লোকসান হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ন্যানো তৈরি বন্ধ করার কথা ভাবছে না টাটারা। তাদের বক্তব্য, এই গাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আবেগ। রতন টাটার, সংস্থার, সেই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদেরও। তাই উৎপাদনে দাঁড়ি টানার বদলে বরং নতুন ভাবে সেটিকে বাজারে আনার উপরেই জোর দিচ্ছে টাটা মোটরস।
শনিবার সিআইআই আয়োজিত ‘ম্যানুফ্যাকচারিং এক্সেলেন্স’ সম্পর্কিত সভার ফাঁকে টাটা মোটরসের সিওও সতীশ বোরওয়াঙ্কার বলেন, ‘‘ন্যানো তৈরি করব। হয়তো কম সংখ্যায়।’’
ন্যানো-র ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সম্প্রতি ফের জল্পনা শুরু হয়েছে, সে কথা তুললে বোরওয়াঙ্কার মেনে নেন, লোকসানেই এটি বিক্রি করছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁর যুক্তি, ‘‘অনেক আবেগ জড়িয়ে ন্যানোর সঙ্গে। রতন টাটা এর সঙ্গে ছিলেন। শেয়ারহোল্ডাররাও চান না, প্রকল্প থেকে সরে আসি। বার্ষিক সভায় তাঁরা তা বলেওছেন।’’ আর সে কারণেই ন্যানোকে লাভজনক ও আকর্ষণীয় করতে বিকল্পের সন্ধান। তাঁর কথায়, ‘‘হয়তো বৈদ্যুতিক ন্যানো তৈরি হবে।’’
বৃষ্টিতে দু’চাকায় সওয়ার কাকভেজা এক পরিবারকে দেখেই না কি এক লাখি গাড়ি তৈরির কথা ভেবেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন কর্ণধার রতন টাটা। যাতে তা অনেক সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে আসে। কিন্তু গোড়া থেকেই তাকে তাড়া করেছে রাজনৈতিক বিতর্ক। গত কয়েক বছরে প্রতিযোগিতার মুখে তেমন কল্কেও পায়নি এই গাড়ি।
অনেকে বিপণন কৌশলে খামতির কথা বলেছেন। আবার টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হয়ে সাইরাস মিস্ত্রি অভিযোগ তোলেন, লাভজনক না-হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ ‘রতন টাটার প্রকল্প’ বলেই ন্যানো তৈরি চালিয়ে যাচ্ছে টাটা মোটরস। নতুন দূষণ বিধি মেনে ন্যানোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিএস-৪ মাপকাঠিতে উন্নীত করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তাই সে দিক থেকে এ দিন টাটাদের ন্যানো সম্পর্কে এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। বোরওয়াঙ্কারের দাবি, বৈদ্যুতিক ন্যানো এ দেশে পরীক্ষা করে দেখেছে সংস্থাটি। তবে দাম বেশি হওয়ায় বাজারে সাড়া ফেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ দিনই বাংলাদেশে টাটা মোটরসকে যন্ত্রাংশ জুড়ে গাড়ি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন সে দেশে টাটাদের সহযোগী নিটোল-নিলয় গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমেদ। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে নতুন গাড়ির বাজার মাত্র ৭%। বাকি হাতফেরতা। বাংলাদেশে ন্যানো তৈরি হলে চড়া আমদানি শুল্ক লাগবে না। ফলে তখন নতুন গাড়ির বাজার ধরা টাটাদের পক্ষে কঠিন হবে না বলে তাঁর মত।