ফিরবে না ২০১৩-র আতঙ্ক, দাবি বিশেষজ্ঞদের

ফেডের সুদ বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে এ বার অনেক বেশি তৈরি ভারত

আজ হোক বা কাল। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ যে এ বার সুদ বাড়াবে, বুধবারই তা ঘোষণা করেছেন কর্ণধার জেনেট ইয়ালেন। কিন্তু সেই ধাক্কা সামাল দিতে ভারত এখন অনেক বেশি তৈরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৩ সালে ফেড রিজার্ভ ত্রাণ প্রকল্প বন্ধ করার ইঙ্গিত দেওয়ায় তখন টাকার দরে ধস নেমেছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন ছবি অনেকটাই পাল্টেছে। এক দিকে, এই পরিস্থিতি যুঝতে আগাম ৩৪ হাজার কোটি ডলারের রেকর্ড ভাণ্ডার তৈরি রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৭
Share:

আজ হোক বা কাল। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ যে এ বার সুদ বাড়াবে, বুধবারই তা ঘোষণা করেছেন কর্ণধার জেনেট ইয়ালেন। কিন্তু সেই ধাক্কা সামাল দিতে ভারত এখন অনেক বেশি তৈরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

২০১৩ সালে ফেড রিজার্ভ ত্রাণ প্রকল্প বন্ধ করার ইঙ্গিত দেওয়ায় তখন টাকার দরে ধস নেমেছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন ছবি অনেকটাই পাল্টেছে। এক দিকে, এই পরিস্থিতি যুঝতে আগাম ৩৪ হাজার কোটি ডলারের রেকর্ড ভাণ্ডার তৈরি রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অন্য দিকে, লাগাম পরানো গিয়েছে রাজকোষ ঘাটতি, চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধির হারে। গতি ফিরতে শুরু করেছে বৃদ্ধির চাকায়। ফলে ২০১৩ সালের সেই আতঙ্কের পরিবেশ এ বার আর ফিরবে না বলেই আশা করছেন তাঁরা।

২০০৬ সালের জুন মাসের পর সুদ বাড়ায়নি ফেড রিজার্ভ। এবং মাঝের এই সময়ে বদলায়নি তাদের একটি বয়ান। তা হল, সুদ বাড়ানোর আগে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ‘ধৈর্য’ ধরতে চায় তারা। বুধবার ইয়ালেন জানিয়েছেন, এ বার বয়ান থেকে ওই ‘ধৈর্য’ শব্দটি ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। বার্তা স্পষ্ট। সুদ বাড়তে পারে যে কোনও সময়ে। তাঁর কথায়, ‘‘আগামী দিনে সুদ বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। তবে তা কখন, কী গতিতে হবে, সেটি ঠিক করতে নজর রাখা হবে মার্কিন অর্থনীতির দিকে।’’

Advertisement

শেয়ার বাজারের কারবারি এবং অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় এক দশক পরে শেষমেশ আমেরিকায় সুদ বাড়লে, ভারত থেকে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নির একটা বড় অংশ পাড়ি দিতে পারে বারাক ওবামার দেশে। আর সেই কারণেই ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে জল্পনা। তবে কি ২০১৩ সালের মতো ফের ডলারের সাপেক্ষে তল খুঁজে পাবে না টাকা? শেয়ার বাজার পড়বে হু হু করে? নাভিশ্বাস উঠবে ভারতীয় অর্থনীতির?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়লে, বিদেশি লগ্নির একটা অংশ হয়তো ভারত ছাড়বে। কিন্তু তার প্রভাব হবে সীমিত। ২০১৩ সালে ডলারের দর বাড়তে-বাড়তে যেমন ৭০ টাকার দরজায় কড়া নাড়ছিল, এ বার তেমনটা না-হওয়ারই সম্ভাবনা। এবং এর পিছনে যুক্তি হিসেবে মূলত চারটি কারণকে চিহ্নিত করছেন তাঁরা—

(১) আগের বার অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে টাকার সেই বেহাল দশা দেখেছিলেন রঘুরাম রাজন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার বাড়ানোর উপর বরাবর জোর দিয়েছেন তিনি। ডলারের দর তখনকার ৬৭-৬৮ টাকা থেকে নেমে আসার পরে নিয়মিত বাজার থেকে তা কিনে গিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ২০১৩ সালে টাকার সঙ্কটের সময় দেশের ভাণ্ডারে যেখানে ২৭,৪৮০ কোটি ডলার জমা ছিল, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৩৪ হাজার কোটি ডলার। বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি হঠাৎ দেশ ছাড়তে শুরু করলে, টাকার দামে ধস রুখতে যা ব্যবহার করবেন রাজন।

(২) টাকার দর কিছুটা পড়লেও, এ বার তা সামাল দিতে সামান্য সুবিধা হবে ভারতের। কারণ, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম তলানিতে। ফলে তা আমদানি করতে গিয়ে নাভিশ্বাস না-ওঠারই সম্ভাবনা।

(৩) ফেড যখন ত্রাণ প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল, তখন ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে এমনিতেই তলানিতে ঠেকেছিল বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা। ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তখন নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ। অবস্থা ভাল নয় দেশের অর্থনীতিরও। সেখানে এখন ঘাটতিতে শিকল পরানো গিয়েছে। ৮ শতাংশের দিকে দৌড়চ্ছে বৃদ্ধির হার। মোদী-সরকার সংস্কারের রথ ছোটাবে বলেও আশা করছেন সকলে। ভারত চিহ্নিত হচ্ছে বিশ্বে লগ্নির অন্যতম সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে। ফলে কিছু লগ্নি দেশ ছাড়লেও, তা মহামারির আকার নেবে না বলে বিশেষজ্ঞদের আশা।

(৪) আগামী দিনে আমেরিকায় সুদ বাড়লেও, তার গতি যে ঢিমে হবে, সেই ইঙ্গিত ইয়ালেনের কথায় স্পষ্ট। তিনি জানান, মার্কিন অর্থনীতিতে গতি ফিরছে। বেড়েছে কর্মসংস্থান। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদাও। কিন্তু বেতন তেমন বাড়েনি। সুবিধার নয় বাকি উন্নত দুনিয়ার দশাও। এই অবস্থায় সুদ বাড়লে, আরও দাম উঠবে ডলারের। ফলে রফতানির বাজার খোয়াবে আমেরিকা। ঘুরে দাঁড়ানোর মুখে যা মার্কিন অর্থনীতির পক্ষে বুমেরাং হতে পারে। ফলে তা এড়াতে হয়তো সুদ বাড়ানোয় ধীরে চলো নীতি নেবেন তিনি। সে ক্ষেত্রেও সইয়ে নেওয়ার সময় পাবে ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন