Budget 2025

সঞ্চয়ের অভ্যাস কমবে, তৈরি হবে না ভবিষ্যতের তহবিল! শুরু বাজেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আলোচনা

আগামী অর্থবর্ষ থেকে আয়করে বিপুল ছাড় মিলবে। বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে শূন্যে নামানো হয়েছে কর। পুরোটাই নতুন কর কাঠামোতে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:১৩
Share:

১৩৭ কোটি মানুষ করের আওতায় আসেন না। —প্রতীকী চিত্র।

বাজেট পেশের পরে দু’সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। আয়কর খাতের প্রাপ্তি নিয়ে এখনও উৎফুল্ল মধ্যবিত্ত। এ বারের প্রাপ্তি এতটাই প্রত্যাশা ছাপানো ছিল যে, না পাওয়ার দিকগুলি নিয়ে এখনও চর্চা সে ভাবে শুরু হয়নি। বিশেষজ্ঞ মহলেও এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কম। এ বার কিন্তু সেই দিকগুলিতে আলো ফেলার সময় এসেছে।

আগামী অর্থবর্ষ থেকে আয়করে বিপুল ছাড় মিলবে। বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে শূন্যে নামানো হয়েছে কর। পুরোটাই নতুন কর কাঠামোতে। ফলে পুরনো কাঠামোয় আদৌ কত জন থাকবেন সে বিষয়টি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে নতুন কাঠামোয় চলে এলে পুরনোতে যে একগুচ্ছ ছাড় পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই মিলবে না। ফলে আয়কর আইনে ছাড়ের কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোনও মূল্য থাকবে না। কিন্তু আর্থিক ক্ষেত্রে তার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে একটু আলোচনার প্রয়োজন আছে—

  • পুরনো কাঠামোয় ৮০সি ধারায় নানা খাতে বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নিতে ছাড় মেলে। নতুন প্রকল্পে তার আর প্রয়োজন থাকবে না। এর ফলে মানুষের সঞ্চয়ের অভ্যাস কমবে। গড়ে উঠবে না ভবিষ্যতের তহবিল। হাতে বেশি নগদ থাকায় খরচের প্রবণতা বাড়বে। যা পণ্যের চাহিদাকে বাড়াবে। একই সঙ্গে ঠেলে তুলবে মূল্যবৃদ্ধিকে।
  • একই কারণে জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমা কেনার আগ্রহ একটু হলেও কমবে। বিমার প্রিমিয়ামে জিএসটি এখনও কমেনি। তার উপরে প্রিমিয়ামে কর ছাড় না মিললে স্বাস্থ্য বিমা (৮০ডি) তো বটেই, জীবন বিমা (৮০সি) কেনার ব্যাপারেও আগ্রহ কমবে মানুষের। তবে করমুক্ত আয় ৭ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ লক্ষ টাকা হওয়ার ফলে যাঁরা করের আওতার বাইরে চলে যাবেন, তাঁদের অবশ্য প্রিমিয়ামের কর ছাড় নিয়ে ভাবতে হবে না।
  • দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দানের উপর ৮০জি ধারায় কর ছাড় পাওয়া যায় শুধু পুরনো কাঠামোতে। প্রায় সবাই নতুনে চলে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষে অর্থ সংগ্রহ কিছুটা হলেও কঠিন হবে।
  • আয়করে ছাড় দিতে গিয়ে আগামী অর্থবর্ষ থেকে সরকারকে বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার আয় ছাড়তে হবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, দেশের ৩ কোটিরও কম মানুষের জন্যে এতটা আয় হারানো কতটা যুক্তিযুক্ত? ১৩৭ কোটি মানুষ করের আওতায় আসেন না। তাঁরা বাজেট থেকে কী পেলেন? আয়করে ছাড় কিছুটা কম দিয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তো খানিকটা সুবিধা দেওয়া যেতে পারত, যা দেশের সর্বশ্রেণির মানুষ ভোগ করতে পারেন। যেমন, প্রবীণদের ক্ষেত্রে ফেরানো যেত ট্রেনের ভাড়ায় ছাড়। পৃথিবীর বিভিন্ন কল্যাণকর রাষ্ট্রে প্রবীণদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়। দেশে আবশ্যিক এবং আগে প্রচলিত একটি সুবিধা তুলে দেওয়া হয়েছে, যা এ বারও পুনর্বহাল করা হল না।

বাজেটে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র যে ১ লক্ষ কোটি টাকার আয় ত্যাগ করল, তা তাদের অন্য কোনও ভাবে পুষিয়ে নিতে হবে। সেই খরচ কিন্তু গুনতে হবে সব শ্রেণির মানুষকেই।

বহু মানুষ আগামী বছর করের আওতার বাইরে চলে যাবেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁদের যে আয় আসে, তার উপরে উৎসে যাতে কর কাটা না হয় তার জন্য সময়ে ফর্ম ১৫জি বা ১৫এইচ দাখিল করতে হবে। যাঁদের আয় নতুন করমুক্ত সীমা ৪ লক্ষের কম হবে তাঁরা অন্য প্রয়োজন না থাকলে আয়কর রিটার্ন না-ও দিতে পারেন। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে আয় যা-ই হোক, রিটার্ন জা বাধ্যতামূলক। সে সব ক্ষেত্র ছাড়া যাঁদের আয় ৪-১২ লক্ষের মধ্যে, তাঁদের রিটার্ন দাখিল করা উচিত।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন