স্বাধীনতা দিবসের ঠিক প্রাক্কালে সেনসেক্সের ধ্বজা উড়েছে তরতরিয়ে। শুক্রবার এক দিনে মুম্বই বাজারের এই সূচক উঠেছে ৫১৮ পয়েন্ট। ২৭ হাজারে পিছলে যাওয়ার পরে আবার এক লাফে ঢুকে পড়েছে ২৮ হাজারের ঘরে। শুক্রবার নিফটিও বেড়েছে ১৬৩ অঙ্ক। আবার পার করেছে ৮৫০০-র সীমা। চিনের মুদ্রা ইউয়ানের অবমূল্যায়নের ধাক্কায় তলিয়ে যাওয়া সূচক কোন জাদুতে আবার এক লাফে এতটা উঠে এল? বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে—করলা, নিমপাতার পর হঠাৎই পাতে পড়েছে মণ্ডা-মিঠাই। ক্ষীণ হলেও আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছে শেয়ার বাজার। বৃহস্পতিবার শেষ বেলা থেকেই আসতে শুরু করছিল ভাল খবর। পরপর কয়েকটি ভাল খবরে জোয়ার আসে শুক্রবার। সপ্তাহ শেষে স্বস্তি ফেরে লগ্নিকারীদের মনে। এক নজরে এ বার তাকানো যাক বাজারের কাছে স্বস্তি এবং আশঙ্কার কারণগুলির দিকে।
ভাল খবরের মধ্যে যেগুলি উল্লেখ করার মতো, সেই তালিকায় রয়েছে:
• খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার জুলাই মাসে নেমেছে ৩.৭৮ শতাংশে। বাজারের কাছে এটি একটি বড় সুখবর। জুন মাসে এই হার ছিল ৫.৪০% এবং গত বছর জুলাই মাসে ক্রেতার মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা এই হার ছিল ৭.৩৯%।
• পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার জুলাই মাসে তলিয়ে গিয়েছে শূন্যের ৪.০৫ শতাংশ নীচে, .যার অর্থ দাম কমেছে সরাসরি ৪.০৫%। একই সঙ্গে খুচরো এবং পাইকারি সূচকের পতনে জোরালো আশা জেগেছে সুদ কমা নিয়ে। অনেকে এমনও ভাবছেন, পরবর্তী ঋণনীতি পর্যালোচনার নির্ধারিত দিন ২৯ সেপ্টেম্বরের আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে ভাবছেন, ২৫ বেসিস পয়েন্ট নয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ বার এক দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমাতে পারে।
• মে মাসে ২.৫ শতাংশের পরে জুন মাসে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার পৌছেছে ৩.৮ শতাংশে। বাজারের কাছে এটিও একটি উৎসাহ জাগানো খবর। মোদী-জেটলির কাছে প্রত্যেকটি পরিসংখ্যান বেশ সুখদায়ক।
• এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে পরোক্ষ কর সংগ্রহ বেড়েছে ৩৭%। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আদায় হয়েছে ২.১ লক্ষ কোটি টাকা। শিল্পে যে প্রাণ ফিরছে, এই তথ্য তা সমর্থন করে।
• খারাপ ঋণের বোঝায় নুয়ে পড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক হাল ফেরাতে কেন্দ্রের সাত দফা কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছে শেয়ার বাজার। ব্যাঙ্কগুলিতে কেন্দ্র এ বছর ২০,০৮৮ কোটি টাকা ঢালবে, এই খবর শক্তি জুগিয়েছে ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলিকে।
• দেশের ইস্পাত শিল্পকে সস্তা ইস্পাত আমদানির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে দু’মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বার বাড়ানো হয়েছে ইস্পাতের উপর আমদানি শুল্ক। এ বার বৃদ্ধির হার ২.৫%। এতে উপকৃত হবে দেশি ইস্পাত সংস্থাগুলি।
• বিশ্ব বাজারে আরও নেমেছে অশোধিত তেলের দাম। ফলে কমবে আমদানি-খরচ।
• দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম ফের কমেছে। ভর্তুকির বহর কমে আসায় ত্রৈমাসিক লাভ বেড়েছে ওএনজিসির।
• বিলগ্নিকরণের পথে ধীর কিন্তু স্থির গতিতে এগোচ্ছে কেন্দ্র। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোল ইন্ডিয়ার ১০% শেয়ার পাবলিক ইস্যুর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। বর্তমান বাজার দরে এই পথে সংগৃহীত হতে পারে ২৩,৪০০ কোটি টাকা।
এতগুলি ভাল খবর একসঙ্গে পাওয়ায় বাজার হঠাৎই তেতে ওঠে। তার মানে অবশ্য এই নয়, অর্থনীতিতে আপাতত কোনও সমস্যা নেই। এ বার তাই দেখে নেব মন্দের দিকটাও:
১) জুলাই মাসে রফতানি কমেছে ১০.৩%। এই নিয়ে পরপর ৮ মাস রফতানি কমলো। অন্য দিকে আমদানিও অবশ্য কমেছে ১০.২৮%— মূলত তেলের দাম কমার জন্য।
২) টাকায় ডলারের দাম পৌঁছেছে ৬৫ টাকায়। এতে আমদানি বিল বাড়বে। বিপাকে পড়বে আমদানি নির্ভর শিল্প।
৩) ১৪ অগস্ট শেষ হয়েছে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসের ফলাফল প্রকাশের পালা। শেষ কয়েক দিনে ভালর থেকে যেন মন্দ ফলাফলই বেশি ছিল। স্টেট ব্যাঙ্কের ফলাফল মোটের উপর মন্দ না-হলেও বেশ হতাশ করা ফলাফল জানিয়েছে স্টিল অথরিটি, এনটিপিসি, অয়েল ইন্ডিয়া ইত্যাদির মতো বড় মাপের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। অন্য দিকে ভাল ফলাফলের তালিকায় ছিল অয়েল ইন্ডিয়া, জেট এয়ারওয়েজ, ওএনজিসি, স্টেট ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক ইত্যাদি সংস্থা।
৪) পশ্চিমবঙ্গ বানভাসি হলেও দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কিন্তু বৃষ্টির ঘাটতি আছে।
সব মিলিয়ে দেখলে, ভালর দিকে যেন পাল্লাটা একটু বেশি ঝুঁকে। এর উপর সুদ কমলে বাজার আরও একটু শক্তি পাবে। তবে ঋণে সুদ কমলে জমাতেও তা কমবে। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে সাধারণ মানুষকে। উপযুক্ত জায়গায় লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে হবে সুদ আরও কমার আগেই। শেয়ার বাজার ইউয়ানের পতনের বড় ধাক্কাটা মনে হয় সামলে উঠেছে। এখন গুটিগুটি উঠলে ভাল লাগবে। তবে এখনই সম্ভবত বড় উত্থানের সম্ভাবনা নেই।