শেষ ঋণনীতিতে সুদ একই

ফের ফণা তুলতে শুরু করেছে মূল্যবৃদ্ধি। শুরুতেই তার বিষদাঁত ভাঙতে তাই নিজের শেষ ঋণনীতিতেও সুদ কমালেন না রঘুরাম রাজন। বিদায়বেলাতেও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে জেহাদ জারি রাখলেন তিনি।তবে সুযোগ থাকতেও সুদ না-কমানোর জন্য মঙ্গলবার বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

ফের ফণা তুলতে শুরু করেছে মূল্যবৃদ্ধি। শুরুতেই তার বিষদাঁত ভাঙতে তাই নিজের শেষ ঋণনীতিতেও সুদ কমালেন না রঘুরাম রাজন। বিদায়বেলাতেও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে জেহাদ জারি রাখলেন তিনি।

Advertisement

তবে সুযোগ থাকতেও সুদ না-কমানোর জন্য মঙ্গলবার বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের সুদ ছাঁটাইয়ের ইচ্ছে নিয়ে। সেই সঙ্গে উস্‌কে দিয়েছেন আগামী ঋণনীতি থেকেই সুদ নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি চালুর জল্পনা। যা সত্যি হলে, রাজনই হবেন শেষ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্ণধার, যিনি একার সিদ্ধান্তে সুদ ঠিক করেছেন এই দেশে। পরের বার (অক্টোবর) থেকে সেই দায়িত্ব ঋণনীতি কমিটির কাঁধে বর্তাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খোদ রাজনই।

৪ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে এ দিনই ছিল রাজনের শেষ ঋণনীতি। সেখানে রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক-কে শীর্ষ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে যে সুদে ঋণ দেয়) ৬.৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখলেন তিনি। একই (৬%) থাকল রিভার্স রেপো রেট (শীর্ষ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছে স্বল্প মেয়াদে যে সুদে ধার নেয়) আর নগদ জমার অনুপাতও (৪%)।

Advertisement

খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি জুন মাসে ছিল ৫.৮%। গত ২২ মাসে সর্বোচ্চ। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়া, জিএসটি চালু হলে প্রাথমিক ভাবে কিছু পণ্য-পরিষেবার দাম বাড়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি কারণে আগামী দিনে তা আরও কিছুটা মাথা তোলার আশঙ্কা রয়েছে। এ দিন মূলত সে কথা মাথায় রেখেই সুদ ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটেননি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে থাকা অর্থনীতির অধ্যাপক। নিজের জমানার পুরো সময়ই মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বরাবরই এ রকম একবগ্গা থেকেছেন তিনি। জিনিসপত্রের দাম মাত্রাছাড়া হওয়ার সামান্যতম সম্ভাবনা থাকলে, রাজি হননি সুদ কমাতে। অনেক সময় কানে তোলেননি কেন্দ্র এবং শিল্পমহলের প্রবল চাপও। এ দিন রাজন অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন যে, চলতি অর্থবর্ষের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের মধ্যেই বাঁধা থাকবে।

আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) এই প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ অবশ্য মনে করেন, সুদ কমানোর সুযোগ যথেষ্টই ছিল বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির সামনে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মোট ১৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাই করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুদ কমায়নি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। তাঁর কথায়, ‘‘আগে কিছু ব্যাঙ্কের যুক্তি ছিল নগদের জোগানে ঘাটতির। এখন আবার অনেকের উদ্বেগ অনাবাসীদের ঋণপত্র ভাঙানো নিয়ে। এর পরেও নিশ্চয় নতুন কোনও চিন্তা মাথাচাড়া দেবে।’’ উল্লেখ্য, তিন বছর আগে দেশে ডলার এনে টাকার পতন রুখতে মূলত অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য ঋণপত্র ছাড়া হয়েছিল বাজারে। সুদ সমেত তা ফেরানোর সময় এ বছরের শেষেই। তার জন্য লাগবে অন্তত ২,৬০০ কোটি ডলার। রাজনের যদিও দাবি,
শীর্ষ ব্যাঙ্ক তৈরি।

সুদ কমানো নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের দাবি, আগামী কয়েক মাসে তা ধীরে ধীরে করতে পারবেন তাঁরা। বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষের মতে, এ বার শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ না-কমানোই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ভাল বর্ষা, সপ্তম বেতন কমিশন ইত্যাদির হাত ধরে বৃদ্ধির চাকায় এখন গতি বাড়তে শুরু করার কথা। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকলে, তখন ফের সুদ কমাতে পারবে শীর্ষ ব্যাঙ্কও।

কেন্দ্র যাতে ঋণনীতি কমিটি তৈরির কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে, সে জন্য এ দিন ফের অনুরোধ করেছেন রাজন। আশা করছেন, অক্টোবরের ঋণনীতিতে সুদ ঠিক করবে ওই কমিটিই। শেষ হবে গভর্নরের একার সিদ্ধান্তে সুদ নির্ধারণের রেওয়াজ।

শেষ ঋণনীতি ঘোষণার দিনে রাজনকে সামান্য হলেও ছুঁয়েছিল আবেগ। সাংবাদিক বৈঠকে ছেলে-মেয়েকে এনেছিলেন। বললেন, দিনের শেষে দেশের কাজ করার সন্তুষ্টির এমন চাকরি কম মেলে। শেষ ঋণনীতিতেও সেই ‘মূল্যবৃদ্ধি যোঝার চাকরি’তে বিন্দুমাত্র ঢিল দিলেন না
তিনি। প্রত্যাশিত ভাবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন