ব্যবসার প্রমাণ না থাকলেই তালা দরজায়

দেশে দু’লক্ষেরও বেশি ভুয়ো সংস্থার হদিস পাওয়াকে নোটবন্দির অন্যতম সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে  মোদী সরকার। তাদের এক বড় অংশের স্বীকৃতি ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। খোঁজ চলছে এমন আরও সংস্থার। কলকাতায় এসে মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলে গিয়েছিলেন, এই রাজ্যই দেশে ভুয়ো সংস্থার ‘রাজধানী’।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:০২
Share:

শুধু রিটার্ন দাখিল করে কিংবা হিসেবের খাতা (ব্যালান্স শিট) সরকারের ঘরে জমা দিলে চিঁড়ে ভিজবে না। সঙ্গে দিতে হবে ব্যবসা যে সত্যিই চলছে, তার বিশদ প্রমাণও। নইলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নথিভুক্তি বাতিলের রাস্তায় হাঁটবে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। যা কার্যত তোড়জোড় দরজায় তালা ঝোলানোরই। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ভুয়ো সংস্থা রুখতে কড়াকড়ি আরও বাড়ানোই এর কারণ বলে তাদের দাবি।

Advertisement

দু’বছরের করের রিটার্ন এবং আয়-ব্যয়-লাভ-ক্ষতির হিসেব জমা না দিলে কিংবা তার কারণ দেখাতে না পারলে এমনিতেই বাদ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার নথিভুক্তি। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, এই নথি যথেষ্ট নয়। সঙ্গে ব্যবসার বাস্তবিক প্রমাণ দেখাতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বাতিলের তালিকায় ঢুকে পড়তে হতে পারে। অর্থাৎ জানাতে হবে, কীসের ব্যবসা, কোথায়, বিক্রি কত, আয়ের অঙ্ক— সমস্ত কিছুর বিশদ খতিয়ান।

মন্ত্রকের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নথিভুক্তির পর এক বছরের মধ্যে কোনও ব্যবসা না করলে, মন্ত্রকের সন্দেহের তালিকায় ঢুকে পড়তে পারে সংস্থা। আগে তৈরি সংস্থাও টানা দু’বছর ব্যবসা না করলে, তা জানাতে হয় মন্ত্রককে।

Advertisement

দেশে দু’লক্ষেরও বেশি ভুয়ো সংস্থার হদিস পাওয়াকে নোটবন্দির অন্যতম সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে মোদী সরকার। তাদের এক বড় অংশের স্বীকৃতি ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। খোঁজ চলছে এমন আরও সংস্থার। কলকাতায় এসে মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলে গিয়েছিলেন, এই রাজ্যই দেশে ভুয়ো সংস্থার ‘রাজধানী’।

কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কয়েকশো সংস্থার ঠিকানা একটিই! বহু সময়ে দেখা যায়, নাম-কে-ওয়াস্তে সংস্থা আছে। কিন্তু তার ব্যবসা বলে কিছু নেই। পণ্য উৎপাদন কিংবা বেচা-কেনা কিছুই হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় কর ফাঁকি দিতে এ ধরনের সংস্থা খোলা হয়। অনেক সময়ে তা খোলা হয় অন্য সংস্থা থেকে টাকা সরাতে। এতে বাঁধ দিতেই এই কড়াকড়ি বলে মন্ত্রকের দাবি।

সূত্রের খবর, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে রাজ্যের প্রায় ৮,০০০ সংস্থার নথিভুক্তি বাতিল হয়েছে। ওই বছরই তৈরি হয়েছে আরও প্রায় ১১ হাজার সংস্থার তালিকা। আগামী দিনে সে গুলিকেও বাদ দেওয়ার পথে হাঁটা হবে বলে মন্ত্রক সূত্রে দাবি।

অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত ভুয়ো সংস্থার মালিকানা হাত বদলায়। বিশেষজ্ঞের মতে, ‘‘এটাও বাজার। কেউ হয়তো এক উদ্দেশ্যে ভুয়ো সংস্থা খুললেন। কিন্তু তা কাজে লাগল না। কিংবা হয়তো সেই উদ্দেশ্যপূরণ হয়ে গেল। সে ক্ষেত্রে কিছু দিন পরে নথিভুক্তি থাকা সংস্থা বিক্রি করে দিতে পারেন তিনি। এর পিছনে খুব সাধু উদ্দেশ্য থাকে না।’’

তবে সব সংস্থার নথিভুক্তি সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করা যায় না। যেমন, বাজারে নথিভুক্ত সংস্থা, তদন্তের আওতায় থাকা সংস্থা, ঘাড়ে ঋণের বোঝা থাকা সংস্থা ইত্যাদির নথিভুক্তি খারিজ করা সহজ নয় বলেই দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন