নোট নাকচই কি বৃদ্ধি কমালো, শুরু তরজা

প্রধানমন্ত্রীর নোট নাকচের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের মাসুল গুনছে দেশের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষও। অনেকের প্রশ্ন, এখন কি তবে ৭-৮% বৃদ্ধিতেই খুশি মোদী সরকার?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৩:১৯
Share:

নোট বাতিলের তুমুল বিরোধিতার পরেও উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিপুল জয় চুপসে দিয়েছিল বিরোধীদের। কিন্তু বৃদ্ধির হার ধাক্কা খেতেই নতুন উদ্যমে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করলেন তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রাহুল গাঁধী— সকলেরই বক্তব্য, নিজেদের বিবর্ণ পরিসংখ্যানেই এ বার ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে কেন্দ্রের। প্রধানমন্ত্রীর নোট নাকচের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের মাসুল গুনছে দেশের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষও।

Advertisement

এই চাপের মুখে সরকারকে আড়াল করতে সেনাপতি অরুণ জেটলিকে মাঠে নামিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। অর্থমন্ত্রী জেটলির দাবি, বৃদ্ধি ধাক্কা খাওয়ার পিছনে নোট বাতিলের প্রভাব নেই। তাঁর কথায়, ‘‘নোট বাতিলের আগেই থেকেই বিশ্বজোড়া মন্দার প্রভাব এ দেশে পড়েছে। রফতানি কমেছে। বিদেশি লগ্নি এলেও দেশীয় বিনিয়োগ বাড়েনি। তিন বছর ভাল বর্ষাও হয়নি।’’ জেটলির দাবি, ‘‘৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই ভাল। ভারতের ক্ষেত্রেও কম নয়।’’

ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, তবে যে মোদী বলেছিলেন যে, দেশের অর্থনীতির হাল ভাল আর পোক্ত ছিল বলেই তখন নোট নাকচের ওই সিদ্ধান্ত! অনেকের প্রশ্ন, এখন কি তবে ৭-৮% বৃদ্ধিতেই খুশি মোদী সরকার?

Advertisement

বুধবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-’১৭ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৬.১ শতাংশে। সেই সূত্রে আপাতত চিনের কাছে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশের তকমা খুইয়েছে ভারত। পুরো অর্থবর্ষে বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.১%। মোদীর তিন বছরের জমানায় যা সবচেয়ে কম। দেখা যাচ্ছে, গত বার বিপুল সরকারি ব্যয় আর ভাল বর্ষার দৌলতে কৃষি মুখ না বাঁচালে বৃদ্ধির হার আরও নামতো। আর স্বাভাবিক ভাবেই এর জন্য অভিযোগের আঙুল উঠছে নোট নাকচের দিকে। অনেকেই বলছেন, মনে হচ্ছিল ওই সিদ্ধান্তের প্রভাব হয়তো দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে। কিন্তু সংখ্যা অন্য কথা বলছে।

কেন্দ্রকে আক্রমণ করে এ দিন টুইটে মমতা বলেছেন, ‘‘নোট বাতিলের পরেই বলেছিলাম, দেশে কাজের সঙ্কট হবে। উন্নয়ন আটকে যাবে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।’’ একই সুরে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন রাহুল গাঁধী। বলেছেন, ‘‘জিডিপি কমছে। বেকারত্ব বাড়ছে। মৌলিক ব্যর্থতা থেকে মুখ ঘোরাতেই এখন বাকি ঘটনা সাজানো হচ্ছে।’’ এ ক্ষেত্রে অবশ্য জিডিপি বলতে জিডিপি বৃদ্ধির হার বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।

ইউপিএ জমানায় অর্থ মন্ত্রক সামলানো পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘অর্থনীতির রোগ না-সারিয়ে কেন্দ্র বোকার মতো নোট বাতিলের পদক্ষেপ করেছিল। এখনও নিজেদের ভুল সংশোধন না করলে আরও খারাপ হাল হবে অর্থনীতির। সরকার কত দিন আর মানুষকে বোকা বানিয়ে অল ইজ ওয়েল বলবে?’’ উল্লেখ্য, এ দিন উৎপাদন শিল্পের নিক্কেই-মার্কিট সূচকেও কল-কারখানায় উৎপাদনের গতি শ্লথ হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট।

নোট বাতিলের পরে কৃষি ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে এ দিন ফের অভিযোগ তোলেন মমতা। আর রাহুল প্রশ্ন তোলেন ‘কাজহীন বৃদ্ধি’ নিয়ে। জেটলির পাল্টা যুক্তি, ‘‘বিরোধীরা আগে বলত, বড় সংস্কার নেই। জিএসটি, নোট বাতিলের পরে সে কথা বলা বন্ধ হয়েছে। তাই এখন প্রচারের জন্য কাজহীন বৃদ্ধির অভিযোগ আনছে তারা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অসংগঠিত ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান নেই বলেই বিরোধীরা একে হাতিয়ার করছে।’’

নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত জেটলি জানতেন কিনা, তা নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন তাঁর দাবি, নোট বাতিলে স্পষ্ট বার্তা গিয়েছে যে, নগদ লেনদেন নিরাপদ নয়। ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে। করের আওতায় এসেছেন অনেক বেশি জন। অর্থনীতিতে নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব বেড়েছে ১৮%। যদিও যার জন্য কৃচ্ছসাধন, সেই কালো টাকা কতটা ধরা পড়ল, তা বলেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন