কৃষি-যন্ত্র: ক্ষেত থেকে চলছে আলু তোলার কাজ। নিজস্ব চিত্র
‘চিপ্স’ বা আলুভাজার আলু চাষ করেই এ যাত্রা বেঁচে গিয়েছেন রাজ্যের দশ হাজার আলু চাষি।
পশ্চিমবঙ্গে চলতি বছরে আলুর ফলন প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে। কিন্তু চাহিদা-জোগানের সমীকরণ মেনে দাম তলানিতে ঠেকেছে। মোটা টাকা লোকসান করার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে আছেন বহু কৃষক। গত বছরের মতো চড়া দাম পাওয়ার আশা দূর অস্ত্। চাষের খরচই উঠে আসার সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা। আর ঠিক এখানেই লোকসানের কোপ থেকে নিস্তার পেয়েছেন বহুজাতিক সংস্থা পেপসিকো-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রাজ্যের দশ হাজার কৃষক। বাজারে সাধারণ আলুর দাম কেজি-প্রতি দুই থেকে তিন টাকা। পেপসিকো দিচ্ছে কেজি প্রতি আট টাকা। আর ফলন বাড়ায় খুশি সংস্থাও। পেপসিকো-র অন্যতম কর্তা জয়দীপ ভাটিয়ার দাবি, এ রাজ্যে সংস্থার কারখানায় প্রয়োজন ৮০ হাজার টনের বেশি আলু। এ বছর বাড়তি ফলনের জেরে ৭২ হাজার টন রাজ্য থেকেই জোগাড় হবে বলে পরিবহণের খরচ ন্যূনতম দাঁড়াবে। ফলে উৎপাদন খরচ বেঁধে রাখা যাবে।
লাভ-লোকসানের এই ছবিটাই উঠে এল গোঘাটের আনন্দপুর গ্রামের অসীম চৌধুরী, শান্তিরাম মণ্ডলদের কথায়। অসীমবাবুর আড়াই বিঘা জমির পুরোটাতেই পেপসিকো-র চিপ্স-এর জন্য বিশেষ ধরনের আলু চাষ হয়। তাঁর দাবি, এ বছর বিঘা প্রতি ৫০০০ থেকে ৫৫০০ কেজি আলু ফলেছে। বীজ ও সারের দাম-সহ যাবতীয় খরচ মিটিয়েও এ বছর ১৫ হাজার টাকা লাভ করবেন তিনি। অথচ অন্য চাষিরা সাধারণ আলু চাষ করে যা দাম পাচ্ছেন, তাতে খরচ উঠছে না।
তবে এই বাণিজ্যিক কৌশলের বীজ ২০০৯ সালেই বুনেছিল ৬৩০০ কোটি ডলার ব্যবসা করা পেপসিকো। চুক্তির ভিত্তিতে আলু চাষ শুরু হয়েছিল কিছু হাতে গোনা কৃষককে নিয়ে। এখন দশ হাজার চাষির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে সংস্থা। সব মিলিয়ে এ রাজ্যে ৫৩০০ একর জমি জুড়ে আলুভাজা তৈরির বিশেষ আলু চাষ করছে তারা। সংস্থার দাবি, শুধু বীজ বা সার দিয়ে সহায়তা নয়। ছোট জমিতেও যন্ত্রচালিত চাষ চালু করতে কৃষকের পাশে দাঁড়াচ্ছে সংস্থা। নতুন প্রযুক্তি জোগানোর পাশাপাশি যন্ত্র কেনার জন্য ঋণের টাকারও সংস্থান করছে সংস্থা।