ধারের বিধি কড়া, চিন্তায় গয়না শিল্প

সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘বন্ধক  বৃদ্ধি বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। খুব বেশি হলে তা আর ১০%-১৫% বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি বোঝা নেওয়া শিল্পের পক্ষে অসম্ভব।’’ এ নিয়ে ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাও বলছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৭
Share:

চলছে গয়না তৈরির কাজ। —ফাইল চিত্র

নোট নাকচ থেকে নীরব কাণ্ড— একের পর এক সমস্যায় দেশে নাগাড়ে নাস্তানাবুদ থাকতে হয়েছে গয়না শিল্পকে। এ বার ধার দেওয়া নিয়ে ব্যাঙ্কের বাড়তি কড়াকড়িতে বিপাকে গয়না রফতানিকারীরাও।

Advertisement

তাঁদের আশঙ্কা, রফতানির জন্য গয়না তৈরি করতে ধার পাওয়ার জন্য যে পরিমাণ বন্ধক রাখতে হয়, আগামী বছর থেকে এক লাফে তা বাড়তে পারে অনেকখানি। সে ক্ষেত্রে পুঁজি জোগাড়ে আরও সমস্যায় পড়বেন তাঁরা। মঙ্গলবার কলকাতায় জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) চেয়ারম্যান প্রমোদ অগ্রবাল এবং এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর সব্যসাচী রায় জানান, এখনও পর্যাপ্ত নগদ ও ঋণের অভাবে ভুগছে অধিকাংশ গয়না রফতানি সংস্থা। তার উপরে বাড়তি ধাক্কা এই বন্ধক বৃদ্ধির সম্ভাবনা। তাঁদের দাবি, এখন ঋণের ২০%-২৫% অঙ্কের সমমূল্যের সম্পদ বন্ধক রাখতে হয়। এক লাফে তা বাড়াতে চাইছে ব্যাঙ্ক।

সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘বন্ধক বৃদ্ধি বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। খুব বেশি হলে তা আর ১০%-১৫% বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি বোঝা নেওয়া শিল্পের পক্ষে অসম্ভব।’’ এ নিয়ে ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাও বলছেন তাঁরা।

Advertisement

রফতানিকারীদের ঘুম কেড়েছে ডলারের চড়া দামও। হালে কিছুটা কমলেও মার্কিন মুদ্রার দর এখনও যথেষ্ট চ়ড়া। গয়না রফতানিকারীরা বলছেন, বিদেশ থেকে গয়নার কাঁচামাল (সোনা বা হিরে) ডলারে কিনতে হয় সংস্থাগুলিকে। কিন্তু ব্যাঙ্কের কাছে ধার পায় টাকায়। সমস্যা হল, ডলারের যা বিনিময়মূল্য, তা ধরে পুঁজি জোগানোর ধার দিতে নারাজ ব্যাঙ্কগুলি। বরং ঝুঁকি কমাতে তা কিছুটা কম ধরে ঋণ দিচ্ছে তারা। ফলে আসলে গয়না তৈরির খরচ হিসেবে যে টাকা ধার হিসেবে পেলে যথেষ্ট, মিলছে তার থেকে কম। আগে এমন ক্ষেত্রে ঋণের ঘাটতি মেটাতে পরিস্থিতি বিচারে তার অঙ্ক বাড়াত ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু জিজেইপিসি-র কর্তাদের অভিযোগ, এখন ঝুঁকির যুক্তিতে সেই পথে পা ফেলতেই রাজি নয় তারা। অন্তত সেই ব্যবস্থা চালু রাখার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।

পুরনো ব্যথা


নোটবন্দির জেরে বেশ কিছু দিন কার্যত শিকেয় উঠেছিল ব্যবসা। কাজ হারান বহু কারিগর।

জিএসটি জমানায় করের হার কত হবে, বিস্তর টানাপড়েন চলেছিল তা নিয়েও।

মাঝে প্যান দাখিলের কড়াকড়ি নিয়ে অখুশি ছিল গয়না শিল্প।

ডলারের দাম তেড়েফুঁড়ে ওঠায় বেড়েছে সোনা কেনার খরচ।

অনাদায়ি ঋণের সমস্যা ও নীরব কাণ্ডের পরে কঠিন হয়েছে ব্যাঙ্কের থেকে ধার পাওয়া।

নতুন দুশ্চিন্তা

রফতানির জন্য গয়না তৈরির পুঁজি জোগাড়ে ধার নেওয়ার জন্য যে পরিমাণ বন্ধক রাখতে হয়, আগামী বছর এক লাফে তা অনেকখানি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে শিল্প।

ডলারের দাম যতখানি বেড়েছে, গয়না তৈরির খরচে ধার দিতে ততটা ধরে হিসেব করছে না ব্যাঙ্কগুলি। টান পড়ছে পুঁজিতে।

গয়না রফতানিকারীরা বলছেন, ঘাড়ে চেপে থাকা বিপুল অনাদায়ি ঋণের কারণে এমনিতেই ধার দেওয়ার বিধিনিষেধ কড়া করেছে ব্যাঙ্কগুলি। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীর কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে গয়না শিল্পের পক্ষে আরও মুশকিল হয়েছে ধার পাওয়া। এখন এই সমস্ত কিছুর উপরে আরও বাড়তি বিধিনিষেধ ঘুম কাড়ছে গয়না রফতানিকারীদের।

নোটবন্দি থেকে শুরু করে জিএসটি হয়ে নীরব কাণ্ড— সমস্যার এই লম্বা সুড়ঙ্গ শেষে আলোর দেখা পেতে দেশে উৎসবের মরসুমকে পাখির চোখ করেছিল গয়না শিল্প। আর জোড়া সমস্যা সামলেও ছন্দে ফিরতে রফতানিকারীদের নজর এখন পশ্চিমে বড়দিন আর ইংরেজি নববর্ষের বাজারের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন