্বাধীন এই কোম্পানি। বাজার বন্ধ থাকায় এই ফলাফলের প্রভাব এখনও সূচকের উপর দেখা যায়নি। সোমবার বাজার খুললে দেখা যাবে ইনফোসিস এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ার এবং গোটা বাজারের উপর এই ফলাফলের কী প্রভাব পড়ে।

Advertisement

আরও একটি ভাল খবর হল, বিদেশি লগ্নিকারীদের ভারতে প্রত্যাবর্তন। বাজারের উত্থানের জন্য ভাল বর্ষার পাশাপাশি বিদেশ থেকে লগ্নি আসাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত এক মাসে বেশ খানিকটা বেড়েছে বিদেশি লগ্নি ফিরে আসার গতি।

সব মিলিয়ে পরিবেশ এখন বেশ সদর্থক। ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দেশে বিদেশে বারংবার আশার বাণী শোনাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পরিস্থিতি পাল্টানোয় বাজারও গত দে়ড় মাসে উঠে এসেছে বেশ খানিকটা। বাজেটের আগে যে-সেনসেক্স ২২ হাজারের ঘরে নেমে এসেছিল, তা গত সপ্তাহে আবার পার করেছে ২৬,৫০০-এর মাত্রা। স্বাভাবিক ভাবেই লগ্নিকারীরা খুশি। বহু শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি ন্যাভ-ও বেড়েছে ইক্যুইটি-নির্ভর প্রায় প্রত্যেক মিউচুয়াল প্রকল্পের। অতীতে আমরা সেনসেক্সকে ৩০ হাজার পর্যন্ত উঠতে দেখেছি। এখন মানুষের অভিলাষ মুম্বই সূচক এই ধাক্কায় আবার ওই উচ্চতায় পৌঁছে যাক। এই প্রসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, সূচক যে এতটা উঠেছে, তার অনেকটাই কিন্তু আশার উপর ভর করে। এই আশা-নির্ভর ‘র‌্যালি’ দীর্ঘস্থায়ী হবে, যদি আশাগুলি ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হয়। বিশেষ করে বর্ষা। একটি ভাল বর্ষা একক ভাবে অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে দিতে পারে।

ফলাফলের মরসুম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম বলেই সিক্কার ছক্কা অবশ্যই বাজারকে উদ্বুদ্ধ করবে। ফেব্রুয়ারিতে শিল্পোৎপাদন ২% বাড়ায় আশা করা হচ্ছে বেশ কিছু কোম্পানি অপেক্ষাকৃত ভাল ফল প্রকাশ করবে। ইনফোসিস শুধু তাক-লাগানো ফলাফলই প্রকাশ করেনি, ২০১৬-’১৭ অর্থ বছর সম্পর্কে সংস্থার আগাম বার্তা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এবং শেয়ার বাজারের জন্য বেশ সদর্থক। চলতি বছরে আয় ১১.৫% থেকে ১৩.৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে কোম্পানির আশা। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, গত তিন বছর ইনফোসিসের প্রকৃত ফলাফল আগাম অনুমানের তুলনায় ভাল হয়েছে। শেষ তিন মাসে কোম্পানির আয় যখন আগের তিন মাসের তুলনায় ৪.১% বেড়ে ১৬,৫৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, তখন নিট লাভও ৩.৮% বেড়ে স্পর্শ করেছে ৩,৫৯৭ কোটি টাকা। গোটা ২০১৫-’১৬ সালে ইনফোসিসের মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৬২,৪৪১ কোটি টাকা (+১৭.১%)। এই সময়ে নিট লাভ হয়েছে ১৩,৪৯১ কোটি টাকা (৯.৪%)। পাশাপাশি কোম্পানির কর্মী সংখ্যা এক বছরে ১,৭৬,১৮৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৯৪,০৪৪ জন। কোম্পানির ক্রেতা সংস্থার সংখ্যাও বছরের শেষে বেড়ে হয়েছে ১,০৯২টি (+৮৯)। চলতি সপ্তাহ থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে ফলাফল প্রকাশের পালা। সূচকের সজাগ দৃষ্টি থাকবে এই সব ফলাফলের প্রতি।

শেয়ারের উত্থানে সংশ্লিষ্ট মহল যখন উজ্জীবিত, তখন আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন সুদ-নির্ভর বিরাট জনতা, বিশেষ করে পেনশন বলে যাঁদের কিছু নেই। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মূল্যবৃদ্ধি কমছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা প্রদান শুরু ও বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে পণ্যমূল্য কি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে? অর্থাৎ সুদ কমা শেয়ার বাজারের কাছে ‘পৌষ মাস’ হলেও বাজারে লগ্নিকারীদের তুলনায় বহু গুণ বেশি সংখ্যক মানুষ— যাঁরা সুদের উপর নির্ভর করে বাঁচেন, তাঁদের কথা কে ভাবছে? সরকার তো জিডিপি নিয়ে ব্যস্ত। দেশের বর্ধিত উৎপাদনের সমবণ্টন হচ্ছে কি না, তা কে দেখবে? জাতীয় আয় নীচের তলা পর্যন্ত না- পৌঁছলে অর্থনীতির ভিত কখনওই মজবুত হবে না। এঁদের আয় বাড়লে তবেই বাড়বে পণ্যের চাহিদা, চাঙ্গা থাকবে শিল্প, বাড়বে কর্মসংস্থান। সব সময়ে বিদেশ-নির্ভর হয়ে থাকতে হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন