স্বর্ণনীতি তৈরির আর্জি রাজ্যকে

এ রাজ্যের কারিগরদের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বংশ পরম্পরায় শেখা তাঁদের হাতের কাজের সঙ্গে বরং চট করে পাল্লা দেওয়াই শক্ত। কিন্তু বাজারে দখল বাড়াতে সেই কারিগরদের জন্য আগে উন্নয়ন তহবিল তৈরি করা জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বিপণনের লাগাতার উদ্যোগ। আর মূলত এই দুই কথা মাথায় রেখেই স্বর্ণনীতি তৈরির সুপারিশ করছে তারা।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

দেশে সোনার কারিগরদের প্রায় ৭০ শতাংশই এ রাজ্যের। অথচ দেশের মোট গয়নার ১৫% তৈরি হয় এখানে। পূর্ব ভারতে বিক্রিও তা-ই। এই ছবি বদলাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিজস্ব স্বর্ণনীতি তৈরির প্রস্তাব দিতে চায় ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল।

Advertisement

তাদের মতে, এ রাজ্যের কারিগরদের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বংশ পরম্পরায় শেখা তাঁদের হাতের কাজের সঙ্গে বরং চট করে পাল্লা দেওয়াই শক্ত। কিন্তু বাজারে দখল বাড়াতে সেই কারিগরদের জন্য আগে উন্নয়ন তহবিল তৈরি করা জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বিপণনের লাগাতার উদ্যোগ। আর মূলত এই দুই কথা মাথায় রেখেই স্বর্ণনীতি তৈরির সুপারিশ করছে তারা।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল-ইন্ডিয়ার কর্তা সোমসুন্দরম পি আর বলেন, ‘‘দেশের সর্বত্র এ রাজ্যের কারিগরদের কদর রয়েছে। সেই দক্ষতা কাজে লাগাতে তাঁদের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা জরুরি। তবেই প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের উৎপাদন কেন্দ্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।’’ তাঁদের মতে, কারিগরদের ভাল না-ভাবলে ও বিপণন পরিকল্পনা ভাল ভাবে না-করলে, বাজারে কব্জা করা কঠিন। যে সমস্ত রাজ্যে গয়না বেশি তৈরি হয় এবং বংশ পরম্পরায় দক্ষ কারিগর রয়েছে, সেই রাজ্যগুলিকে স্বর্ণনীতি তৈরির প্রস্তাব দিচ্ছে কাউন্সিল। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে।

Advertisement

২৫%

২০%

১৫%

তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল

এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, স্বর্ণনীতি তৈরির প্রস্তাব স্বাগত। কারণ, যে সমস্ত শিল্পে রাজ্যের সুনাম রয়েছে, সোনা তার অন্যতম। তবে তাঁর দাবি, আলাদা ভাবে নীতি তৈরি না-করেও কারিগরদের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে গয়না শিল্পের পার্ক তৈরি হয়েছে। কারিগররা সেখানে সস্তায় জায়গা কিনে নিজেদের উৎপাদন কেন্দ্র চালু করতে পারেন।’’ উল্লেখ্য, ডোমজুড়ের এই শিল্প প্রকল্পের মূল লক্ষ্য দেশের বাজার। এই এলাকা কারিগরদের আঁতুড়ঘর। ডোমজুড় সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে তাঁরা থাকেন। বংশ পরম্পরায় স্বর্ণশিল্পের সঙ্গেই জড়িত।

কাউন্সিলও মনে করে, কারিগরি দক্ষতায় এ রাজ্য অনেকখানি এগিয়ে। সোমসুন্দরমের কথায়, ‘‘হাতে তৈরি গয়নায় এ রাজ্যের কারিগরদের সমকক্ষ কেউ নেই বললেই চলে।’’ কিন্তু এই দক্ষতার সিংহভাগই ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কর্তা বাবলু দে-র দাবি, শুধু নোট নাকচের সময়েই কাজ হারিয়ে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফিরেছেন অন্তত ৯ লক্ষ কারিগর। কাউন্সিলের মতে, কারিগরদের দক্ষতা কাজে লাগিয়েই তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কেরল, গুজরাতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, দেশের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় গয়না তৈরি ও বিক্রিতে পিছিয়ে পূর্ব। দক্ষিণে যেখানে তা ৪০%, পূর্বে ১৫%।

কাউন্সিলের মতে, পূর্বে বিক্রি বাড়াতে আগে চাই বিপণন নীতি। সংস্থাগুলির পাশাপাশি রাজ্যেরও। সোমসুন্দরমের কথায়, ‘‘হাতে গড়া সোনার গয়না তুলে ধরতে পর্যটনকে কাজে লাগানো উচিত। তৈরি করা যেতে পারে স্থায়ী প্রদর্শনীশালাও।’’

তৈরি বিক্রি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন