উর্জিত পটেল।
যেমন দাবি করেছিল শিল্পমহল, ঠিক তেমনটাই ঘটল। নতুন তৈরি হওয়া ছয় সদস্যের ঋণনীতি কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সুদ কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কমিটির সব সদস্যই একমত হওয়ার পরে আরবিআইয়ের নতুন গভর্নর উর্জিত পটেল প্রথম বার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে মঙ্গলবার ঘোষণা করলেন সুদ ছাঁটাইয়ের কথা। এত দিন আরবিআই গভর্নরই শীর্ষ অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে হার ঠিক করতেন। গত ৯ অগস্ট পটেলের পূর্বসূরি রঘুরাম রাজন তাঁর শেষ ঋণনীতিতে সেটাই করেছিলেন।
এ দিকে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোয় খুশি শেয়ার বাজার। সেনসেক্স ৯১.২৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২৮,৩৩৪.৫৫ অঙ্কে। নিফ্টি ৩১.০৫ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হয় ৮,৭৬৯.১৫ অঙ্কে।
গত ৬ মাসে এ দিনই প্রথম সুদ কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে যে-হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়, সেই রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করা হয়েছে ৬.২৫%। আর বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নেওয়ার সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া সুদ বা রিভার্স রেপো রেটও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে ৫.৭৫%। এর জেরে গাড়ি, বাড়ি ও শিল্পকে দেওয়া ঋণে ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল। কমবে বাড়ি, গাড়ি ঋণের মাসিক কিস্তির (ইএমআই) অঙ্কও।
শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোয় খুশি কেন্দ্র। অর্থ সচিব অশোক লাভাসা বলেন, ‘‘এর ফলে বাজারে নগদ টাকার জোগান বাড়ার পাশাপাশি গতি ফিরবে আর্থিক বৃদ্ধির।’’ এই অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৭.৬% ও পরের বার ৭.৯% হবে বলেও এ দিন পূর্বাভাস দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
কেন্দ্র বেশ কিছু দিন ধরেই চাইছিল সুদ কমাক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মন্তব্য করেন, সুদ ঠিক করার সময়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধি কমার বিষয়টি মাথায় রাখবে বলে তিনি আশা করছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদ কমানোর বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে দেশে শিল্প বৃদ্ধি থমকে। শিল্পের চাকা গড়ানোর জন্য তাই মূলধন সংগ্রহের খরচ কমা জরুরি। সুদ কমায় সেই পথ সুগম হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে শিল্পমহলের মতে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর ব্যবস্থা করলেও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কতটা সেই পথে হাঁটে, সেটাই দেখার। ২০১৫-র জানুয়ারি থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ১৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমালেও তার অভিযোগ, ব্যাঙ্কগুলি তাল মিলিয়ে সুদ ছাঁটেনি।
এ দিন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক-কর্তা সুদ কমানোর সম্ভাবনার কথা বললেও, কতটা ছাঁটা হবে, তা নিয়ে মন্তব্য করেননি। যেমন স্টেট ব্যাঙ্ক কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধি কমবে বলেই পূর্বাভাস। তাই সুদ কমানোর নীতির সঙ্গে তাল রাখতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিএ) চেয়ারম্যান ও দেনা ব্যাঙ্কের সিএমডি অশ্বিন কুমার বলেন, ‘‘আশা করি, এই সুবিধা ব্যাঙ্কগুলি দ্রুত গ্রাহককে পৌঁছে দেবে।’’ তবে বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, ‘‘সুদ কমানো হবে কি না, তা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। ঋণে সুদ কমাতে হলে আমানতেও তা কমানো জরুরি। কিন্তু এখন আমানত বৃদ্ধির হার কমতির দিকে। তাই মনে হয়, সব বিবেচনা করে প্রতিটি ব্যাঙ্কের ‘অ্যাসেট লায়াবিলিটি কমিটি’ এই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
বিশেষজ্ঞরা জানান, আগে ঋণে সুদ কমলেও অনেক সময়েই ব্যাঙ্কগুলি আমানতে তা কমাতে দ্বিধা করত। কারণ, প্রথমত মূল্যবৃদ্ধির হারের চেয়ে আমানতে সুদ কমে গেলে ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে উৎসাহ হারাতে পারেন গ্রাহক। দ্বিতীয়ত, স্বল্প সঞ্চয়ে তুলনায় বেশি সুদ পাওয়ার বিষয়টিও আমানতে সুদ কমানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াত। তবে বর্তমানে কমেছে মূল্যবৃদ্ধি। স্বল্প সঞ্চয়ে সুদও কমিয়েছে কেন্দ্র। ফলে আমানতে সুদ কমার পথ অনেকটাই প্রশস্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।