অসুখ সারাতে ওষুধ সরকারি খরচই

বৃহস্পতিবার বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে নির্মলার দাবি ছিল, কেউ তাঁকে চাহিদার অভাবের কথা বলেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৬
Share:

ফাইল চিত্র।

মুখে চাহিদা বাড়ার কথা বলছেন বটে। তবে চাহিদায় গতি আনার অন্যতম জ্বালানি, বেসরকারি লগ্নি কবে আসবে তার নিশ্চয়তা যে নেই, তা বিলক্ষণ বুঝছেন। এমনকি কর্পোরেট কর ছাঁটাই সত্ত্বেও। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আজ তাই ফের সরকারি খরচের গতি বাড়ানোর অ্যাক্সিলারেটরেই চাপ দিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবদের বৈঠকে ডেকে নির্দেশ দিলেন, পরিকাঠামো তৈরিতে সরকারি খরচ বাড়াতে হবে দ্রুত। কেন্দ্রের ঘরে কোনও বেসরকারি সংস্থার পাওনা ফেলে রাখা চলবে না।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে নির্মলার দাবি ছিল, কেউ তাঁকে চাহিদার অভাবের কথা বলেননি। বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিক্রি বাড়ার বার্তা মিলেছে। যা শুনে তাজ্জব বনেছিলেন সংশ্লিষ্ট মহল। আজও তিনি বলেন, বাজার থেকে পাওয়া তথ্য বলছে কেনাকাটা যথেষ্ট বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য বলছেন, অর্থমন্ত্রী মুখে যে দাবি-ই করুন, চাহিদায় এখনও ভাটার টান। তিনি নিজেও জানেন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তাঁর দফায় দফায় করা ঘোষণার ফল মিলতে সময় লাগবে। যে কারণে তড়িঘড়ি সেই সরকারি খরচ বাড়ানোকেই হাতিয়ার করেছেন সীতারামন। বিশেষত অর্থনীতির অন্যতম ইঞ্জিন পরিকাঠামো তৈরিতে।

সরকারি হিসেব, বাজেটে এ বার পরিকাঠামো খাতে ব্যয় বরাদ্দের ৪০% খরচ হয়েছে অগস্ট পর্যন্ত। যা গত বছরের তুলনায় কম। রেল, সড়ক পরিবহণের মতো পরিকাঠামো মন্ত্রকগুলির পাশাপাশি বাজেটের বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও এই খাতে ব্যয় করে। খরচের গতি বাড়াতে শনিবার তাদের সঙ্গে বসবেন নির্মলা।

Advertisement

অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় গত মাস থেকেই সরকারের কাছে বেসরকারি সংস্থাগুলির বকেয়া পাওনা দ্রুত মেটানোর নির্দেশ গিয়েছিল। আজ অর্থ মন্ত্রকের ব্যয়সচিব গিরিশচন্দ্র মুর্মু বলেন, সরকারকে যে ঠিকাদার, ছোট-মাঝারি সংস্থা পণ্য বা পরিষেবা দেয়, তাদের পাওনা বাবদ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া ছিল। ৪০ হাজার কোটি মেটানো হয়েছে। অক্টোবরের শুরুতে আরও ২০ হাজার কোটি দেওয়া হবে। উৎসবের মরসুমে যে নগদ জোগান অর্থনীতিতে দাওয়াইয়ের কাজ করবে বলে আশা অর্থমন্ত্রীর। এর আগে জিএসটি রিফান্ডের বকেয়া পাওনা এক মাসের মধ্যে মেটানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। আজ জানান, ৯০% বকেয়া মেটানো হয়েছে।

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাস কাটতে চলেছে। সাধারণত বাজেটের আগে বিভিন্ন মন্ত্রক আগামী এক বছরে পরিকাঠামো খাতে খরচের পরিকল্পনার কথা অর্থ মন্ত্রককে জানায়। আজ নির্মলা সড়ক পরিবহণ, আবাসন, নগরোন্নয়ন, জাহাজ মন্ত্রকের মতো বিভাগের সচিবদের এক সপ্তাহের মধ্যে আগামী ১২ মাসের খরচের পরিকল্পনা তাঁর টেবিলে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে চলতি বছরের ব্যয় বরাদ্দের সংশোধিত হিসেব ও আগামী বাজেটের অঙ্ক কষা শুরু হবে।

এক দিকে কর্পোরেট কর কমাতে গিয়ে রাজস্ব ক্ষতি, অন্য দিকে সরকারি খরচ না ছাঁটা— এতে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। তবে নির্মলার দাবি, তিনি এখনই এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। বলেছেন, ‘‘আমার লক্ষ্য কেন্দ্রের ঘরে কারও বকেয়া পাওনা পড়ে না-থাকা নিশ্চিত করা। এবং পরিকাঠামো খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিকল্পনা পূর্ণ করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন