Reserve bank of India

চাঙ্গা বাজারের চোখ ভারতের সুদ বৃদ্ধিতে

আমেরিকায় চড়া হারে সুদের হার না বাড়ানোর আশা এবং তেজী বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ার বাজার ভারতীয় লগ্নিকারীদের শেয়ার কেনায় উৎসাহ জুগিয়েছে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫০
Share:

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফাইল চিত্র।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা আট দিন ধরে ‘বুল-দৌড়’ দেখল ভারতীয় শেয়ার বাজার। সেনসেক্স বেড়েছে মোট ২১৩৯ পয়েন্ট। প্রথমবার পেরিয়ে গিয়েছে ৬৩ হাজারের মাইলফলক। ৬১,১৪৪.৮৪ থেকে উঠেছে ৬৩,২৮৪.১৯ অঙ্কে। আট দিনের মধ্যে টানা ছ’দিনই গড়েছে নতুন নজির। ৬১ হাজারের ঘরে থেকেছে দু’দিন, ৬২ হাজারের ঘরে চার দিন আর ৬৩ হাজারে বাকি দু’দিন। সূচকের এই দৌড়ে শেষ হয় শুক্রবার। উঁচু বাজারে লগ্নিকারীদের মুনাফা ঘরে তোলার হিড়িকে ৪১৬ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স সপ্তাহ শেষ করে ৬২,৮৬৮.৫০ অঙ্কে। নতুন নজির গড়েছে আর এক সূচক নিফ্‌টিও। সপ্তাহ শেষে তার পা ছিল ১৯ হাজারের দোরগোড়ায় (১৮,৯৬৯)।

Advertisement

আমেরিকায় চড়া হারে সুদের হার না বাড়ানোর আশা এবং তেজী বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ার বাজার ভারতীয় লগ্নিকারীদের শেয়ার কেনায় উৎসাহ জুগিয়েছে। বাজার আরও তেতে যায় আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সুদ সম্পর্কিত মন্তব্যে। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও অনেক উঁচুতে ঠিকই। তবে অর্থনীতির স্বার্থে সুদ আর এখন খুব চড়া হারে বাড়ানো ঠিক হবে না। উত্থানে বাড়তি জ্বালানি ঢালে, দেশে অর্থনীতি সংক্রান্ত বেশ কিছু ভাল খবর, মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে মোটা লগ্নি, বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির নাগাড়ে বিনিয়োগ।

এই অবস্থায় শেয়ার বাজারমহলের চোখ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির দিকে। আশা, এ বার ভারতেও সুদের হার কম হারে বাড়ানো হবে। আশা পূর্ণ হলে লগ্নিকারীরা আরও উৎসাহিত হয়ে পুঁজি ঢালতে নামতে পারেন। ফের নজির গড়তে পারে সূচক। প্রযুক্তি এবং নির্মাণ শিল্পে লোক ছাঁটাই সত্ত্বেও নভেম্বরে আমেরিকায় নতুন নিয়োগ হয়েছে ২.৬৩ লক্ষ পদে। এই তথ্যও শক্তি জোগাবে ভারতের বাজারকে।

Advertisement

গত সপ্তাহে দেশের যে খবরগুলি অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে লগ্নিকারীদের মনে আশা জুগিয়েছে, সেগুলি ছিল—

• নভেম্বরে ১১% জিএসটি আদায় বৃদ্ধি। সংগ্রহের মোট পরিমাণ ছিল ১,৪৫,৮৬৭ কোটি টাকা। বাজারে অবশ্য প্রত্যাশা ছিল, উৎসবের মরসুমে সংগ্রহ ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াবে। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

• গত মাসেই ৩১.৫% গাড়ি বিক্রি বৃদ্ধি। বিকিয়েছে মোট ৩,২২,৮৬১টি। ঋণে সুদের হার বাড়লেও ক্রেতাদের গাড়ি কেনার আগ্রহ উৎসাহজনক। এই নিয়ে টানা ছ’মাস বিক্রি ৩ লক্ষের উপরে রইল। সংস্থাগুলির হাতে যা বকেয়া বরাত রয়েছে, তা দেখে মনে হয় কয়েক মাস এই ধারা জারি থাকবে।

• চড়া দাম সত্ত্বেও ডিজ়েল এবং পেট্রলের যথাক্রমে ১১.৭% এবং ২৭.৬% বিক্রি বৃদ্ধি।

• বিদ্যুতের ১৩.৬% চাহিদা বৃদ্ধি।

• বিমান যাত্রীর সংখ্যা কোভিডের আগের সময়ের কাছাকাছিপৌঁছে যাওয়া।

• দেশে টানা তিন সপ্তাহ বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার বৃদ্ধি। ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে তহবিল পৌঁছেছে ৫৫,০০০ কোটি ডলারে।

• নভেম্বরে পিএমআই শিল্পোৎপাদন সূচকের বেড়ে ৫৭.৭-তে পৌঁছনো। যা তিন মাসের মধ্যে সব থেকে উঁচু। অক্টোবরে এই সূচক ছিল ৫৫.৩।

তবে নেতিবাচক খবরও কিছু ছিল। উত্থানের তোড়ে বাজার সেগুলিকে পাশ কাটিয়েছে। অন্য অনেক সময়ই সূচকের হুড়মুড়িয়ে নামার পিছনে মূল কারণ হয়ে ওঠে সেই সব বিষয়। এগুলি হল—

• বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৬.৩ শতাংশে নেমে আসা। আগের বছর ওই সময় জিডিপি বেড়েছিল ছিল ৮.৪% হারে।

• অক্টোবরে মূল আটটি পরিকাঠামো শিল্পে ফের ঝিমিয়ে পড়া উৎপাদন। তা বেড়েছে মাত্র ০.১% হারে। আগের বছর এই মাসে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৭% এবং ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে ৭.৮%।

• নভেম্বরে সারা দেশে বেকারত্বের হারের ৮% ছুঁয়ে ফেলা, যা তিন মাসে সর্বোচ্চ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন