Union Budget 2023

প্রশ্ন রেখেই ‘ধন্যবাদ’ ছোট শিল্পের

অতিমারিতে নগদ জোগানের তীব্র সঙ্কটে ভুগেছিল এই ক্ষেত্র। অনেকেই সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বরাত মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বা দরপত্রের অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৮
Share:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) যে বিপাকে, তা মেনেছিল সরকার। তুলে ধরেছিল লকডাউনের ধাক্কায় ৯% ছোট সংস্থা বন্ধ হওয়ার এক রিপোর্ট। বিরোধীরা অবশ্য দাবি করে, প্রায় ৫৭ লক্ষ এমন সংস্থা পাকাপাকি ভাবে গুটিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও অতিমারির আবহে সাহায্য হিসাবে নগদ টাকার বদলে মূলত ঋণ ভিত্তিক কিছু সুবিধা দিয়ে সরকার দায় সেরেছে বলে অভিযোগ তোলে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির বড় অংশ। তাই এ বারের বাজেটের দিকে নজর ছিল তাদের। বুধবার সংসদে দাঁড়িয়ে এই ক্ষেত্রের জন্য বেশ কয়েকটি সুবিধা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সব পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, সংশ্লিষ্ট শিল্পের একাংশের মতে, এ বারও মূলত ঋণ ভিত্তিক সাহায্যেই জোর দেওয়া হয়েছে। পরোক্ষে কিছু আর্থিক সুরাহার বন্দোবস্ত করা হলেও, অতিমারিতে রুগ‌্ণ হয়ে পড়া কিংবা ধুঁকতে থাকা সংস্থাগুলিকে টেনে তোলার কোনও বন্দোবস্ত বাজেটে নেই।

Advertisement

প্রস্তাবে নির্মলা জানিয়েছেন, সরকারি নিশ্চয়তা প্রাপ্ত ঋণ প্রকল্প (ইমার্জেন্সি ক্রেডিট লিঙ্কড গ্যারান্টি স্কিম) আগামী এপ্রিল থেকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে তাতে ৯০০০ কোটি টাকা ঢালা হবে। সেই প্রকল্প থেকে সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত ও বন্ধকহীন ঋণ দেওয়া হয় এমএসএমই-কে। এতে সংস্থাগুলির পুঁজি জোগাড়ের খরচ প্রায় ১% কমতে পারে।

অতিমারিতে নগদ জোগানের তীব্র সঙ্কটে ভুগেছিল এই ক্ষেত্র। অনেকেই সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বরাত মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বা দরপত্রের অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়। নির্মলা এ দিন জানান, সেই সব সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাজেয়াপ্ত হওয়া অর্থের ৯৫% সংশ্লিষ্ট এমএসএমই-কে ফেরত দেবে। যা তাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে বলেই দাবি তাঁর। আবার ক্রেতারা এমএসএমই-র টাকা না মেটানো পর্যন্ত খরচের খাতা থেকে তা বাদ দিতে পারবে না। ফলে তাঁদের আশা, সময়মতো ক্রেতা সংস্থা সেই বকেয়া মেটাতে উদ্যোগী হবে।

Advertisement

আনুমানিক আয়ের ভিত্তিতে কর মেটানোর ঊর্ধ্বসীমাও বাড়িয়েছেন নির্মলা। আগে আনুমানিক আয়ের ভিত্তিতে হিসাব করা করের সুবিধা পেতেন বছরে ২ কোটি টাকার ব্যবসা করা ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি সংস্থা এবং ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করা কিছু পেশাদার। এখন তা বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩ কোটি এবং ৭৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু শর্ত, লেনদেনের ৫ শতাংশের বেশি নগদে হওয়া চলবে না। পাশাপাশি তথ্য জমা ও বণ্টনের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলির জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর তথ্য ভান্ডার ‘ডিজি লকার’ গঠন করা হবে। যাতে অনলাইনে দ্রুত সেই সংক্রান্ত কাজ সারা যায়।

নির্মলার এই সব প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিসমে, ফসমি ও ফ্যাকসির মতো ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের বিভিন্ন সংগঠন। এতে আর্থিক সঙ্কট কিছুটা কাটবে, মনে করছে তারা। তবে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের একাংশের পাল্টা দাবি, ঘুরে দাঁড়াতে এটা যথেষ্ট উপযুক্ত ‘প্রতিষেধক’ নয়। কারণ, যে সরকারি নিশ্চয়তা তহবিলের ভিত্তিতে বন্ধকহীন প্রকল্পের বড়াই করেছেন নির্মলা, বাস্তবে বহু ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই পুরোপুরি তার সুবিধা পায় না তারা। সকলেরই যে নতুন করে ঋণ নেওয়ার অবস্থা রয়েছে, সেটা-ও নয়। ফলে ধারের ব্যবস্থা করে লাভ কী, প্রশ্ন তাদের।

এমএসএমই ক্ষেত্রের অনেকের আরও দাবি, কাঁচামালের দাম এখনও চড়া থাকায় লাভজনক ভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা বহু ছোট সংস্থার। সে ক্ষেত্রে কোনও দিশা না মেলায় হতাশ একাংশ। এ ছাড়া ‘ক্রেডিট লিঙ্কড ক্যাপিটাল সাবসিডি স্কিম’, সংশোধিত ‘টেকনোলজি আপগ্রেডেশন ফান্ড স্কিমের’ মতো প্রকল্পগুলি ফের চালু, জিএসটি সংক্রান্ত সংস্কারের আর্জি জানিয়েছিল শিল্পের একাংশ। আশা মেটেনি। নতুন শিল্প তালুক ও পুরনোগুলির উন্নতির দাবিও উঠেছিল। সে দিকে অর্থমন্ত্রী আলাদা করে নজর না দেওয়ায় নগরোন্নয়নের একগুচ্ছ পরিকল্পনার জেরে সেই পরিকাঠামো আদৌ কতটা উন্নত হবে, সংশয়ে তাদের অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন