‘ভাই-বোনের’ চাহিদা মেনেই শিল্পে নয়া নীতি

শুধু পরিকাঠামো, দক্ষ শ্রমিক বা পর্যাপ্ত বিদ্যুতের মতো লগ্নির প্রাথমিক শর্তগুলি পূরণের প্রতিশ্রুতি নয়— এ বার শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করেই বিনিয়োগের ডাক দিতে চলেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৬
Share:

শুধু পরিকাঠামো, দক্ষ শ্রমিক বা পর্যাপ্ত বিদ্যুতের মতো লগ্নির প্রাথমিক শর্তগুলি পূরণের প্রতিশ্রুতি নয়— এ বার শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করেই বিনিয়োগের ডাক দিতে চলেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

চলতি মাসের ১৬ ও ১৭ তারিখে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট ২০১৮’ অনুষ্ঠিত হবে। যে সব ক্ষেত্রে লগ্নি টানতে রাজ্য আগ্রহী, সেই সব ক্ষেত্র তুলে ধরা হবে ওই শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে। এবং ওই ক্ষেত্রগুলির জন্য নির্দিষ্ট নীতি তৈরির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, পণ্য পরিবহণ, রফতানি বৃদ্ধি, ইলেকট্রিক বাস, আর্থিক উৎসাহ সংক্রান্ত নীতি তৈরির কাজ চলছে। শিল্প সম্মেলনের আগে সব নীতি চূড়ান্ত না হলেও বিনিয়োগকারীরা কী কী সুবিধা পাবেন তার স্পষ্ট ধারণা দিতে অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট পরামর্শদাতা সংস্থাগুলি। গত বছর সম্মেলনের প্রথম দিনে শিল্পপতিদের বাংলাকে নিজের পরিবার হিসেবে গণ্য করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমার ভাই-বোনের কাছে লগ্নি চাইছি।’’ তাঁর এই আন্তরিকতাকে স্বাগত জানিয়েছিল শিল্পমহল। একই সঙ্গে লগ্নিকারীরা এ-ও বলেছিলেন যে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট নীতি প্রত্যাশা করেন তাঁরা।

সেই প্রত্যাশার কথা মাথায় রেখেই এ বছর বিশেষ কয়েকটি শিল্পক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সব ক্ষেত্রে লগ্নি টানার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রেও এই অগ্রাধিকারের কথা মাথায় রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ভিন রাজ্যে ‘রোড-শো’ থেকে শুরু করে সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু ঠিক করা, সবেরই অভিমুখ এটাই— দাবি পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-র। যেমন পেট্রোরসায়ন শিল্প। এই ক্ষেত্রে লগ্নি টানতে রাজ্য বিশেষ ভাবে আগ্রহী। তাদের নজরে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম তেল সংস্থা আরামকো ও আদিত্য বিড়লা কেমিক্যালসের নয়া প্রকল্প এবং হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের সম্প্রসারণ ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায় লগ্নির সুযোগ খতিয়ে দেখছে এই সংস্থাগুলি। তাই আর্থিক উৎসাহ নীতিতে এই শিল্পকে বিশেষ জায়গা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ মাসুলে মোটা অঙ্কের ছাড়ের প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও সেই প্রস্তাবে সরকারি সিলমোহর এখনও পড়েনি।

Advertisement

একই ভাবে ব্যাঙ্কিং ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের লগ্নি টানতে রফতানি বৃদ্ধি বা এক্সপোর্ট প্রমোশন নীতি নতুন করে তৈরি করছে রাজ্য। বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (এসইজে়ড)-এর বিরোধিতায় রাজ্য সরকার তার অবস্থান থেকে না সরলেও এক্সপোর্ট প্রমোশন নীতির আওতায় পরিষেবা ক্ষেত্রকে আনতে চায় তারা। বণিকমহলের মতে, পরিষেবা ক্ষেত্রের উপর বিশেষ সুবিধা দিলে ব্যাঙ্কিং ও তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পের লগ্নি টানা সহজ হবে।

বিনিয়োগ টানার এই কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে সিআইআই, ফিকি, অ্যাসোচ্যামের মতো সর্বভারতীয় বণিকসভাগুলি। তবে একই সঙ্গে রাজ্যের জমি নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। জমি অধিগ্রহণ থেকে সরকার হাত গুটিয়ে থাকায় সরাসরি মালিকের কাছ থেকে জমি কেনার ঝক্কি পোহাতে কত জন লগ্নিকারী রাজি হবেন, বা এক লপ্তে জমি পাওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে বণিকসভাগুলি এখনও সংশয়ী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন