অভিযোগ শিল্পমহলের

সহজে ব্যবসার শর্ত পূরণে পিছিয়েই রাজ্য

বিভিন্ন সরকারি ছাড়পত্র পাওয়ার সময়সীমা গত বছরই বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে প্রশাসনিক টালবাহানার কোনও জায়গা নেই বলে একাধিকবার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:২৪
Share:

বিভিন্ন সরকারি ছাড়পত্র পাওয়ার সময়সীমা গত বছরই বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে প্রশাসনিক টালবাহানার কোনও জায়গা নেই বলে একাধিকবার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

ব্যবসা করার প্রক্রিয়া সহজ করতে মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের নির্দেশ স্পষ্ট। কিন্তু তা কার্যকর করার মতো জায়গা তৈরি করতে পারেনি প্রশাসন, এমনটাই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের। তাদের মতে, এর উদাহরণ ১২০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রকল্প জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল। প্রায় ১৫০০ কোটি ডলারের ম্যারিয়ট হোটেল গোষ্ঠীর ৮১তম হোটেলটি শহরে চালু হলেও এখনও লিকার লাইসেন্স বা মদ বিক্রির ছাড়পত্র পায়নি। যে-লাইসেন্স ছাড়া পাঁচতারা হোটেল জৌলুসহীন বলে অভিযোগ এনেছে শিল্পমহল। ইএম বাইপাসে মঙ্গলবারই খোদ মুখ্যমন্ত্রী এটির উদ্বোধন করেছেন। ম্যারিয়ট অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেনি।

গত বছর জুনে টাউন হলে রাজ্যের সব বণিকসভার সদস্য ও শিল্পপতিদের সঙ্গে ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনার মূল বিষয় ছিল ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সহজ করার পথে কতটা এগিয়েছে রাজ্য। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, ২০১১ সালে সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠির বিচারে এ রাজ্যের স্থান ছিল সতেরো। অর্থাৎ সব রাজ্যের তালিকায় প্রায় শেষের দিকে।

Advertisement

২০১৫ সালে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ স্থান পায় ১১ নম্বরে। বিশ্বে ভারতের স্থান ছিল ১৩০। এ বার পরীক্ষার ফল ভাল করতে মরিয়া রাজ্য সরকার বিশ্বের প্রথম চার উপদেষ্টা সংস্থার অন্যতম কেপিএমজিকে নিয়োগ করেছে।

এই খামতির প্রসঙ্গ ধরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন জমির চরিত্র বদল, পরিবেশ, দমকল, বিদ্যুতের মতো ৩৮টি বিষয়ে একজানলা ব্যবস্থার মাধ্যমে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। এবং সব ক্ষেত্রেই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দিন পনেরোর বেশি সময় কোথাও লাগবে না বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে দিন মঞ্চে একে একে ডেকে এনেছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার, বিদ্যুৎ, শিল্প, শ্রম, পরিবেশ, পঞ্চায়েত, অর্থ, নগরোন্নয়ন ও দমকল দফতরের সচিবদের। প্রত্যেকের থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরের সুযোগ-সুবিধার খতিয়ান নিয়েছিলেন মঞ্চে দাঁড়িয়েই।

কিন্তু তারপরেও সরকারি সব দফতরের মধ্যে যে-যথাযথ সমন্বয় হয়নি, তা ম্যারিয়টের ঘটনায় ফের স্পষ্ট বলে অভিযোগ শিল্পমহলের। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, শুধু মদের লাইসেন্স নয়। বিভিন্ন সরকারি অনুমোদন পেতে পদে পদে প্রকল্পটিকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। যেমন, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে দমকলের ছাড়পত্র সম্প্রতি মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের অভিযোগ, ম্যারিয়ট নিয়ে সমস্যার মূলে প্রকল্পের জমি। বাম আমলে এই জমি হোটেলের নির্মাণ সংস্থাকে লিজ দেয় নগরোন্নয়ন দফতরের সংস্থা কেএমডিএ, যদিও জমির আসল মালিক কলকাতা পুরসভা। জমির মালিকানা ও সেই সূত্রে সম্পত্তি করের প্রাপক নির্ধারণ করা নিয়েই কলকাতা পুরসভা ও কেএমডিএ-র মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়, যে-বিতর্ক আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আপাতত সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা বিচারাধীন।

তবে সমস্যা যাই থাকুক, তার আঁচ প্রকল্পে পড়বে না বলে দাবি করলেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে দুই দফতরের সমস্যা মিটিয়ে নেব।’’ প্রায় একই সুরে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, জমি সংক্রান্ত বিতর্কের কারণে প্রকল্পের কোনও ছাড়পত্র তিনি আটকে রাখেননি। এবং সেই কারণেই উদ্বোধন সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মদের লাইসেন্স পাওয়ার শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিক থাকা। জমির মালিকের কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নেওয়াও বাধ্যতামূলক। মদের লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে এই শর্ত বাধা হয়েছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি ম্যারিয়ট কর্তৃপক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement