সুদ কমবে? নর্থ ব্লক তাকিয়ে মিন্ট রোডে

বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদী সরকার এখন জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখে। এক দিকে জানুয়ারি থেকে মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নীচে নেমেছে। অন্য দিকে বাজারে কেনাকাটা কমছে বহু পণ্যের। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০১:৫২
Share:

সুদ কমবে কি? প্রশ্ন এখন একটাই।

বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেই নরেন্দ্র মোদী সরকার এখন জোড়া চ্যালেঞ্জের মুখে। এক দিকে জানুয়ারি থেকে মার্চে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নীচে নেমেছে। অন্য দিকে বাজারে কেনাকাটা কমছে বহু পণ্যের।

Advertisement

এই জোড়া চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় দিল্লির নর্থ ব্লক এখন তাকিয়ে মুম্বইয়ের মিন্ট রোডের দিকে। নির্মলা সীতারামনের অর্থ মন্ত্রকের আশা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আবারও সুদের হার কমাবে। ফলে শিল্পের জন্য ঋণে সুদ কমবে। মাসিক কিস্তি সস্তা হলে বাজারে গাড়ি ও অন্যান্য দামি জিনিসের বিক্রি বাড়বে। তাতে ভর করে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। মূল্যবৃদ্ধি এখন নিয়ন্ত্রণে। ফলে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ কমাতে আপত্তি থাকার কথা নয়।

মঙ্গলবার থেকেই মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। দু’মাস অন্তর নীতির পর্যালোচনা করতে বসে তারা। এ বারের বৈঠকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক যদি সুদের হার কমায়, তা হলে ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলের-সহ টানা তিন বার সুদ কমানো হবে। আগের দু’বারই সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে কমানো হয়েছিল।

Advertisement

রেপো রেট (যে হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) এখন ৬ শতাংশে দাঁড়িয়ে। ফিকি, সিআইআইয়ের মতো বণিকসভা দাবি তুলেছে, সেই হার অবিলম্বে কমানো হোক। বণিকসভার অনেকের মতে, ২৫ বেসিস পয়েন্ট নয়, রেপো রেট ধাপে ধাপে ১০০ থেকে ১৫০ বেসিস পয়েন্ট কমা দরকার। কিছু দিন আগে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মন্তব্য করেছিলেন, ২৫ বা ৫০ বেসিস পয়েন্ট করেই সুদের হার কমবে, এমন কোনও কথা নেই। অনেকের মত, সুদের হার এবার ৩৫ বেসিস পয়েন্টও কমতে পারে।

অর্থ মন্ত্রক এবং বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। তার সুবিধা তুলতে হলে সুদের হার কমানো খুবই প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে উৎপাদনের খরচ কমবে। এ দেশের পণ্য বিদেশের বাজারেও প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারবে। বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমেরিকা ও চিন পরস্পরের পণ্যের উপরে কয়েক বিলিয়ন ডলারের শুল্ক চাপাচ্ছে। ফলে দেশের কিছু রফতানিকারী সংস্থার সামনে ওই দুই বাজারেই থাবা বসানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তার জন্য সুদ কম হওয়া দরকার।’’

বণিকসভার কর্তারা আবার বলছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেও তা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সুদের হারে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সুদ কমাটাও সমান জরুরি। তা হলেই শিল্প বা আমজনতার কেনাকাটার জন্য সুদের হার কমবে।

এর জন্য আবার সরকারের নীতির দিকেও আঙুল তুলছেন বণিকসভার কর্তারা। সিআইআইয়ের হবু প্রেসিডেন্ট উদয় কোটাক যুক্তি দিয়েছেন, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে ৭.৭ শতাংশের আশেপাশে সুদ দেওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে সরকারের রাজকোষ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। কিন্তু ব্যাঙ্কে সঞ্চয় কমছে। ফলে ব্যাঙ্কের পক্ষে সুদের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য যুক্তি, স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ সরকারি বন্ডে সুদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক হয়। এই আয়ের উপরে বয়স্ক ও গরিব মানুষ নির্ভরশীল। তবে বণিকসভার কর্তাদের যুক্তি, রেপো রেটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সুদের হার ঠিক হওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন