প্রতীকী চিত্র।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করায় স্কুলগুলির উপর পড়ুয়া পিছু আর্থিক জরিমানা ধার্য করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রধানশিক্ষক সংগঠনের তরফে চিঠি দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীকে।
শুক্রবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ৫৩টি স্কুলকে ডেকে পাঠানো হয় শুনানির জন্য। অভিযোগ, এই সমস্ত স্কুলের পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন এখনও বাকি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দাবি, এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পড়ুয়াদের মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন করায়নি এই স্কুলগুলি। এ প্রসঙ্গে পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এক বছর ধরে বারবার জানান সত্ত্বেও স্কুলগুলি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পরীক্ষার মুখে এই ধরনের অভিযোগ উঠলে নানান জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।”
সূত্রের খবর, ৫৩টি স্কুলের প্রায় ১৫০ জন পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন এখনও বাকি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলি তা মানেনি। তার পরও তাদের একাধিক বার সতর্ক করা হয়েছে বলে পর্ষদের দাবি। কাজ না হওয়ায় পড়ুয়া পিছু ৫০০০ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
তবে, এই টাকা দিতে হবে স্কুলগুলিকেই। কোনও ভাবে পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা তোলা যাবে না। শুক্রবারের শুনানি তা স্পষ্ট করে দিয়েছে পর্ষদ। তার পরই শুরু হয়েছে জটিলতা।
৫৩টি স্কুলের কোনটিতে ১৫ জন, কোনটিতে ২৬ জন পড়ুয়া। এত টাকা কোথায় পাবে স্কুলগুলি?
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শেরপুর রামচন্দ্রপুর হাই স্কুলের ২৬ জন পড়ুয়ার নামে জরিমানা দিতে হবে স্কুলকে। অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। স্কুলের প্রধানশিক্ষক রফিউদ্দিন আহমেদ বলে, “কম্পোজিট গ্রান্টের টাকা সময় মতো আসে না। স্কুল ভবন মেরামতিতে প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে তহবিল থেকে। এত টাকা কোথা থেকে দেব? পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে ছাত্র স্বার্থ বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত হব। তবে পর্ষদকেও এই জরিমানার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছি।”
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সংগঠনের দাবি, এই সিদ্ধান্তের ফলে স্কুল ছুটের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বহু স্কুল অর্থাভাবে বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে পারেনা। সর্বশিক্ষা দফতরের আর্থিক সাহায্য প্রায় বন্ধ। এর উপর লক্ষাধিক টাকা জরিমানা দিতে হলে স্কুলগুলির পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।
বজবজের আরিয়াপাড়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক কেতক বড়াল বলেন, “আমাদের স্কুলে বহু পড়ুয়াই প্রথম প্রজন্মের। আর্থিক স্বচ্ছলতাও নেই। স্কুলের আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। এই ছাত্রেরা এ বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে, আর স্কুলমুখো হবে না।”
সূত্রের খবর, শুনানিতে পর্ষদের তরফ থেকে কলকাতা হাই কোর্টের গত বছরের একটি মামলার উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে পড়ুয়াকে আর্থিক জরিমানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের সমস্ত স্কুলে নবম শ্রেণিতে মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। অকৃতকার্য পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করতে হয়। কিন্তু এই স্কুলগুলি সেই আবেদন করেনি বলে অভিযোগ পর্ষদের।