সূচকের নতুন উচ্চতা ও সুদ ছাঁটাই— গত সপ্তাহে শেয়ার বাজার নিয়ে আলোচনার মূল সুর বেঁধে দিয়েছিল এই দু’টি বিষয়ই। সেনসেক্স ৩৯ হাজার পেরিয়ে পা রেখেছে নতুন উচ্চতায়। অন্য দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের রেপো রেট কমিয়েছে। এই নিয়ে টানা দু’বার। শিল্পের আশা, এতে তাদের ঋণের খরচ কমবে। ফলে লগ্নি বাড়বে। চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। গতি আসবে বৃদ্ধির রথের চাকায়। আর শেয়ারে লগ্নিকারীদের আশা, বৃদ্ধিতে গতি এলে এতখানি উঁচুতে থাকা বাজারের পায়ের তলার জমি হবে মজবুত। তার পতনের ঝুঁকি যেমন কমবে, তেমনই বাড়বে আরও উপরে ওঠার সম্ভাবনা। বিশেষ করে যেহেতু বাজারের এই উত্থান মূলত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করেই হয়েছে।
ভোটের পরে ভারতে ক্ষমতায় আসতে পারে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সরকার— এই ধারণায় বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি পুঁজি ঢালছে বাজারে। যার হাত ধরে উঠছে সেনসেক্স, নিফ্টি। কিন্তু এই উত্থানের ঝুঁকিও বিস্তর। কারণ, ওই সব লগ্নি ভারত থেকে ফিরে গেলেই বিপুল পতনের আশঙ্কা তৈরি হয় তাতে। অনেকেই মনে করছেন, এই অবস্থায় বৃদ্ধিতে গতি আসার বিষয়টি নিশ্চিত হলে বাজারের ওই ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে। তাই সুদ কমানোর পরে আশায় বুক বেঁধেছে বাজারও।
বৃদ্ধির গতি কমে আসায় এবং মূল্যবৃদ্ধি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকাতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের রেপো রেট (যে হারে আরবিআই অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করেছে ৬%। মাত্র দু’ মাস আগে রেপো রেট কমেছিল ২৫ বেসিস পয়েন্ট। অভিযোগ, আগের সুদ ছাঁটাইয়ের সুবিধা ব্যাঙ্কগুলি তেমন ভাবে পৌঁছে দেয়নি ঋণগ্রহীতাদের ঘরে। এ বার কিন্তু তা কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত রিজার্ভ ব্যাঙ্কও যেখানে সেই কথা বলেছে ব্যাঙ্কগুলিকে।
সত্যিই তারা রেপো রেট কমার সুবিধা গ্রাহকের দরজায় পৌঁছলে কমবেশি সুদ কমতে পারে বাড়ি, গাড়ি এবং শিল্প ঋণে। পাশাপাশি, সুদ কমতে পারে জমার উপরেও। অর্থাৎ সুদনির্ভর মানুষের কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্ত খুব একটা স্বাগত নয়। এখন দেখার বিষয়, টানা দু’বার সুদ ছাঁটাইয়ের পর বৃদ্ধি কতটা গতি পায়। ২০১৮-১৯ বছরে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭%। আরবিআইয়ের লক্ষ্য ২০১৯-২০ বছরে তা ৭.২ শতাংশে তুলে আনা। গত কয়েক মাসে বিক্রি কমেছে গাড়ি শিল্পে। সম্প্রতি উৎপাদন ছাঁটাই করেছে মারুতি সুজুকি। অর্থনীতির জন্য এটা ভাল লক্ষণ নয়। গাড়ির উৎপাদন কমলে মার খাবে ইস্পাত, রং, যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, টায়ার ইত্যাদি শিল্প। একই কারণে প্রাণ ফেরা দরকার নির্মাণে। ঋণে সুদ কমলে এই দুই শিল্প উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়। কোন ব্যাঙ্ক কতটা সুদ কমাবে, তা সম্ভবত জানা যাবে চলতি সপ্তাহেই।
সেনসেক্সের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল। অর্থাৎ এ বার এপ্রিলের প্রথম দিনে তারবয়স হল ৪০ বছর। শুরু হয়েছিল ১০০ থেকে। ৪০ বছরের যাত্রায় যা স্পর্শ করল ৩৯ হাজার। গড় বাৎসরিক বৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। এত বছরের ডিভিডেন্ড ধরলে সেনসেক্সের অবস্থান হতে পারে ৫৬,০০০। লগ্নিকারীদের আশা, আগামী দিনেও এই সূচক এ ভাবেই এগিয়ে চলবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)