পরিকাঠামো গড়বে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর

জট কাটল নোনাডাঙার

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মেনে নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি কেএমডিএ।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৯
Share:

সেই-সময়: ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির শিলান্যাসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জট কাটতে লাগল সাত বছর। ফাইল চিত্র

খাস শহরে প্রকল্প। হাতের নাগালে লগ্নি। তা-ও পরিকাঠামো গড়ার চাপানউতোরে প্রায় হিমঘরে চলে গিয়েছিল নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প। অবশেষে জট কাটল তার। তথ্যপ্রযুক্তি দফতর জানাল, বিনিয়োগ হাতছাড়া হওয়া আটকাতে এ বার প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচে ওই প্রকল্পের জন্য পরিকাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাই। ওয়েবেল-এর মাধ্যমে এই কাজ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

Advertisement

এই প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরিকাঠামো তৈরির দায় আসলে কার, তা নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও নগরোন্নয়ন দফতরের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল বহু দিন ধরে। প্রকল্প আটকে ছিল প্রায় সাত বছর। ফলে ওই দর কষাকষির মাসুল গুনে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মানচিত্রে শুধু একটি নাম হয়েই থেকে গিয়েছিল নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক। কারণ, খাস শহরের মধ্যেই পরিকাঠামোর অভাবে এখানে সাত বছর আগে ২০১০ সালে জমি কিনেও ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু করতে পারেনি এইচএসবিসি, রোল্টা
ইন্ডিয়া ও এইচসিএল।

অভিযোগ ছিল, কাজ শুরুর ন্যূনতম পরিকাঠামোই নেই সেখানে। ফলে এত দিন ধরে ঝুলে রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও কমপক্ষে ১২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ।

Advertisement

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মেনে নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি কেএমডিএ। ফলে নিশ্চিত বিনিয়োগ হাতের কাছে মজুত থাকা সত্ত্বেও, প্রকল্প প্রায় হিমঘরে চলে গিয়েছে। অথচ অনেকেই মনে করেন, দুই দফতরের তাল ঠোকাঠুকি না-থাকলে, এখানে কাজ শুরু হতে পারত অনেক আগেই।

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের একাংশের অভিযোগ ছিল, এইচএসবিসি, রোল্টা ও এইচসিএলের মতো সংস্থার প্রকল্প- প্রস্তাব স্রেফ পরিকাঠামোর অভাবে এত দিন থমকে থাকা রাজ্যের পক্ষে খুব একটা ভাল বিজ্ঞাপন নয়। বিশেষত যেখানে রাজ্য সরকারের নির্ধারিত দামেই জমি লিজে নিয়েছিল তিন সংস্থা। একর প্রতি এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা দরে জমি পেয়েছিল।

২০০৮-’০৯ সালের মন্দা কাটিয়ে যখন ছন্দে ফিরছিল দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, তখন নিজেদের স্থগিত রাখা প্রকল্প পরিকল্পনা ফের বাস্তবায়িত করতে কোমর বেঁধেছিল এইচএসবিসি, রোল্টা, এইচসিএল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, জমি হাতে পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের প্রকল্প চালু করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেও নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি রাজ্য সরকার। ফলে প্রকল্পের কাজও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ সংস্থাগুলির। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের একাংশের মতে, পরিকাঠামোর ওই অভাব না থাকলে, মন্দার মেঘ সরার সময়ই পুরোদমে চালু হয়ে যেতে পারত ওই প্রকল্প।

নোনাডাঙায় সাড়ে তিন একর জমির উপর ক্যাম্পাস তৈরির পরিকল্পনা ছিল এইচএসবিসির । জমি নেওয়ার সময় তারা জানিয়েছিল, চালু হওয়ার পরে সেখানে কর্মী সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪,০০০। ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নোনাডাঙায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে ক্যাম্পাস গড়ার পরিকল্পনা রোল্টা ইন্ডিয়ার। পাঁচ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সেখান তৈরি হতে পারে। দেড় একর জমির উপর নিজস্ব কেন্দ্র তৈরি করতে চায় এইচসিএলও। হাতের নাগালে থাকা এই লগ্নি আর কাজের সুযোগ তৈরির এই সম্ভাবনা আটকে ছিল দুই দফতরের মধ্যের টানাপড়েনে।

বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের বদলে ছোট-ছোট জমিতে তথ্যপ্রযুক্তি হাব গড়ে তোলার জন্য একাধিক মঞ্চ থেকে লগ্নিকারীদের আহ্বান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ খাস কলকাতা শহরেই এ রকম একটি প্রকল্প বছরের পর বছর ঝুলে থেকেছে। একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ হয়নি। অন্য প্রকল্পের জন্য রাস্তা বানাতে গিয়ে নোনাডাঙায় অন্যতম বিনিয়োগকারী রোল্টা ইন্ডিয়ার জমি এক সময় দখলও করে ফেলেছিল কেএমডিএ। অভিযোগ ওঠার পরে সেই রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ হয়। তখনও কেএমডিএ জানিয়েছিল, শীঘ্রই তারা নোনাডাঙার পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে। কিন্তু তার পর থেকে সেই
কাজ আর হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও শিল্প সচিব দেবাশিস সেন সম্প্রতি বৈঠক করে পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি সূত্রের খবর। এর আগে দেবাশিসবাবু নগরোন্নয়ন সচিব ছিলেন বলে পুরো বিষয়টি জানতেনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন