মূল্যবৃদ্ধির হার কমে আসা, ঊর্ধ্বমুখী শিল্পোৎপাদন, শেয়ার বাজারের চাঙ্গা ভাব— সব মিলিয়ে ভারতের অর্থনীতির হাল ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যেই সোমবার হুঁশিয়ারি দিল আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা এস অ্যান্ড পি। তাদের মতে, যে কোনও সময়ে আসা ‘আঘাত’ প্রমাণ করে দিতে পারে এই ‘তথাকথিত’ আর্থিক উন্নতি কতটা ঠুনকো। এখানে মূলত ভর্তুকির দায় বেড়ে যাওয়া ও সরকারি ঋণে বিপুল সুদের বোঝার মতো দুর্বলতার প্রতিই ইঙ্গিত করেছে এস অ্যান্ড পি। আর, এটাই ভারতের রেটিং বাড়ার পথে এখনও বাধা বলে সোমবার সতর্ক করে দিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে আর এক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ রেটিং না-বাড়ালেও আচমকাই ভারত সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ইতিবাচক’ করেছে। এতে ভারতের আন্তর্জাতিক ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা কিছুটা বাড়লেও তা নিয়ে যে সন্তুষ্টির অবকাশ নেই, এ দিন এসঅ্যান্ড পি-র মন্তব্য সেটাই স্পষ্ট করল। একটি রিপোর্টে সংস্থার বিশ্লেষক কিম ইং ট্যান বলেছেন: আর্থিক কারণে ও পণ্যমূল্য আচমকা বাড়লে সহজেই এই আঘাত আসতে পারে। যেমন: প্রথমত, বিশ্ব বাজারে সুদের হার বাড়লে ভারতের সরকারি ঋণ খাতে সুদের বোঝাও বাজেটের হিসাব ছাড়িয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, খাদ্য বা সারের দামে লাগামছাড়া বৃদ্ধি ভর্তুকির খরচকে এক লাফে অনেকটা টেনে তুলতে পারে।
ভারতে যেহেতু জাতীয় আয়ে সরকারের রাজস্বের ভাগ উন্নত দুনিয়ার তুলনায় বেশ কম, তাই এ ধরনের আঘাত এলে পরিকাঠামোয় লগ্নি ইত্যাদি খাতে সরকারি খরচ কাটছাঁট করতে বাধ্য হবে কেন্দ্র, যা অর্থনীতির চাকা দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলেই আশঙ্কা এস অ্যান্ড পি-র। এর উপর যদি বিলগ্নিকরণ খাতে ৪১ হাজার কোটি টাকা চলতি অর্থবর্ষে সরকারের ঘরে না-আসে, তা হলে বিপদ আরও বাড়বে বলেই ধারণা তাদের।
তবে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার সরকারি ব্যয় ২৫ শতাংশ বাড়ানোর যে-পরিকল্পনা নিয়েছে, তার প্রশংসা করেছে এস অ্যান্ড পি। ২০১১-’১২ থেকে তা বাড়ছিল মাত্র ৫.৪ শতাংশ হারে। কিন্তু এই পরিকল্পনা হোঁচট খেলেই রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে গিয়ে কোপ পড়বে সরকারি খরচে। বিলগ্নিকরণ খাতে আয় কম হলেই এই সমস্যা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা এস অ্যান্ড পি-র।