রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে যে টাকাটা ধার দেয় (রেপো রেট) তাদের বিপদে-আপদে দিন গুজরানের জন্য তার, সুদের হার বেশ কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হল। ৬.৫০ শতাংশ থেকে কমে সেই সুদের হার হল ৬.২৫ শতাংশ। অর্থনীতির পরিভাষায়, রেপো রেট কমানো হল ২৫ বেসিস পয়েন্ট। গত ছয় বছরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেপো রেটের হার এতটা নীচে নামেনি। এর ফলে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বাড়ি, গাড়ি, জমিজিরেত কেনার জন্য বা বিভিন্ন সমাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে যে টাকাটা ধার দেয়, তার ওপর সুদের হার কমার রাস্তাটা তৈরি হল বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, এত দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেপো রেট চড়া ছিল বলেই তার সুদ মেটানোর জন্য গাড়ি, বাড়ি, জমিজিরেত কেনার ঋণের ওপর বেশি সুদ নিতে হতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেপো রেট কমার ফলে সাধারণ মানুষের ওপর ‘সুদের ফাঁস’টা একটু হাল্কা হবে বলেই অর্থনীতিবিদদের অনুমান। সরকার ও আমজনতার দীর্ঘ দিনের দাবি মেটার ছাপ পড়েছে মঙ্গলবার শেয়ার বাজারেও। সেনসেক্স চড়েছে ৯১ পয়েন্ট। বাজার বন্ধ হওয়ার সময় নিফটি পৌঁছেছে ৮ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওপর এই রেপো রেট কমানোর চাপটা ছিল অনেক দিন ধরেই। তা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বতন গভর্নর রঘুরাম রাজনের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সহ কেন্দ্রীয় সরকারের মতবিরোধের ঘটনা কারও অজানা নয়। যার জেরে রাজন জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি নিজেই আর চান না, গভর্নর-পদে তাঁর মেয়াদ বাড়ুক। আরবিআইয়ের নতুন গভর্নর উরিজিৎ পটেল দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যেটা আরও ঐতিহাসিক ঘটনা, তা হল- রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইতিহাসে এই প্রথম রেপো রেট কমানোর মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ৬ সদস্যের প্যানেল- ‘মানিটারি পলিসি কমিটি’ বা ‘এমপিসি’-র গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে। ওই প্যানেলের ৬ সদস্যই ভোট দিয়েছেন রেপো রেট কমানোর পক্ষে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও আর্থিক নীতি বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমন সার্বিক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও বেশ বিরল ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব অশোক লাভাসা বলেছেন, ‘‘এর ফলে আগামী দিনে শেয়ার বাজার আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। রাশ টানা যাবে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতিতেও।
বেসরকারি ‘ইয়েস ব্যাঙ্ক’-এর চিফ ইকোনমিস্ট সুভদ্রা রাও বলেছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিতই ছিল। আমার মনে হয়, আগামী দিনে আরবিআই এই রেপো রেট আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবে। মানে, তখন রেপো রেটের পরিমাণ ৬.২৫ শতাংশ থেকে কমে হবে ৬ শতাংশ।’’
আরও পড়ুন- রাশিয়া, আমেরিকার পর এ বার ভারতের পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়নও