চোখা মাথা, খাসা বাংলায় ঘরের ছেলে সুব্বু

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনকে বেছে নেওয়ার কথা শুক্রবারই জানিয়েছে কেন্দ্র।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৭
Share:

কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন।

নর্থ ব্লকে অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টার ‘ভারী চেয়ার’ কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনের জন্য তোলা থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর ম্যানেজমেন্ট শিক্ষার আঁতুড় আইআইএম-কলকাতার শিক্ষক ও সহ-পড়ুয়াদের কাছে তিনি নিপাট ঘরের ছেলে। একান্ত পছন্দের সুব্বু। যাঁকে দেশে প্রথম সারির ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে রেখেছে ঝকঝকে মেধা আর বিনয়ী ব্যবহারের মিশেলের জন্য। ভোলেনি সুব্রহ্মণ্যন পদবী নিয়েও তাঁর স্বচ্ছন্দ বাংলাকে। নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে তাঁর সমর্থন জানানো নিয়ে প্রবল বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু শহরের আইআইএমের অধ্যাপকের তাতে থোড়াই কেয়ার। বরং যুক্তি, ‘‘মতের ফারাক থাকতেই পারে।’’ আর এক বুক গর্ব প্রাক্তন ছাত্র এখনও কোনও শিক্ষক দিবসে ই-মেল পাঠাতে না ভোলায়।

Advertisement

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনকে বেছে নেওয়ার কথা শুক্রবারই জানিয়েছে কেন্দ্র। এ নিয়ে ওই পদে আসা পরপর তিন জন আইআইএমের। রঘুরাম রাজন এবং অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন আমদাবাদের। আর কৃষ্ণমূর্তি কলকাতার।

কানপুর আইআইটিতে বি-টেক শেষে নব্বইয়ের দশকে এই কৃষ্ণমূর্তিই এমবিএ পড়তে আসেন আইআইএম কলকাতায়। অন্যতম সেরা পড়ুয়া হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে সেখানে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রখর মেধার পাশাপাশি তাঁকে মনে রেখেছে অমায়িক ব্যবহারের ভাল মানুষ হিসেবেও। অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপ সিন্‌হা বলেন, ‘‘এখনও প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে নিয়ম করে ই-মেল পাঠায়।’’ পরে ডিন হিসেবে শিকাগো গিয়েও পাশে পেয়েছেন সুব্বুকে।

Advertisement

আইআইএম কলকাতাতেই এমবিএ পড়তে আসেন কৃষ্ণমূর্তি।

হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের (আইএসবি) অধ্যাপক কৃষ্ণমূর্তিকে পড়াশোনার জগৎ চেনে অর্থনীতি, ব্যাঙ্কিং, সংস্থা পরিচালনায় প্রথম সারির বিশেষজ্ঞ হিসেবে। মার্কিন মুলুকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল অব বিজনেসে পিএইচডি করার সময়ে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন খোদ রঘুরাম রাজন। কিন্তু সেখানে সুব্বুকে সুপারিশ করা ফিনান্সের অধ্যাপক বি বি চট্টোপাধ্যায়ের আরও বেশি মনে আছে, বাংলায় যথেষ্ট সড়গড় ছিলেন তাঁর ছাত্রটি। আইআইএম-কলকাতার ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর লীনা চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ডিন (অ্যাকাডেমিক) রুনা সরকার— সকলেই বলছেন তাঁর মেধার কথা। জোকায় এক বছরের ‘জুনিয়র’ রুনা যেমন বলছিলেন, দ্বিতীয় বছরে পড়ার সময়েই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের সংখ্যাতত্ত্বের ‘টিউটর’ ছিলেন সুব্বু। কোনও কিছু বিশ্লেষণ না করে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত কৃষ্ণমূর্তি নেন না বলেও তাঁর দাবি।

আইএসবিতে সুব্বুর সহকর্মী তথা আইআইএম-কলকাতার প্রাক্তন অধ্যাপক সৌগত রায় দুবাই থেকে জানালেন, শিক্ষা ও নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজেও সমান ভাবে যুক্ত সুব্বু।

তবে শিক্ষক, গবেষক, কর্পোরেট উপদেষ্টার ভূমিকা সামলেও সুযোগ পেলেই জোকার পাশে থেকেছেন কৃষ্ণমূর্তি। আইআইএম-কলকাতার ফিনান্স ল্যাবরেটরির দায়িত্বে থাকা অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আমন্ত্রণ পেলেই এখানে কর্মশালায় আসেন সুব্বু। নভেম্বরেই এসেছিলেন।

আর নোটবন্দি বিতর্ক? অনুপবাবু বলেন, মতের পার্থক্য তো গবেষণা ও তর্কের পরিসরে থাকবেই। শুধু এর ভিত্তিতে কাউকে বিচার করা যায় না। বরং দেশের অর্থনীতির ভাল করার সুযোগ তাঁদের সুব্বু ঠিকমতো পাবেন বলেই আশা করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন