নিম্নচাপ কাটায় স্বস্তি বাজারে

একটি কাঁচামিঠে স্বাদের সপ্তাহ পার করলেন ভারতের লগ্নিকারীরা। প্রথম দু’দিন গভীর নিম্নচাপ। বড় রকমের হতাশা গ্রাস করে লগ্নিকারীদের। আশার কথা, এই নিম্নচাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পট পরিবর্তন শুরু হল বুধবার থেকে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

একটি কাঁচামিঠে স্বাদের সপ্তাহ পার করলেন ভারতের লগ্নিকারীরা। প্রথম দু’দিন গভীর নিম্নচাপ। বড় রকমের হতাশা গ্রাস করে লগ্নিকারীদের। আশার কথা, এই নিম্নচাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পট পরিবর্তন শুরু হল বুধবার থেকে। প্রথম দু’দিন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করার পরে শুক্রবার বড় ছক্কা হাঁকায় সেনসেক্স। ওই দিন একলপ্তে বাজার ওঠে ৪০৯ পয়েন্ট। সেনসেক্স আবার ২৮ হাজার পার করায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন লগ্নিকারীরা। শুক্রবার শেষ বেলায় বাজার বন্ধের সময়ে মুম্বই সূচক এসে দাঁড়িয়েছিল ২৮,১১৫ অঙ্কে। মাত্র তিন দিনে বাজার ৬০০ পয়েন্ট উঠে যাওয়ায় বেশ কিছু ইকুইটি ফান্ডের ঝুঁকে পড়া ন্যাভ আবার শক্তি ফিরে পায়।

Advertisement

বাজার এতটা উঠলেও টাকার দামের পতন কিন্তু রোধ করা যায়নি। শুক্রবার প্রতি ডলারের দাম বেড়ে পৌঁছয় ৬৪.১৩ টাকায়। আমদানিকারীদের জন্য এটি আদৌ শুভ সংবাদ নয়। পতন অব্যাহত সোনার দামেও। বস্তুত ডলার শক্তিশালী হলে সোনার দামে পতনের আশঙ্কা থেকেই যায়। দাম আরও ৫০০/১০০০ টাকা কমলে অল্প অল্প করে সোনা অথবা গোল্ড ইটিএফ কেনার কথা ভাবা যেতে পারে। আর এক দফা কমানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। শিল্প তথা সাধারণ মানুষের জন্য এটি একটি ভাল খবর।

আরও বেশ কিছু কোম্পানির আর্থিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। ভয়-মিশ্রিত আশার বাজারে তাক লাগানো ফলাফল প্রকাশ করেছে মারুতি-সুজুকি। গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতির জন্য একটি ভাল ইঙ্গিত। অন্য দিকে মে মাসের তুলনায় জুন মাসে মূল পরিকাঠামো শিল্পে মন্থরতার পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। মে মাসে ৪.৪ শতাংশের জায়গায় জুন মাসে পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ হারে। নেমে আসা এই হার সুদ কমানোর ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে ইন্ধন জোগাতে পারে। আরবিআই তার ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে মঙ্গলবার।

Advertisement

এ বার তাকানো যাক প্রথম ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) ফলাফলের দিকে। কিছু কোম্পানি ভাল ফল প্রকাশ করলেও এখনও পর্যন্ত হতাশ করেছে বেশির ভাগ সংস্থা। বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খারাপ ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের বহর বেড়েছে। লাভ নেমে এসেছে অনেকটাই। অনুৎপাদক সম্পদ বেড়েছে অনেক বেসরকারি ব্যাঙ্কেরও। তবে এদের বেশির ভাগের লাভও কিন্তু বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ১.৮০ লক্ষ কোটি টাকার প্রয়োজন। এর মধ্যে সরকার দেবে ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা ব্যাঙ্কগুলিকে সংগ্রহ করতে হবে বাজার থেকে। চলতি আর্থিক বছরে সরকার ব্যাঙ্কগুলিকে ২৫,০০০ কোটি টাকার মূলধন জোগাবে। এই খবরে কিছুটা চাঙ্গা হয় ঝিমিয়ে পড়া সরকারি ব্যাঙ্কগুলির শেয়ার।

গত সপ্তাহে ভাল আর্থিক ফলাফলের তালিকায় ছিল মারুতি-সুজুকি, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, আইটিসি, ডাবর ইন্ডিয়া ইত্যাদি কোম্পানি। তুলনায় খারাপ ফলাফলের তালিকা বেশ বড়। এই তালিকায় আছে এনটিপিসি, এক্সাইড, কোটাক ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, নেসলে, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক ইত্যাদি। এক নজরে ফলাফল দেখে নেওয়া যেতে পারে সঙ্গের সারণিতে।

বিক্রি ৭ শতাংশ কমলেও আইটিসি-র নিট মুনাফা ৩.৬ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ২,২৬৫ কোটি টাকায়। ড. রেড্ডিজ ল্যাব ৩,৭৫৮ কোটি টাকা বিক্রিতে ভর করে ঘরে তুলেছে ৬২৬ কোটি টাকার নিট মুনাফা।

তবে মোটের উপর আর্থিক ফলাফল খারাপই বলতে হবে। আগামী দু’সপ্তাহে প্রকাশিত ফলাফলে যদি উন্নতি না-দেখা যায়, তবে তা চিন্তায় রাখবে বাজারকে। গত সপ্তাহের ভাল খবর হল, জুলাই মাসে গাড়ি বিক্রির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। সঙ্গের সারণির পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট। গাড়ি উৎপাদন বাড়লে চাহিদা বাড়ে নানা কাঁচামালের। উপকৃত হয় বিভিন্ন শিল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন