বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ব্যালট কুরুক্ষেত্রে’ নিজেদের পাণ্ডবপক্ষ বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। আর সোমবার নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করতে অর্থনীতিকেই গাণ্ডীব করলেন তিনি। তাতে বাণ, এ দেশে বেকারত্ব নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানের সাম্প্রতিক হুঁশিয়ারি।
শনিবার ক্রুগম্যান বলেছিলেন, অসীম সম্ভাবনার দরজায় কড়া নাড়ছে ভারত। এ দেশ উপচে পড়ছে কাজ করতে সক্ষম, এমন মানুষে। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনা পূরণের শর্ত, ওই সমস্ত মানুষকে কাজ জোগানো। এ দেশের কল-কারখানা সে বন্দোবস্ত করতে পারছে কোথায়? মার্কিন অর্থনীতিবিদের সেই কথার সূত্র ধরেই মোদীকে আক্রমণ করেছেন রাহুল। টুইটে বলেছেন, গত দু’বছর ধরে এই সমস্যাই নাগাড়ে বলছেন তাঁরা। অর্থনীতি নিয়ে মোদীর দিকে এ দিন আক্রমণ শানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হাও। তাঁর অভিযোগ, নোটবন্দি আর জিএসটি চালুতে সর্বনাশ হয়েছে অর্থনীতির।
যশবন্ত বলেছেন, নোটবন্দির জেরে ফিরে এসেছে ‘কর সন্ত্রাসবাদ’, ১৮ লক্ষ মামলা করেছে আয়কর দফতর। মহম্মদ বিন তুঘলুকের নাম না করেও মোদী জমানাকে পাঁচ শতক আগে ‘দিল্লির এক শাসকের’ আমলের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। শুধু রাজধানী সরানো নয়, ‘ওই সুলতান মুদ্রাও বাতিল করেন’, মন্তব্য যশবন্তের।
অনেকেই বলছেন, ঠিক যেন আগের লোকসভা ভোটের তাল ঠোকাঠুকি। শুধু জায়গা বদলেছে চরিত্রগুলি। নীতিপঙ্গুত্ব ও তার জেরে অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়াকে তখন নিয়ম করে নিশানা করতেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করতেন, দিল্লি দখল করতে পারলে বৃদ্ধির হারকে বাড়াতে পারবেন। প্রতিশ্রুতি দিতেন বছরে দু’কোটি কাজের।
আরও পড়ুন: নীরব ঝক্কিতেও সাড়া শেয়ারে
এখন বিরোধী আসনে বসে কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, এত কথা বলে নিজের জমানায় বছরে গড়ে দু’লক্ষ কাজের সুযোগ তৈরি করতেও হিমসিম খাচ্ছে কেন্দ্র। বিরোধীদের অভিযোগ, একে কারখানায় কাজ তেমন নেই। যেটুকু রয়েছে, সেখানেও থাবা বসিয়েছে নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর জোড়া ধাক্কা। অনেকে বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে শিল্পের চাকা ঘুরছে দ্রুত। কিন্তু কোথায়, তার হদিশ নেই। তাই এমন তো হবেই।
অর্থাৎ, কর্মসংস্থান এবং বেহাল অর্থনীতিকেই মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মূল অস্ত্র করছে কংগ্রেস। আগের বার বিজেপি যেমন করেছিল। কখনও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তো কখনও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম— সকলেরই অভিযোগ, নোট বাতিল ও জিএসটির ধাক্কায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। গত কাল চিদম্বরম বলেন, আগামী দিনে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তাদের বড় আর্থিক সঙ্কট সামলাতে হবে। আগের লোকসভা ভোটে যুব সমাজকে পাশে পেতে চাকরির স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন মোদী। এ বার তা করছে কংগ্রেসও।
সব দেখে কেউ কেউ বলছেন, যে কোনও ভোট যুদ্ধে জিততে গাণ্ডীব তো সেই অর্থনীতিই। ১৯৯২ সালে মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিল ক্লিন্টনের সেই প্রচার মনে পড়ে? সেই ডাক, ‘ইটস্ দ্য ইকনমি স্টুপিড।’