শিল্প না-থাকার খেসারত আবাসনে, চাকা ঘোরাতে হাতিয়ার হতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি সেজ নিয়ে অবস্থান পাল্টাতে আর্জি

দ্বিতীয় দফায় নবান্নে পা রাখার পর থেকেই কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোর দিচ্ছেন শিল্পায়নে। এখন শিল্পমহলের এক বড় অংশ চায়, সেই জোড়া লক্ষ্যপূরণের স্বার্থে অন্তত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) নিয়ে অবস্থান বদল করুক রাজ্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

দ্বিতীয় দফায় নবান্নে পা রাখার পর থেকেই কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোর দিচ্ছেন শিল্পায়নে। এখন শিল্পমহলের এক বড় অংশ চায়, সেই জোড়া লক্ষ্যপূরণের স্বার্থে অন্তত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) নিয়ে অবস্থান বদল করুক রাজ্য।

Advertisement

শিল্পমহলের দাবি, কল-কারখানার জন্য সেজ তৈরি করতে যে বিপুল পরিমাণ জমি লাগে, তথ্যপ্রযুক্তি সেজ-এ তা লাগে না। সেখানে বরং অনেক বেশি কাজের সুযোগ তৈরি করা যায় তুলনায় কম জমিতে। তা ছাড়া, সেজ-এর সুবিধার গন্ধে ইনফোসিস ও উইপ্রোর (দ্বিতীয় ক্যাম্পাস) লগ্নি শেষমেশ এ রাজ্যে এলে, আরও অনেক বিনিয়োগের দরজা খুলে যাবে বলে তাদের আশা।

শুধু সেজ তকমা বা এক লপ্তে জমি দেওয়া নয়। রাজ্যে লগ্নি টানতে ও ধরে রাখতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ মসৃণ করাও (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) জরুরি বলে শিল্পের দাবি। তাই রাজ্যকে তা নিশ্চিত করারও আর্জি জানাচ্ছে তারা।

Advertisement

অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট সুনীল কানোরিয়ার মতে, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা প্রচুর। রাজ্যের কাছে ‘অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা’ পেশ করবে বণিকসভাটি। সেই সূত্রেই মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি সেজ-এর কথা ওঠে।

সেজ নিয়ে আপত্তির জায়গা মূলত দু’টি— (১) তার জন্য বিপুল জমি নেওয়া (২) সেখানে শ্রম আইনের কড়াকড়ি শিথিল হওয়া। কিন্তু শিল্পমহলের যুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি সেজ-এ এই দু’টি বিষয়ই সে ভাবে প্রযোজ্য নয়। প্রথমত এতে কম জমি লাগে। আর দ্বিতীয়ত, ছাঁটাই তো দূরস্থান, বরং বেশি বেতন দিয়েও কর্মীকে ধরে রাখতে চায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। তাই উৎপাদন শিল্পের সেজ-এর সঙ্গে তুলনা মানতে নারাজ কানোরিয়া বলেন, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সেজ-চাহিদা ভিন্ন। অনেক কম জায়গায় তা করা সম্ভব।’’

এখন সেজ-এর চাহিদা সারা দেশে কমলেও, মূলত রফতানি ব্যবসায় যুক্ত থাকা তথ্যপ্রযুক্তির ওই বাড়তি সুবিধা জরুরি বলে জানান কানোরিয়া। তাঁর মতে, কৃষি জমি দখল করে সেজ-প্রকল্প না গড়লে কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে সমর্থন করা উচিত রাজ্যের। অন্তত দেওয়া উচিত তার সমতুল্য বাড়তি সুবিধা।

বিরোধী দল হিসেবেও সেজ-এর পক্ষপাতী ছিল না তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারে সেজ বিরোধিতার কথা বলেছিল। ওই বছর ক্ষমতায় এসেও অবস্থান বদলায়নি। যে কারণে আজও আটকে ইনফোসিসের লগ্নি। চাকা গড়ায়নি উইপ্রোর প্রস্তাবিত সেজ প্রকল্পের। অথচ শুধু ওই দুই প্রকল্পেই ৪০ হাজার কাজের সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা।

হালে তথ্যপ্রযুক্তি সেজ নিয়ে দু’টি কারণে আশার আলো দেখছে শিল্প। প্রথমত, ২০১৬ সালে ভোটের ইস্তেহারে সেজ প্রসঙ্গ তোলেইনি শাসক দল। অর্থাৎ, অন্তত সরাসরি বিরোধিতা করেনি। তার উপর সম্প্রতি বারবার কর্মসংস্থানে জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কানোরিয়ার মতে, বিদেশি লগ্নির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের দরজা এখন খুলে দিয়েছে কেন্দ্র। চেষ্টা করছে শিল্পমুখী নীতি তৈরির। লগ্নি টানতে এর সুবিধা রাজ্যকে নিতে হবে বলেই মত তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন