নিজের গাড়ি না-থাকলেও ভাড়ায় গাড়ি নেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে বহু দিনই। কিন্তু অনেকেই চান চালক দিয়ে নয়, ভাড়ার গাড়িও নিজেই চালাতে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে বিদেশের মতো ভারতেও ভাড়া-গাড়ির বাজারে তৈরি হচ্ছে নতুন ব্যবসার সূত্র। এ বার সে তালিকায় ঢুকে পড়ল কলকাতাও।
গাড়ি কেনার খরচ বেশি। রক্ষণা-বেক্ষণের ব্যয়ও কম নয়। রয়েছে নানা ঝক্কির আশঙ্কাও। ফলে অনেকেই গাড়ি কেনার শখকে প্রশ্রয় না-দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়ি ভাড়ার দিকেই ঝোঁকেন। কিন্তু ভাড়া-গাড়ি নিজে চালানো সম্ভব নয়। অথচ অনেকের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের একাংশ নিজে গাড়ি চালাতে ইচ্ছুক। আবার কর্মসূত্রে কোথাও গেলে বা বেড়ানোর সময়েও গাড়ির চাবি নিজের হাতেই রাখতে চান তাঁরা।
এই চাহিদার টানেই বিদেশের মতো ভারতেও একটু একটু করে ছড়াচ্ছে ভাড়া নিয়ে নিজে গাড়ি চালানোর সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবসা। জুমকার, মাইলস, ভোলার, রেভ ও জাস্টরাইড-এর মতো সংস্থা মেট্রো ও প্রথম শ্রেণির শহরগুলিতে সংগঠিত ভাবে চালু করেছে এই ব্যবসা। পুজোর আগে কলকাতায় পরীক্ষামূলক ভাবে এই পরিষেবা চালু করে জুমকার, যা আদপে বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্ট-আপ সংস্থা। সম্প্রতি ৫০টি গাড়ি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা এই শহরে পরিষেবা দিতে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সংগঠিত সংস্থাগুলি এখন সব মিলিয়ে প্রায় ৪,০০০টি গাড়ি নিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে এই ব্যবসা চালায়। ছোট গাড়ি থেকে শুরু করে এসইউভি বা মার্সিডিজ-বেঞ্জ-এর মতো দামি গাড়িও ভাড়া দেয় তারা। গাড়ি কতটা দামি, সেই অনুযায়ী ভাড়ার খরচও ওঠা-পড়া করে। এক একটি গাড়ি থেকে গড়ে মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকার ব্যবসা করে সংস্থাগুলি। অবশ্য জায়গা ও গাড়ির মডেলের ক্ষেত্রে এই হিসেব ভিন্ন হতে পারে।
ইতিমধ্যেই এই পরিষেবা ভাল সাড়া ফেলেছে, দাবি জুমকার-এর সিইও গ্রেগ মোরানের। কলকাতা-সহ ১২টি শহরে এখন তাঁরা ব্যবসা চালাচ্ছেন। গ্রেগ-এর দাবি, সব মিলিয়ে ভাল সাড়া পাওয়ায় আগামী দিনে তাঁরা শিলিগুড়ি, ভুবনেশ্বর, গুয়াহাটি, পটনার মতো আরও কয়েকটি শহরে ব্যবসা ছড়াতে চাইছেন। এখন ভাঁড়ারে ২ হাজারের কিছু বেশি গাড়ি রয়েছে। আগামী বছরের গোড়ায় তা ৩ হাজার ছাড়াবে বলে জানান তিনি। শীঘ্রই বেশ কয়েকটি শহরে তাঁদের ব্যবসা লাভের মুখ দেখবে বলে আশা সংস্থাটির।
বিদেশে ব্যবসায়িক কাজ ছাড়া পর্যটনের ক্ষেত্রেও নিজে চালানোর জন্য ভাড়ার গাড়ির চাহিদা যথেষ্ট। দেশে সেই সম্ভাবনাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিভিন্ন সংস্থা। ইতিমধ্যেই কলকাতাতেও সেই চাহিদারই ইঙ্গিত পেয়েছে জুমকার। সংস্থার দাবি, পুজোয় যেমন অনেকেই মণ্ডপে ঠাকুর দেখার জন্য তাদের গাড়ি ভাড়া করেছেন, তেমনই নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে দিঘা, সুন্দরবন, শঙ্করপুরে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকও রয়েছেন।
সংস্থার ওয়েবসাইট কিংবা মোবাইল -অ্যাপে গাড়ি ভাড়া করা যাবে। ‘সিকিউরিটি জিপোজিট’ হিসেবে কিছু টাকা জমা রাখতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন গাড়ির ক্ষেত্রে ভাড়ার অঙ্ক আলাদা। তার মধ্যেই তেল, বিমা ও করের টাকা ধরা রয়েছে। ফলে যিনি গাড়িটি নেবেন, আলাদা করে তাঁর ওই সব খরচ লাগবে না। ভাড়ার পরে আপাতত শহরের তিনটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে গাড়ি মিলবে। তার বাইরে কেউ বাড়িতে গাড়িটি আনিয়ে নিতে চাইলে আলাদা খরচ করতে হবে তাঁকে। গ্রেগ জানান, গাড়ি নিতে শহরের আরও কয়েকটি অতিরিক্ত জায়গা নির্দিষ্ট করার ভাবনা রয়েছে তাঁদের।
জুমকার-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেও কেউ এই ব্যবসায় নামতে পারেন। ‘জুম অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম’ (জ্যাপ)-এ আগ্রহীরা তাঁদের গাড়ি ইচ্ছা করলে জুমকার-এর হয়ে ভাড়ায় দিতে পারবেন। জুমকার জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে লাভের অঙ্ক ভাগ করে নিতে পারবেন তিনি।