প্রযুক্তি চিঠি পাঠানো সহজ করেছে। কাউকে ই-মেল করতে নিজে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার দরকার নেই। জানার প্রয়োজন নেই অন্য জন পৃথিবীর কোন প্রান্তে বসে। শুধু ই-মেল ঠিকানাটুকু (ই-মেল আইডি) সঙ্গে থাকলেই হল। ঠিক সেই ধাঁচে এ বার একে-অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কিচ্ছুটি না-জেনে টাকা লেনদেনের রাস্তা খুলে গেল ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) পরিষেবার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপ) হাত ধরে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তত্ত্বাবধানে এই ব্যবস্থা তৈরি করেছে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)। দেশকে নগদহীন লেনদেনের দিকে নিয়ে যেতে এই পরিকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে বারবার দাবি করেছেন শীর্ষ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাই অনেকে বলছেন, ৪ সেপ্টেম্বর কর্ণধারের কুর্সি ছাড়ার আগে এ হল দেশের অর্থনীতিকে রাজনের বিদায়ী উপহার। যার দৌলতে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে মানিব্যাগ হাতড়াতে হবে না। লাগবে না ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড। শুধু মুঠোবন্দি স্মার্ট ফোনে নতুন অ্যাপ থাকলেই হল। আর সেই ফোন নম্বর নথিভুক্ত থাকতে হবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। এখন এই ব্যবস্থায় লেনদেনের ঊর্ধ্বসীমা ১ লক্ষ টাকা।
ইন্টারনেট মারফত টাকা অবশ্য পাঠানো যায় নেট ব্যাঙ্কিংয়েও। কিন্তু প্রথমত, একেবারে শুরুতে তা দিয়ে কাউকে টাকা পাঠাতে কিছুটা সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, জানতে হয় অন্য জনের অ্যাকাউন্টের নম্বর এবং আইএফএসসি কোড। নতুন ব্যবস্থায় সেই সমস্ত ঝক্কি নেই। শুধু যাঁকে পাঠাচ্ছেন, তাঁর ঠিকানা (ভার্চুয়াল পেমেন্ট অ্যাড্রেস বা ভিপিএ) জানা থাকতে হবে। সংস্থার ক্ষেত্রে তা হতে পারে তার ‘কিউ আর কোড’ও।
শুধু তা-ই নয়। কোনও নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের অ্যাপ ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করতে হলে, তার গ্রাহক হতে হয়। এই ব্যবস্থায় সেই বাধ্যবাধকতাও উধাও। এ ক্ষেত্রে গুগ্লের প্লে স্টোর থেকে নিজের পছন্দের ব্যাঙ্কের ইউপিআই-অ্যাপ ডাউনলোড করলেই টাকার হাতবদল সম্ভব। যদিও এখন আপাতত জরুরি উল্টো দিকের জনেরও ইউপিআই-অ্যাপ অ্যাকাউন্ট থাকা।
তা ছাড়া, এখন নেট-ব্যাঙ্কিং বা ব্যাঙ্কের নিজস্ব অ্যাপ দিয়ে কারও কাছ থেকে টাকা চাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ইউপিআই-অ্যাপে তা করা সহজ। নিজের অ্যাপ অ্যাকাউন্টে টাকা চাওয়ার ‘অপশন’-এ গিয়ে তা করতে হবে। টাকা পাঠানো ও চাওয়ার জন্য আলাদা অ্যাকাউন্টও নির্দিষ্ট করার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছে এনপিসিআই।
এই মুহূর্তে ২১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক এই অ্যাপ চালুর চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়েছে। এনপিসিআই জানিয়েছে, এর মধ্যে ১৯টি ব্যাঙ্কের অ্যাপে সব ধরনের (ব্যক্তিগত ও কোনও সংস্থার সঙ্গে) লেনদেন করা যাবে। তবে আপাতত আইডিবিআই ব্যাঙ্ক এবং আরবিএল ব্যাঙ্কের অ্যাপে করা যাবে শুধু ব্যক্তিগত লেনদেনই।
এপ্রিলে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজন। পরীক্ষামূলক ভাবে তা চালুও হয় ব্যাঙ্কের কর্মীদের মধ্যে। অগস্টের গোড়ায় চালু হওয়ার কথা ছিল আমজনতার জন্য। কিন্তু প্রাথমিক তালিকার ২৯টি ব্যাঙ্কের সকলে পুরোদস্তুর তৈরি হতে না পারায় তা পিছিয়ে যায়। শেষমেশ প্রথম দফায় ২১টি ব্যাঙ্ক-কে এই অ্যাপ ‘আপলোড’ -এর নির্দেশ দেয় এনপিসিআই। যেমন, ইউবিআইয়ের ‘ইউনাইটেড ইউপিআই’। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ‘অ্যাক্সিস পে’।
এনপিসিআই বলেছে, ইউপিআই-অ্যাপের অ্যাকাউন্টে লেনদেনের জন্য এক বা একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ভরে রাখা যাবে। যদিও এ দিন অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক বলেছে, আপাতত একটি অ্যাকাউন্টের তথ্যই ভরা যাবে তাদের ইউপিআই-অ্যাপে। ‘অ্যাক্সিস-পে’তে ঠিকানা তৈরির ক্ষেত্রে নাম অথবা মোবাইল নম্বরের সঙ্গে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক লেখার কথা বলা হলেও, এনপিসিআইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্বরজিৎ মণ্ডল জানান, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। শুধু সংখ্যা বা বর্ণ বা উভয় রকম দিয়েই কেউ নিজের ভিপিএ তৈরি করতে পারেন।
ভিপিএ দিয়ে যেমন ব্যক্তিগত লেনদেন সারা যাবে, তেমনই সংস্থার সঙ্গে তা করা যাবে তার ‘কিউ আর কোড’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকলে। সে ক্ষেত্রে ওই সংস্থাকে টাকা পাঠাতে সেই কোড ‘স্ক্যান’ করে টাকার অঙ্ক ও এমপিন লিখে পাঠাতে হবে। ফলে পণ্যের দাম বা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার খরচ মেটাতে নগদ টাকা বা কার্ড লাগবে না। এই পরিষেবার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক আলাদা ‘চার্জ’ নিতে পারে। কিন্তু অন্য ব্যাঙ্কের ইউপিআই-অ্যাপ ব্যবহারের জন্য আলাদা পয়সা দিতে হবে না।