মাথাব্যথা: চিন্তা এখন চাকরিই।
কাজ নেই তো ভোটও নেই।
সামনেই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও এই রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে। কিন্তু তার আগে ওই রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে কাজ না পাওয়ার ক্ষোভের আঁচ পেয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সেখানে উঠে আসা ছবিতে স্পষ্ট, ২০১৯ সালে ‘কাজ কোথায়’ প্রশ্নের মোকাবিলা করাই সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে মোদী সরকারের সামনে।
বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, এই ছবি সারা দেশের। বিভিন্ন সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে, ডাকাবুকো নেতা হিসেবে এখনও প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে বেশি নম্বর পাচ্ছেন মোদী। কিন্তু জনপ্রিয়তায় টোল পড়ছে কাজের সুযোগ তৈরি করতে না পারায়। রয়টার্সকেই যেমন অনেকে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আগের বার তো ভোট দিয়েছিলাম চাকরি তৈরির কথা শুনে। তাই কাজ পেলে তবেই ফের ভোট দেব পদ্মে।’’
কথার খেলাপ
• গত লোকসভা ভোটের আগে বিপুল কাজের সুযোগ তৈরির কথা নিয়ম করে বলতেন মোদী। প্রতিশ্রুতি দিতেন বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের।
• অথচ তাঁর জমানায় এখনও পর্যন্ত বছরে গড়ে দু’লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি করতেই হিমসিম কেন্দ্র।
• প্রশ্ন উঠছে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দিতে না পারা নিয়েও।
• মুখ রাখতে পিএফে নথিভুক্তি বাড়ার হিসেব দিতে হচ্ছে মোদীকে। রোজগারের তালিকায় জুড়ে দিচ্ছেন পকোড়ার দোকান খোলাকেও!
বেহাল দশা
• ২০১১ সালে যেখানে ৯.৩০ লক্ষ নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেখানে ২০১৬ সালে তা নেমে এসেছে ২.৩১ লক্ষে। বলছে শ্রম মন্ত্রকের সমীক্ষাই
• রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্মসংস্থান বাড়া তো দূর, বরং কাজের সুযোগ কমেছে ০.২%।
• সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে দেশে বেকারত্বের হার ৬.২৩%। ১৬ মাসে সর্বোচ্চ।
• সম্প্রতি রেলের প্রায় ৯০ হাজার পদের জন্য আবেদন করেছেন আড়াই কোটিরও বেশি জন!
• উত্তরপ্রদেশে সরকারি অফিসে ৩৬৬টি পিওনের পদে আবেদন জমা পড়েছে ২৩ লক্ষ! সেখানে ২৫৫ জন পিএইচডি। ২ লক্ষের বেশি ইঞ্জিনিয়ার।
• নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানেরও হুঁশিয়ারি, কারখানায় কাজ তৈরি না হলে, বেকারত্বের খাদেই তলিয়ে যাবে ভারতীয় অর্থনীতির উড়ানের গল্প।
নেহাতই সামান্য
• মোদী সরকারের দাবি, গত আর্থিক বছরে চাকরি তৈরি হয়েছে ৭০ লক্ষ। বিরোধীরা মানতে নারাজ।
• সিএমআইই-র তথ্য বলছে, চাকরির বাজারে এমনিতেই ঘাটতি অন্তত ৮ কোটি কাজের। তার উপর প্রতি মাসে এই বাজারে পা রাখছেন কমপক্ষে ১০ লক্ষ জন।
বিরোধীদের মতে, গত বার দেওয়া লাগামছাড়া প্রতিশ্রুতির শামুকেই পা কাটছে মোদীর। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘বড় মুখ করে কাজের সুযোগ তৈরির কথা যখন বলা হয়েছিল, তখন জনতার দরবারে জবাবদিহি তো করতে হবেই।’’ আর এক বিরোধী নেতার কটাক্ষ, ‘‘মানুষ কাজের মাপ চাইছেন। ছাতির নয়।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘মোদী সরকার তো চলেই স্রেফ প্রচার আর জুমলার ভরসায়। চাকরির বাজারে তা ধরা পড়েছে।’’
মোদী জানেন, ২০১৯ সালে ভোট যুদ্ধ জিততে জরুরি কমবয়সিদের পাশে পাওয়া। তাঁদের মনজয়ের প্রথম শর্ত চাকরি। অথচ কাজ তৈরিতে হিমসিম কেন্দ্র। তার উপর অনেকের রোজগার কেড়েছে নোটবন্দি। তাই পকোড়া বিক্রিকে কাজের তালিকায় ফেললেও, এখন যে কোনও উপায়ে চাকরি বাড়াতে মরিয়া তিনি। এ দিন ছোট-মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের তরফে ৮০০ গ্রামে ৪ লক্ষ চাকরি তৈরির প্রতিশ্রুতিও সম্ভবত সেই কারণে।