অভিযোগ কেন্দ্রের

সরকারি বরাত বেড়েছে, তবু বন্ধ হচ্ছে চটকল

পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক চটকল বন্ধ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের চটের বস্তা কেনা কমিয়ে দেওয়াকেই দায়ী করেছে রাজ্যে চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ। কিন্তু এই অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানিয়েছে, বস্তা কেনা কমানো তো হয়ইনি, বরং তা অনেক বেশি বেড়েছে। অথচ তা সত্ত্বেও চটকল বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় কর্তারা। উল্লেখ্য, গত দু’মাসে এ রাজ্যে ৫৯টি চটকলের ১৫টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

প্রভাত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০২:০৯
Share:

পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক চটকল বন্ধ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের চটের বস্তা কেনা কমিয়ে দেওয়াকেই দায়ী করেছে রাজ্যে চটকল মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ। কিন্তু এই অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানিয়েছে, বস্তা কেনা কমানো তো হয়ইনি, বরং তা অনেক বেশি বেড়েছে। অথচ তা সত্ত্বেও চটকল বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় কর্তারা। উল্লেখ্য, গত দু’মাসে এ রাজ্যে ৫৯টি চটকলের ১৫টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অডিট সংস্থা কনট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (ক্যাগ) হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩-’১৪ সালের রবি মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলির মোট উৎপাদনের ৫১% কিনে নিয়েছিল কেন্দ্র। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪-’১৫ সালের একই সময় কেনা হয় আরও বেশি, ৫৮%। তথ্য বলছে, প্রথম বার ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার চটের গাঁটরি কেনে সরকার। এর পরের বছর একই সময় কেনা হয় ১১ লক্ষ ৪৭ হাজার গাঁটরি, যা প্রায় ২২% বেশি।’’ তাঁর প্রশ্ন, এর পরেও বলা হবে যে কেন্দ্রীয় সরকার চটের বস্তা কেনার পরিমাণ কমিয়েছে?

পাশাপাশি, জুট কমিশনারের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে বিভিন্ন কারণে খাদ্যশস্যের জন্য চটের বস্তা কেনার ওপর ৯০% সংরক্ষণ চালু করেছিল কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক। কিন্তু চলতি বছরে খাদ্যশস্যের বাড়তি উৎপাদনের দরুন চটের বস্তার চাহিদা বেড়েছে। তাই তা কেনায় সংরক্ষণের পরিমাণও ১০০% করা হয়েছে। ওই দফতরের দাবি, যে সমস্ত রাজ্য কেন্দ্রের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সাপ্লাই অ্যান্ড ডিসপোজালস (ডিজিএসডি) বিভাগের মাধ্যমে বস্তা কেনে, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে তাদের চাহিদাও ১০০% পূরণ করা হয়েছে চটের বস্তা দিয়ে। যে কারণে প্লাস্টিকের বস্তা কেনার দরকারই পড়েনি।

Advertisement

আইজেএমএ-র প্রধান রাঘব গুপ্তের অবশ্য দাবি, ‘‘যে সময় বরাত সবচেয়ে বেশি থাকে, জুট কমিশনার সেই হিসাবটাই দেখাচ্ছেন। সারা বছর কতটা কেনা হয়, সেই হিসাব দেননি।’’

চটশিল্পের সাম্প্রতিক এই সঙ্কট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে রাঘববাবুর সংগঠন। সেখানে গত এপ্রিলের রবি মরসুমের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তার বরাত প্রায় কিছুই পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। আইজেএমএ-র আরও অনুযোগ, রাজ্য সরকার তাদের চটনীতি তৈরি করে ফেলতে পারলে চটশিল্পকে এত অসুবিধায় পড়তে হত না। কারণ, সে ক্ষেত্রে রাজ্য যতখানি চাল ও আলু সংগ্রহ করে থাকে, তার জন্য চটের বস্তা কেনা হলে চটকলগুলির উৎপাদন হার বজায় থাকত বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই চিঠিতে।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের আবার অভিযোগ, ১৯৮৭-তে প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর হাত ধরে চটশিল্পের জন্য যে সংরক্ষণের আইন চালু হয়, তার মাধ্যমে চটকলগুলি এত বছর ধরে সরকারের কাছে বাজারের চেয়ে অনেক চড়া দামে বস্তা বেচে আসছে। তাদের হিসেব, খোলাবাজারে এক টন (তিন গাঁটরি নিয়ে এক টন হয়) বস্তার দাম ৫৬ হাজার টাকা হলেও, তা ৬২ হাজার টাকায় কিনে আসছে বস্ত্রমন্ত্রক। সংরক্ষণের এই ঘেরাটোপের সুযোগ নিয়ে চটকলগুলি সরকারকে ঠকাচ্ছে বলে আঙুল তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন