সপ্তাহ শুরু হয়েছিল ইন্দ্রপতনে। কেন্দ্রের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কথার তেতো লড়াইয়ের মধ্যেই সোমবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন উর্জিত পটেল। ধাক্কা খেয়েছিল শেয়ার বাজার। কিন্তু দ্রুত নতুন গভর্নর হিসেবে পোড়খাওয়া আমলা শক্তিকান্ত দাসের নাম ঘোষণা এবং লগ্নিকারীদের আস্থা জোগাতে তাঁর চটজলদি সাংবাদিক সম্মেলন সম্ভবত আশ্বস্ত করেছে বাজারকে। তাই উত্থানেই নতুন গভর্নরকে স্বাগত জানিয়েছে সূচক।
আর একটি বিষয় যেন বিপরীত দুই অভিমুখ থেকে নাড়া দিচ্ছে বাজারকে। এক দিকে, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, তত চাপা অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বাজারে। পরবর্তী সরকার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে কি না, তার স্থিতিশীলতা কেমন হবে, কেমনই বা হবে তাদের আর্থিক নীতি— এই সব বিষয় স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বাজারের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ থাকবেই। কিন্তু তেমনই বাজারের আশা, ভোটের মুখে আমজনতার মন পেতে আগামী কয়েক মাস দেদার খরচ করবে মোদী সরকার। জোর দেবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে। তাতে অর্থনীতির চাকায় গতি বাড়বে। বাড়বে টাকার জোগান, কর্মসংস্থানও।
তবে এই দেদার খরচে রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হলে, মুখভার হতে পারে বাজারের। ঠিক যেমন এখন লগ্নিকারীদের চিন্তার কারণ বেড়ে চলা বাণিজ্য ঘাটতি। নভেম্বরে রফতানি সামান্য বাড়লেও, আমদানি ৪.৩১% বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১,৬৬৭ কোটি ডলার। বাড়ছে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন ঘাটতিও। কেন্দ্র কোন পথে এই দুই ঘাটতি সামলায়, সে দিকেও চোখ বাজারের।
সব মিলিয়ে, ফেলে আসা সপ্তাহ ছিল খবর ও উত্তেজনায় ঠাসা। সপ্তাহের প্রথম দিনে সেনসেক্স পড়েছিল ৭১৪ পয়েন্ট। নিফটি ২০৫। অথচ মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলে বিজেপির বিপর্যয় হলেও ১৯০ অঙ্ক উঠে ৩৫ হাজারের ঘরে ফেরে সেনসেক্স। নতুন গভর্নরের নাম ঘোষণা হতেই বুধবার বড় উত্থানের সাক্ষ্মী থাকে বাজার। সেনসেক্স ওঠে ৬২৯ পয়েন্ট। নিফটি ১৮৮।
বাজারের আশা, এ বার কেন্দ্র-রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মন কষাকষি কমবে। বাড়বে নগদ জোগান। শিল্পোৎপাদন ও মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে জোড়া সুখবরেও খুশি লগ্নিকারীরা। নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২.৩৩ শতাংশে। ১৭ মাসে সবচেয়ে কম। অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৮.১%। কমেছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও। নভেম্বরে তা তিন মাসে সর্বনিম্ন।
(মতামত ব্যক্তিগত)
বাজারকে ঠেলে তুলতে সঙ্গত দিয়েছে বিশ্ব বাজারও। ডলার অবশ্য একটু বেড়েছে। চিন্তা থাকছে ফের মাথা তুলতে শুরু করা তেলের দর নিয়েও।