TRAI

চুক্তির চক্করে উধাও পে-চ্যানেল, সমস্যায় টিভির লক্ষ লক্ষ দর্শক

বিতর্কের জেরেই এ দিন থেকে স্টার, জ়ি, সোনির মতো বিভিন্ন সংস্থার পে-চ্যানেলগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, টিভির খরচ বাড়লে আরও অনেক গ্রাহকই সংযোগ ছেড়ে দিতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৮
Share:

চুক্তির চক্করে উধাও পে-চ্যানেল। প্রতীকী চিত্র।

শনিবার বেলার দিকে জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দেখতে গিয়ে বিস্মিত কেব্‌ল টিভির লক্ষ লক্ষ দর্শক। একই অবস্থা খেলার অনুরাগীদেরও। কেব্‌ল টিভিতে মহিলাদের ক্রিকেট থেকে পুরুষদের ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়, বিদেশি ফুটবল লিগের দর্শক কম নয়। অথচ এ দিন দুপুরে বিনামূল্যের চ্যানেলগুলির সম্প্রচার ঠিক মতো চললেও, উধাও পে-চ্যানেলগুলি (যেগুলি টাকা দিয়ে দেখতে হয়)। কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গা তো বটেই, দেশের অন্য অনেক জায়গাতেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। গ্রাহকদের অনেকে স্থানীয় কেব্‌ল টিভি অপারেটরদের দোকানে খোঁজ করতে গিয়ে জেনেছেন, চ্যানেল সংস্থাগুলির সঙ্গে মাল্টি সার্ভিস অপারেটরদের (এমএসও) চুক্তি নিয়ে বিরোধের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পে-চ্যানেলগুলির সম্প্রচার।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ মাস থেকেই নিয়ন্ত্রক ট্রাই নতুন মাসুল নীতি কার্যকর করার পরে অধিকাংশ চ্যানেল সংস্থা তাদের জনপ্রিয় পে-চ্যানেলের মাসুল বাড়িয়ে নতুন করে চুক্তি করতে বলেছিল এমএসও-দের। কিছু এমএসও সেই পথে হাঁটলেও, অনেকে ‘গ্রাহক স্বার্থে’ এ দিন পর্যন্ত চুক্তি করেননি। বিষয়টি ফের আদালতে গড়িয়েছে। সোমবারের আগে শুনানির সম্ভাবনা না-থাকায়, এখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশাও ক্ষীণ। এ দিন রাত পর্যন্ত ট্রাইয়ের তরফে প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ‘ডিটিএইচ’ পরিষেবা চালু রয়েছে।

গ্রাহক স্বার্থেই নতুন মাসুল নীতি প্রণয়নের দাবি করে গত বছরে ট্রাই বলেছিল, চ্যানেলের দর বাজারই ঠিক করবে। তবে যে সব চ্যানেলের দাম ১৯ টাকা বা তার চেয়ে কম,

Advertisement

সেগুলিই শুধুমাত্র ‘বোকে’-তে (চলতি ভাষায় প্যাকেজ) রাখা যাবে। কোনও বোকে-তে যে ক’টি পে-চ্যানেল থাকবে, তার মোট দামের উপর ৪৫% (আগে ৩৩% ছিল) পর্যন্ত ছাড় দিতে পারবে চ্যানেল সংস্থা। নতুন নিয়মে চ্যানেলের দাম স্থির করে গত ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাতে হত তাদের। তার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্যাকেজের দাম এমএসও, ডিটিএইচ সংস্থা বা স্থানীয় কেব্ল অপারেটরদের গত ১ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাইকে জানাতে হত। ফেব্রুয়ারি থেকে তা গ্রাহকদের জন্য চালু হওয়ার কথা।

ট্রাই এতে চ্যানেলের দাম কমার ইঙ্গিত দিলেও, কিছু পে-চ্যানেলের দাম বাড়ছে বলে দাবি করে ক’দিন ধরে টিভির পর্দায় বার্তা দিচ্ছিল বেশ কিছু এমএসও। কেব্ল অপারেটরদের অনেকেরই অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকে আচমকা রাজ্যের বেশিরভাগ এমএসও-র পরিষেবা অঞ্চলে পে-চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যায়। টিভি দেখতে না-পেয়ে গ্রাহকদের অনেকেই তাদের অফিসে এসে কার্যত হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। অথচ চ্যানেল সম্প্রচারে তাঁদের হাতে কিছুই নেই।

রাজ্যের অন্যতম এমএসও জিটিপিএল-কেসিবিপিএলের কর্তা বিজয় আগরওয়ালের দাবি, বহু জনপ্রিয় পে-চ্যানেলের দাম বাড়িয়েছে চ্যানেল সংস্থাগুলি। এতে টিভি দেখার খরচ বাড়বে বলে তাঁরা ওই নতুন মাসুল চুক্তি মানতে নারাজ। এই বিতর্কের জেরেই এ দিন থেকে স্টার, জ়ি, সোনির মতো বিভিন্ন সংস্থার পে-চ্যানেলগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, টিভির খরচ বাড়লে আরও অনেক গ্রাহকই সংযোগ ছেড়ে দিতে পারেন। ইতিমধ্যেই করোনার সময় আয়ে কোপ পড়ায় বহু গ্রাহক হারিয়েছেন এমএসও এবং কেব্ল অপারেটরেরা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সিটি কেব্ল নতুন চুক্তি মেনে নেওয়ায় তাদের পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল। এ নিয়ে সিটির কর্তা সুরেশ শেঠিয়ার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সূত্র জানাচ্ছে, দেশে অধিকাংশ এমএসও নতুন মাসুল চুক্তি মানলেও যারা মানেনি, তাদের এলাকায় পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। যদিও ডিটিএইচেও নতুন মাসুল চালু হয়েছে। অন্য সূত্রের দাবি, যেহেতু চ্যানেলের দাম বাজারের উপরেই নির্ভরশীল, তাই দাম বৃদ্ধির জেরে গ্রাহকেরা তা না-দেখলে সেটির দাম কমাতে বাধ্য হবে সংস্থা। তবে ট্রাইয়ের নানা পদক্ষেপের ফলে ২০২১ সালের নভেম্বরের চেয়ে এখন চ্যানেলের দাম কমেছে বলেও দাবি তাদের। অবশ্য অন্যত্র মাসুল বৃদ্ধির হার তুলনায় কম থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে তা বেশি, সে কথাও বলছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন