Money Embezzlement

সেল-এর সমবায়ে তহবিল নয়ছয়ের অভিযোগ

বকেয়া টাকা ফেরতের দাবিতে সোমবার সমিতির সদস্যেরা কলকাতা দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থা সেল-এর কর্মী সমবায় সমিতির সদস্য প্রায় ১৫,০০০ জন। দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে টাকা জমাচ্ছেন তাঁরা। যার হাত ধরে সমবায়ের তহবিল ছুঁয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ বার ওই তহবিলই নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। জমা টাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। টাকা ফেরত না পেয়ে বহু সদস্য থানায় অভিযোগ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে মামলা আদালতে গড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ওই টাকা ফেরত মিলবে তো?

Advertisement

সমবায় সমিতির সেক্রেটারি জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী অবশ্য টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সকলেই আমানত ফেরত পাবেন। তবে সমস্ত দাবি মেটাতে বছর তিনেক লাগবে। জমা ২-৩ লক্ষ টাকা হলে একটু তাড়াতাড়ি মিলতে পারে।

বকেয়া টাকা ফেরতের দাবিতে সোমবার সমিতির সদস্যেরা কলকাতা দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের সকলেরই সেখানে স্থায়ী আমানত, মাসিক আয় প্রকল্প ও সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেল-এর
দুই অবসরপ্রাপ্ত মহিলা আধিকারিক এবং সমিতির সদস্য এস বালসারা ও কৃষ্ণা দত্তের অভিযোগ, “স্থায়ী আমানতে ১ কোটি টাকা করে রেখেছি। অক্টোবরে প্রকল্পের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’’ একই অভিযোগ শ্রেয়া গঙ্গোপাধ্যায়, গীতা ও আর রামচন্দ্রন, স্বপন সরকার-সহ আরও অনেকের। শ্রেয়া বলেন, “স্থায়ী আমানত থেকে প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকা সুদ পেতাম। বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা হত তা দিয়ে। নভেম্বর থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ। গত সপ্তাহে সামান্য কিছু দিয়েছে। চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছি।’’ স্বপন প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন মাসিক আয় প্রকল্পে। সুদ বন্ধ হওয়ায় সংসার চালাতে সমস্যা পড়েছেন।

Advertisement

সেল-এর কর্মী ছাড়াও অন্য বহু মানুষ সমিতির সদস্য। সূত্রের দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সমবায় বলে মানুষের কাছে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। বিশ্বাস করে অনেকে ঢেলে জমিয়েছেন টাকা। সদস্যদের মধ্যে গরিব মানুষও রয়েছেন। সুদের হার ও সুরক্ষায় আকৃষ্ট হয়ে পরিচারিকার কাজ করা শারীরিক ভাবে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন নীলিমা নস্কর ১ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন স্থায়ী আমানতে। সেল-এর অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী বেণু রায় বলেন, ‘‘ছেলের কিডনি অপারেশন করতে হবে। ৮ লক্ষ জমিয়েছিলাম। চিকিৎসা কী করে হবে ভেবে পাচ্ছি না।’’ নিরাপত্তাকর্মী তুষার পট্টনায়কের দাবি, “সমিতি ১০ লক্ষ টাকা করে তিনটি চেক দিয়েছিল। সবক’টি বাউন্স করেছে। এ জন্য সমিতির সেক্রেটারি, এমডি এবং সিইও-র বিরুদ্ধে, টাকা ফেরত না মেলায় পরিচালন পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’’

টাকা বকেয়া ফেলার কথা কবুল করেছেন জ্যোতির্ময়। তবে তাঁর দাবি,
‘‘করোনার সময় একসঙ্গে বহু সদস্য টাকা তুলে নেন। টাকা মেটাতে অনেক লগ্নি মেয়াদ শেষের আগেই ভাঙাতে হয়। এতে সমিতির বিপুল ক্ষতি হয়।
২০২৩ থেকে সুদ ও আসল মেটাতে দেরি হতে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে আরও সদস্য টাকা তুলতে থাকেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে কোনও আর্থিক সংস্থায় সকলে একসঙ্গে টাকা তুললে যেমন সমস্যা হয়, এখানেও হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেককে তা ফেরত দেব। একটি
হাসপাতাল-সহ অনেক সম্পত্তি আছে। সেগুলি বিক্রি করতে উদ্যোগী হয়েছি। আশা, বছর তিনেকে সকলের মূল টাকা ফেরত দিতে পারব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement