দিল্লি মেট্রোর বরাত পেতে ঘুষের অভিযোগ অ্যালস্টমের বিরুদ্ধে

দিল্লি মেট্রো রেল প্রকল্পের বরাত পেতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠল ফরাসি বহুজাতিক অ্যালস্টমের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ফ্রান্সের ওই রেল ও টার্বাইন নির্মাতার ব্রিটিশ শাখার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ব্রিটেনের তদন্তকারী দফতর সিরিয়াস ফ্রড অফিস (এসএফও)। তাদের অভিযোগ, ২০০০ সালের ১ জুন থেকে ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভারত, পোল্যান্ড এবং তিউনিশিয়ায় বিভিন্ন বড় পরিবহণ প্রকল্পে বরাত পেতে প্রায় ৮৫ লক্ষ ডলার (৫১.৮৫ কোটি টাকা) ঘুষ দিয়েছে অ্যালস্টম নেটওয়ার্ক-ইউকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি ও লন্ডন শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪০
Share:

দিল্লি মেট্রো রেল প্রকল্পের বরাত পেতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠল ফরাসি বহুজাতিক অ্যালস্টমের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সম্প্রতি ফ্রান্সের ওই রেল ও টার্বাইন নির্মাতার ব্রিটিশ শাখার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ব্রিটেনের তদন্তকারী দফতর সিরিয়াস ফ্রড অফিস (এসএফও)। তাদের অভিযোগ, ২০০০ সালের ১ জুন থেকে ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ভারত, পোল্যান্ড এবং তিউনিশিয়ায় বিভিন্ন বড় পরিবহণ প্রকল্পে বরাত পেতে প্রায় ৮৫ লক্ষ ডলার (৫১.৮৫ কোটি টাকা) ঘুষ দিয়েছে অ্যালস্টম নেটওয়ার্ক-ইউকে।

এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করার আগে লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছ থেকে বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এসএফও-র কাছ থেকে তথ্য জোগাড় করতে বলা হয়েছে তাদের। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে বিদেশ সচিবের সঙ্গে কথা বলার জন্য নিজের মন্ত্রকের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু। ফরাসি সংস্থাটির মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, এসএফও-র সঙ্গে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা হয়েছে সংস্থার। আর ভারতে অ্যালস্টমের মুখপাত্র বলেন, সংস্থা জানে, এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরনো ঘটনা নিয়ে অনেক দিন ধরেই তদন্ত চালাচ্ছে এসএফও।

Advertisement

আদালতে এসএফও-র পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাত পেতে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভেঞ্চার্স এবং গ্লোবাল কিং টেকনোলজির সঙ্গে যোগসাজশ করেছিল অ্যালস্টম নেটওয়ার্ক-ইউকে (আগে নাম ছিল অ্যালস্টম ইন্টারন্যাশনাল) এবং তার ডিরেক্টররা। অভিযোগ, এ জন্য অ্যালস্টমের ব্রিটিশ শাখার কাছ থেকে প্রায় ১.৯৯ কোটি টাকা পেয়েছিল ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভেঞ্চার্স। আর প্রায় ৩১.৩২ লক্ষ ইউরো (২৪.৭৫ কোটি টাকা) ঢুকেছিল গ্লোবাল কিংয়ের পকেটে।

এ বার অ্যালস্টমের ব্রিটিশ শাখার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ শুধু দিল্লি মেট্রো রেলের বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রেই ওঠেনি। এসএফও-র দাবি, ২০০০ সালের জুন থেকে ২০০৬ সালের নভেম্বরের মধ্যে পোল্যান্ড এবং তিউনিশিয়াতে ট্রাম, ইত্যাদি পরিবহণ পরিকাঠামো গড়ার বরাত পেতেও ওই একই পথে হেঁটেছিল তারা। সে জন্য আবার তারা যোগসাজশ করে পোল্যান্ডে স্যাজ্যাক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কাভান বিভি এবং তিউনিশিয়ায় কনস্ট্রাকশন এৎ জেসন নেভকোর সঙ্গে। এই পুরো ঘুুষ-কাণ্ড নিয়ে মামলায় শেষ পর্যন্ত দোষী প্রমাণিত হলে, মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে অ্যালস্টম নেটওয়ার্ক ইউকে-র। অথবা তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশে সরকারি কাজে বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রে।

ফরাসি বহুজাতিক অ্যালস্টমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে বরাত পেতে ঘুষ দেওয়ার এই মামলা উঠেছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। ঠিক যখন ১,৬৯০ কোটি ডলারে নিজেদের প্রায় পুরো বিদ্যুৎ ব্যবসাই মার্কিন বহুজাতিক জিই-র কাছে বিক্রি করে দিতে রাজি হয়েছে তারা। অ্যালস্টম নেটওয়ার্ক ইউকে-র সম্পর্কে সুইৎজারল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের পাঠানো তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করে এসএফও। চার বছর আগে এই সূত্রে ব্রিটেনে অ্যালস্টম পরিচালন পর্ষদের তিন সদস্যকে গ্রেফতারও করেছিল তারা। তাঁদের মধ্যে এক জন পরে মারা যান। আর যথেষ্ট প্রমাণ না-থাকায় বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দেয় এসএফও। তবে দুই কর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে দাঁড়ি টানলেও, সংস্থার বিরুদ্ধে তা চালিয়ে গিয়েছে তারা।

ভারত, চিন, ইন্দোনেশিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে লোভনীয় বরাত ঝুলিতে পুরতে অ্যালস্টম ঘুষ দিয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে আমেরিকা এবং ব্রাজিলও। মার্কিন মুলুক ও জার্মানিতে ওঠা ঘুষের অভিযোগের রফায় ২০০৮ সালে ১৬০ কোটি ডলার গুনতে হয়েছে বিশ্ব বাজারে অ্যালস্টমের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিমেন্সকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন