শুরুটা হোক অল্প করেই

রোজগার অল্প, স্বপ্ন বড়। তবে বয়স যে-হেতু কম, তাই হাতে সময় রয়েছে বেশি। দেরি না-করে সঞ্চয় শুরু করুন সাধ্যমতো। স্বপ্নের কাছাকাছি পা রাখা নিশ্চয়ই সম্ভব। পরামর্শ দিচ্ছেন শৈবাল বিশ্বাসসম্রাট জানিয়েছেন, তিনি সদ্য একটি দোকানে কাজ শুরু করেছেন। বেতন মাসে ১৩,০০০ টাকা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:১২
Share:

পরিচিতি: সম্রাট (২৬)

Advertisement

কী করেন: পেশা শুরু করেছেন

পরিবার: মা, বাবা, বোনকে নিয়ে কলকাতার উপকণ্ঠে নিজেদের বাড়িতে থাকেন

Advertisement

লক্ষ্য: এক-দেড় বছর পরে বোনের বিয়ে। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার খরচ নিশ্চিত করা। শক্তিশালী সঞ্চয়। বাড়ি তৈরি। দু’বছরে এক বার বেড়তে যাওয়া

শীতের ছুটি কাটিয়ে নতুন বছরের কর্মব্যস্ততার মধ্যে আমরা অনেকেই ঢুকে পড়েছি। এমন অনেক পেশা রয়েছে, ছুটির মেজাজের থেকে যার দূরত্ব অনেক। এর বড় অংশ অসংগঠিত ক্ষেত্র। বাকি পৃথিবীর ছুটির মরসুমে কাজ আদতে বাড়ে ওই সব পেশায়। তা হলে কি এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে স্বপ্ন দেখা যাবে না? গড়া যাবে না শক্তিশালী সঞ্চয়? অবশ্যই যাবে। তবে হ্যাঁ, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে দরকার নিষ্ঠা ও ধৈর্য। এমন এক পরিবারের আর্থিক পরিকল্পনা নিয়েই আজ আলোচনা করব।

সম্রাট জানিয়েছেন, তিনি সদ্য একটি দোকানে কাজ শুরু করেছেন। বেতন মাসে ১৩,০০০ টাকা। তাঁর বাবা মৎস্যজীবী। মাসে ৭০০০ টাকা উপার্জন। নিজেদের বাড়ি এবং সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৪০,০০০ টাকা ছাড়া পরিবারের আর কোনও সঞ্চয় কিংবা সম্পদ নেই। এখনও শুরু হয়নি কোনও লগ্নি বা বিমা। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইতিমধ্যে সম্রাট আয় করা শুরু করেছেন। তিনি অবশ্যই সংসার খরচের আংশিক দায়িত্ব নেবেন। শুরু করবেন পরিকল্পনামাফিক সঞ্চয়। যেহেতু শুরুতেই তাঁর পক্ষে খুব বেশি টাকা সঞ্চয় বা লগ্নি করা সম্ভব নয়, সে কারণেই তাঁকে কিছু পরামর্শ দেব। আশা করি তাঁর মতো অনেকেই উপকৃত হবেন।

খরচে রাশ

ভবিষ্যতের জন্য বড় তহবিল তৈরি করতে হলে শুরুতেই দরকার পরিকল্পনা। আর রোজগার কম হলে এর সঙ্গে যোগ করতে হবে খরচে রাশ টানা, মিতব্যয়। একটি পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা সহজ হতে পারে। রোজের খরচ একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন। মাসের শেষে খুঁটিয়ে হিসেব কষুন। যে সমস্ত খরচকে আপনি অত্যাবশ্যক বলে মনে করছেন না, সেগুলি পরের মাস থেকে বাদ দিন। মাস মাইনের অন্তত ৫০% সঞ্চয় করতে হবে। তা দিয়েই গড়ে তুলতে হবে ভবিষ্যতের তহবিল।

আপৎকালীন তহবিল

ভয় দেখাচ্ছি না। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা সব সময়ে মাথায় রেখে চলা ভাল। হঠাৎ করে কোনও বিপদ বা সমস্যা তৈরি হলে মুহূর্তের মধ্যে খরচ হয়ে যেতে পারে দীর্ঘ দিনের সঞ্চয়। তাই শুরুতেই এই ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য আলাদা একটি তহবিল তৈরি করতে হবে। সম্রাটকে আমার পরামর্শ, সেভিংস অ্যাকাউন্টে যে তহবিল রয়েছে তার থেকে অন্তত অর্ধেক একটি লিকুইড ফান্ডে রাখুন। আর প্রত্যেক মাসে ২০০০ টাকা করে জমা করুন ওই ফান্ডেই। এ ভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য বড় একটি তহবিল তৈরি হতে পারে। লিকুইড ফান্ড থেকে এক-দু’দিনের মধ্যে টাকা তোলা যায়। রিটার্ন দেয় অন্তত ৫%, যা সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে বেশি।

লক্ষ্য নির্ধারণ

এর পরে সম্রাটের লক্ষ্যগুলিকে স্বল্পমেয়াদ, মধ্যমেয়াদ এবং দীর্ঘমেয়াদের ভিত্তিতে ভাগ করতে হবে। তিন বছরের মধ্যে যে সমস্ত লক্ষ্যপূরণ করতে হবে, সেগুলিকে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিতে পারেন। চার থেকে সাত বছরের পরিকল্পনাগুলি মধ্যমেয়াদি এবং তার বেশি হলে দীর্ঘমেয়াদি। আর্থিক পরিকল্পনার তৈরির ক্ষেত্রে এই মেয়াদগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক ভাবে সঞ্চয় শুরু করতে হবে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে।

বছর দেড়েকের মধ্যে সম্রাটের বোনের বিয়ে। আপাতত তার জন্যই তহবিল তৈরি করতে হবে। মাসে যদি ৭৫০০ টাকা মতো সঞ্চয় করা সম্ভব হয়, তা হলে তার মধ্যে ২০০০ টাকা রাখতে হবে আপৎকালীন তহবিলে। এই নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। বাকি ৫৫০০ টাকা প্রত্যেক মাসে জমা করতে হবে স্বল্পমেয়াদি কোনও ভাল ডেট ফান্ড কিংবা রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে। সে ক্ষেত্রে বোনের বিয়ের আগে মোটামুটি ভাল অঙ্কের একটি তহবিল তৈরি হতে পারে।

বোনের বিয়ের পরে ওই ৫৫০০ টাকা দিয়েই সম্রাট মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার তহবিল তৈরি করতে পারবেন। আমার মতে:

• সম্রাটের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা নেই। তাই তাঁর উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা। সেখানে মাসে অন্তত ২০০০ টাকা করে রাখতে হবে।

• দু’তিনটি ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে দীর্ঘমেয়াদের জন্য এসআইপি চালু করতে হবে। মাসে রাখতে হবে মোট ২৫০০ টাকা করে। মাথায় রাখবেন, কয়েকটি ফান্ড সংস্থায় কিন্তু মাসিক ৫০০ টাকা কিস্তিতেও এসআইপি খোলা যায়।

• পেশার শুরুতে সকলেরই উচিত জীবন বিমার টার্ম পলিসি কেনা। কিন্তু সম্রাটকে এখনই তা শুরু করতে বলব না। রোজগার বাড়লে আর কয়েক বছর পরে সেটা করার চেষ্টা করতে হবে।

• এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি তা হল পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বিমা চালু করা। মা-বাবার জন্য সাধ্য অনুযায়ী একটি স্বাস্থ্য বিমা পলিসি কিনতে হবে। নিজের জন্য কিনতে হবে আরও একটি। যদি এখনই দু’টি পলিসি চালানো শক্ত বলে মনে হয়, তা হলে নিজেরটা পরে কিনবেন। কিন্তু মা-বাবাকে স্বাস্থ্য বিমার বাইরে রাখা যাবে না।

এখনই বাড়ি নয়

সম্রাট বাড়ি তৈরি করতে কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে চান। আমার পরামর্শ, এখনই এ বিষয়টি নিয়ে না-এগোনোই উচিত। কয়েকটা বছর পার হোক। আগে তৈরি হোক শক্তিশালী তহবিল। তার পরে এ ব্যাপারে ভাবা যেতে পারে। একই ভাবে আমার পরামর্শ, এখনই কোনও ধরনের ঋণও নিতে যাবেন না।

বেড়াতে যাওয়া

পরিশ্রম করলে অবসরের প্রয়োজন আছে। আর সারা বছর খাটুনির পর দরকার একটু বেড়াতে যাওয়াও। আমিও চাই সম্রাটেরও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হোক। তিনি যদি মাসে মাসে বাড়তি কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন, তা হলে সেই টাকা লিকুইড ফান্ডে রেখে দিতে পারেন। তা দিয়েই তৈরি হবে বেড়াতে যাওয়ার তহবিল।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন