অবশেষে কর ভারতে মরিশাসের লগ্নিতে

মরিশাস থেকে আসা বিদেশি লগ্নিকে করের আওতায় আনতে সে দেশের সঙ্গে নতুন চুক্তি করল ভারত সরকার। সেই সঙ্গেই নিয়মের গণ্ডিতে এল কর এড়ানোর স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০২:২০
Share:

মরিশাস থেকে আসা বিদেশি লগ্নিকে করের আওতায় আনতে সে দেশের সঙ্গে নতুন চুক্তি করল ভারত সরকার। সেই সঙ্গেই নিয়মের গণ্ডিতে এল কর এড়ানোর স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। একই পথে হেঁটে সংশোধিত হতে চলেছে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে চুক্তিও।

Advertisement

মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুই-এ মঙ্গলবার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। লক্ষ্য, আয়কর ও মূলধনী লাভকর অবাধে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করা। ভারতের রাজস্ব সচিব হাসমুখ অধিয়া বলেন, ‘‘এই চুক্তি ভারতে মরিশাসের সংস্থার সরাসরি বিনিয়োগ ও মূলধনী বাজারে লগ্নিকারীদের জন্য করের বিষয়টি স্পষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে সাহায্য করবে। ভারতীয় ও বিদেশি লগ্নিকারীদের মধ্যে কর নিয়ে বৈষম্যও বন্ধ করা যাবে।’’

১৯৮৩ সাল থেকে দু’দেশের মধ্যে বহাল থাকা দ্বৈত কর প্রতিরোধ চুক্তির সংশোধনীতে আজ সই করে ভারত-মরিশাস। এত দিন ওই চুক্তির অপব্যবহার করেই ভারতে লগ্নি করে কোনও রকম কর না দিয়েই পার পাওয়া যেত। সেই কারণেই তাঁদের করের আওতায় আনতে এবং কালো টাকায় রাশ টানতে এই চুক্তি সংশোধনের দাবি দীর্ঘ দিনের। এত দিন বহাল থাকা আইন অনুযায়ী মরিশাসে নথিভুক্ত কোনও সংস্থার ওপর শুধুমাত্র মরিশাসেই আয়কর বা মূলধনী লাভকর বসানো যেত। ফলে ওই সব সংস্থা ভারতে লগ্নি করলে ও এ দেশে শেয়ার বিক্রি করলে তার উপর কোনও কর বসানো যেত না। অথচ স্বল্প মেয়াদে ভারতে মূলধনী লাভকরের হার যেখানে ১০ শতাংশ, সেখানে মরিশাসে তা শূন্য। এর সুবাদেই ওই ধরনের বিদেশি লগ্নি সংস্থা কোনও দেশেই কর দিত না। ভারতীয় লগ্নিকারীদের অভিযোগ, দ্বৈত কর প্রতিরোধ চুক্তি তাই দাঁড়িয়েছিল ‘করফাঁকির বন্দোবস্ত’।

Advertisement

সংশোধনী অনুসারে ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে ভারতে ব্যবসা করা মরিশাসের সংস্থার শেয়ার বিক্রিতে বসবে মূলধনী লাভকর। তবে তা হবে ভারতে চালু থাকা ওই করের হারের অর্ধেক। মরিশাসের সংস্থা হিসেবে তাদেরই গণ্য করা হবে, যাদের সে দেশে লগ্নি ২৭ লক্ষ টাকার বেশি (গত ১২ মাসের মধ্যে)। ২০১৯-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত একই নিয়ম বহাল থাকবে। তবে ভুয়ো সংস্থা এই সুযোগ পাবে না। ২০১৯-এর ১ এপ্রিল থেকে ভারতে চালু হারেই আদায় করা হবে মূলধনী লাভকর।

তবে নতুন ব্যবস্থায় ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নি মার খাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলে। কারণ মূলধনী বাজারে পুঁজি ঢালা আর্থিক সংস্থাগুলির একটি বড় অংশই আসে মরিশাস ও সিঙ্গাপুর থেকে। ভারতের শেয়ার বাজার আগামী কাল এর প্রভাবে পড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন বিশেষজ্ঞরা।

পুরনো চুক্তির আওতায় অবশ্য বিদেশি লগ্নি অনেক সময়েই কার্যত আসত না বলেও দীর্ঘ দিন যাবৎ অভিযোগ ভারত সরকারের। কারণ, অনেক সময়ে ভারতীয়রাই এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে নিজেদের তহবিল মরিশাসের মাধ্যমে ঘুরপথে স্বদেশে বিনিয়োগ করতেন। বস্তুত একটি ভুয়ো মরিশাসের সংস্থা হিসেবে নিজেদের সংস্থাকে দেখিতে তাঁরা ওই সুযোগ নিচ্ছিলেন, যাতে ভারতের মাটিতে কোনও কর দিতে না-হয়।

‘রাউন্ড ট্রিপিং’ নামে পরিচিত এই প্রথার জেরে কেন্দ্রকে বহু কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে বলেই অভিযোগ। অথচ ১৯৮৩ সালে এই চুক্তি করার সময়ে লক্ষ্য ছিল ভারতে বিদেশি লগ্নি টানা। মাত্র ১৩ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ মরিশাস দ্রুত ভারতে বিদেশি লগ্নিতে প্রথম সারিতে উঠে আসে। কিন্তু ওই বিদেশি লগ্নি খাতায়-কলমে ভারতে এলেও আসলে তার অনেকটাই ঘুরপথে ভারতীয়দের ঢালা পুঁজি। একবার নিজেদের তহবিল মরিশাস ছুঁইয়ে আনার জন্য অনেক লগ্নিকারীই তৎপর হয়ে থাকতেন পুরনো ব্যবস্থায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement