বিহারের টানা ২০ বছরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী নিতিন নবীনকে দলের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি করা হল। ছবি: সংগৃহীত।
বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি হলেন নিতিন নবীন। দলের সংসদীয় বোর্ড রবিবার বিহারের নেতা তথা সে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিতিনকে এই পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল। দেড় বছর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যসভার বিজেপি দলনেতা হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া জেপি নড্ডাকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি পদ ছাড়তে হবে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বিজেপি সূত্রের দাবি, কার্যকরী সভাপতি পদে নিতিনের নিয়োগ স্পষ্ট করে দিল যে, নড্ডার মেয়াদ আরও কিছুটা বাড়ল।
গত প্রায় ছ’বছর বিজেপিতে কার্যকরী সভাপতি পদে কেউ ছিলেন না। তার আগে ২০১৯ সালের ১৭ জুন থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত নড্ডা নিজেই ছিলেন কার্যকরী সভাপতি। কারণ তৎকালীন সভাপতি অমিত শাহ ২০১৯ সালের মে মাসে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতিত্ব একসঙ্গে সামলানো কঠিন বলে নড্ডাকে তাঁর অধীনে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছিল। আট মাস পরে অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শাহ সভাপতিত্ব থেকে সরেন এবং নড্ডাকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ঘোষণা করা হয়। এ বার নড্ডার অধীনে নিতিন কার্যকরী সভাপতি পদ পাওয়ায় অচিরেই সভাপতিত্বে তাঁর উত্থান নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যকরী সভাপতি পদে কাউকে রাখা বাধ্যতামূলক নয়। সভাপতির দায়দায়িত্ব বা কাজের চাপ কোনও কারণে লঘু করার প্রয়োজন পড়লে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা হয়। নড্ডা সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। সভাপতি হওয়ার পরে তিনি মন্ত্রিত্বে আর থাকেননি। কিন্তু ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে নড্ডাকে আবার মন্ত্রিসভায় ফেরানো হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যসভায় তাঁকে বিজেপির দলনেতাও করা হয়েছে। একসঙ্গে এত রকম দায়িত্ব বিজেপিতে সাধারণত কাউকে দেওয়া হয় না। তাই নড্ডা ২০২৪ সালে মন্ত্রিত্বে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সভাপতি পদে তাঁর উত্তরসূরির নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে নড্ডাকে সরানোর পথে বিজেপি হাঁটেনি। এ বার নিতিনকে কার্যকরী সভাপতি পদে বসিয়ে বিজেপি সংসদীয় বোর্ড বুঝিয়ে দিল, সভাপতি পদে নড্ডা এখনও কিছু দিন থাকছেন। প্রথমে শাহের অধীনে কার্যকরী সভাপতি হিসাবে কাজ করার পরে নড্ডা যে ভাবে সভাপতি হয়েছিলেন, নিতিনও সে ভাবেই কিছু দিন পরে সভাপতি হবেন কি না, সে জল্পনা অবশ্য রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
৪৫ বছরের নিতিন ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিহার প্রদেশ যুব মোর্চার সভাপতি ছিলেন। তবে নির্বাচনী রাজনীতিতে রয়েছেন অনেক আগে থেকেই ২০০৬ সাল থেকে তিনি বিধায়ক হিসাবে একটানা বিহার বিধানসভায় রয়েছেন। প্রথম বার জিতেছিলেন পটনা পশ্চিম বিধানসভা আসন থেকে। তার পর থেকে একটানা চার বার বাঁকিপুর আসন থেকে জিতছেন। ২০২১ সাল থেকে বিহারে মন্ত্রিত্বও সামলাচ্ছেন। এই মুহূর্তে তাঁর হাতে বিহারের সড়ক নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর রয়েছে। দলের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি হওয়ার পরে তিনি বিহারের মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চলেছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বিহারের মন্ত্রী হিসাবে এবং ছত্তীসগঢ়ে দলের নির্বাচন প্রভারী হিসাবে নিতিনের কাজ তথা সাফল্য নেতৃত্বের নজরে পড়েছিল। দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বে তাঁর উত্থানে সে সব সহায়ক হয়েছে বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি। এত কম বয়সে বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি পদে আগে কেউ বসেননি। বিজেপির বর্তমান সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এ বার যে পরবর্তী প্রজন্মকে নেতৃত্বে তুলে আনছেন, নিতিনের এই উত্থান তারই প্রমাণ বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা।