গান বাজিয়ে তার লাইসেন্স ফি ফাঁকি দেওয়ার তালিকায় শপিং মল, রেস্তোরাঁ ও ছোট-বড় বিপণি ছিলই। এ বার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ক্রিকেটের রাজসূয় যজ্ঞ আইপিএল।
বলিউড তারকাদের নিয়ে নাচ-গানে জমজমাট আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য এখনও লাইসেন্স ফি পায়নি ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইটস সোসাইটি। অভিযোগ, আইপিএল চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সংস্থা এনকম্পাস কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। সোসাইটির দাবি, বাধ্য হয়ে টাকা উসুল করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। সেই অনুসারে আজ, ৫ এপ্রিলই টাকা দেওয়ার শেষ দিন।
গত মাসের শেষে আইপিএল চেয়ারম্যান রণজীব বিসওয়াল ও এনকম্পাসের অন্যতম কর্তা বরুণ বর্মাকে চিঠি দেয় ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইটস সোসাইটি। ৭ এপ্রিল কলকাতায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে গান বাজানোর জন্য লাইসেন্স ফি দাবি করে চিঠি দেয় সোসাইটি। লাইসেন্স ফি-র অঙ্ক ৪৪.১০ লক্ষ টাকা। সোসাইটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অভিষেক বসুর অভিযোগ, হাজার কোটি টাকার এই ক্রিকেট মহোৎসবে আধ কোটিরও কম টাকার লাইসেন্স ফি দিতে টালবাহানা করছে আইপিএল এবং এনকম্পাস।
সোসাইটির দাবি, সুরকার, গীতিকার, গায়ক, সব মিলিয়ে ৩,৫০০ সদস্য রয়েছে। এক কোটির বেশি ভারতীয় গান-বাজনা এই তালিকায় রয়েছে। আইপিএল-এর ম্যাচ দেখানোর মাঝে ও শেষে যে সব গান-বাজনা থাকবে, তার জন্য ইতিমধ্যেই লাইসেন্স ফি পেয়েছে সোসাইটি। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ডিএনএ এন্টারটেনমেন্ট সেই টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারকাখচিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য লাইসেন্স ফি মেলেনি। আইপিএল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে এনকম্পাসের বরুণ বর্মার মতে, চড়া লাইসেন্স ফি হেঁকেছে সোসাইটি। তাঁর দাবি, সমস্যা মিটে যাবে।
১৯৫৭ সালের কপিরাইট আইনের ৩৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইটস সোসাইটি’ (আইপিআরএস)। ১৯৬৯ সালে তৈরি এই সোসাইটির মূল কাজ গায়ক, গীতিকার এবং সুরকারদের হয়ে কপিরাইট আইন মানা হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, ডিস্কো, ক্লাব ইত্যাদি জায়গায় যে-কোনও গান বাজানোর জন্য লাইসেন্স ফি নেয় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক অনুমোদিত এই সোসাইটি। লাইসেন্স ফি বাবদ টাকা দেওয়ার আইনের আওতায় রয়েছে হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার থেকে শুরু করে জিমন্যাসিয়াম, বিউটি পার্লার।
২০০৭ সালে কপিরাইট আইন প্রয়োগের জন্য কেন্দ্র সব রাজ্যের মুখ্য সচিবদের নির্দেশ পাঠায়। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্য পদক্ষেপও করে। অভিষেকবাবুর অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানালেও কাজের কাজ হয়নি। তিনি বলেন, “সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হলে লাইসেন্স ফি ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমবে। সচেতনতাও বাড়বে। কিন্তু এ রাজ্যে তা হয়নি। ফলে বড় মাপের লাইসেন্স ফি ফাঁকি ঠেকাতে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই। কিন্তু সেটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।”
সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী কলকাতা থেকে অন্তত ৮ কোটি টাকা লাইসেন্স ফি বাবদ আদায় হওয়া উচিত। তার ৫০ শতাংশ আদায় করা যায় না। অথচ মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই— সব শহরেই আদায়ের পরিমাণ ১০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো বড় অনুষ্ঠানের হাত ধরে এই ঘাটতি অনেকটাই মেটানো যেত। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও অর্থ আদায়ের জন্য শেষমেশ আইনি পথ ধরতে হল বলে হতাশ সোসাইটি।