অরুণ জেটলি
ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই হিসেবে ত্রাণ প্রকল্পের (স্টিমুলাস প্যাকেজ) নীল নক্শা তৈরির কাজ শুরু করে দিল মোদী সরকার। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, প্রাথমিক হিসেবে এই প্যাকেজের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০-৬০ হাজার কোটি টাকা।
খুব শীঘ্রই এই ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়ে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি লগ্নিকারীদের এক সম্মেলনে বলেন, ‘‘বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সরকার তা জানে। খুব শীঘ্রই আমাদের থেকে কিছু শুনবেন।’’
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ইঙ্গিত, অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে দাওয়াই প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে মূলত চারটি ক্ষেত্রে। ব্যাঙ্কিং, রফতানি, পরিকাঠামো এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প। কেন্দ্র চাইছে নীল নক্শা এমন ভাবে তৈরি করতে, যাতে তার দৌলতে বেসরকারি বিনিয়োগের পালে হাওয়া ফেরে। তার হাত ধরে তৈরি হয় কাজের সুযোগ। কিন্তু তেমনই দাওয়াই হিসেবে পরিকাঠামোয় বাড়তি খরচ, কর ছাড় বা সুদে ভর্তুকির মতো সুবিধা দিতে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতির রাশ যাতে আলগা না-হয়, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখছে কেন্দ্র।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোট আর মাত্র দু’বছর বাকি। তার আগে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি আর কাজের সুযোগ তৈরি না-হওয়া চিন্তায় ফেলেছে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে। কারণ, মূলত অর্থনীতির হাল ফেরানো আর কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিতে সওয়ার হয়েই ‘দিল্লি দখল’ করেছিলেন তিনি। ঢেলে ভোট দিয়েছিল তরুণ প্রজন্ম। তাই পরের ভোটের সময়ে ওই দুই ছবি মলিন হলে বিরোধীরা যে তাঁকে বিঁধবেন তা বিলক্ষণ জানেন তিনি।
সরকারেরই একাংশের আশঙ্কা, তখন অর্থনীতির চাকা বসে যাওয়ার জন্য আঙুল উঠবে নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর দিকে। অনেকে বলছেন, সেই কারণেই ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণায় আর দেরি করতে
চায় না কেন্দ্র।
আসলে লগ্নি যে আসছে না, তা মূলধনী পণ্য ও ব্যাঙ্ক-ঋণের করুণ ছবি থেকেই স্পষ্ট। চাহিদায় ভাটার কারণে লগ্নি কম হওয়ায়, শিল্প ঋণের চাহিদা কম। যে-সমস্ত সংস্থা আগে ধার নিয়েছে, তা শোধ করতে খাবি খাচ্ছে তাদের অনেকেও। যে কারণে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে পাহাড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা। এই অবস্থায় তাই ত্রাণ প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-কে আরও বেশি শেয়ার মূলধন জোগাতে পারে কেন্দ্র। জেটলি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের জন্য নতুন পুঁজি জোগানোর প্রস্তাব টেবিলে রয়েছে।’’
মোদী বরাবরই বলেন যে, বড় শিল্পের থেকে ছোট-মাঝারি শিল্পে কর্মসংস্থান অনেক বেশি। কিন্তু নোট বাতিল এবং জিএসটি চালুর পরে সেই শিল্পই ধাক্কা খেয়েছে সবচেয়ে বেশি। এদের সুরাহা করতে করছাড়, সুদে ভর্তুকি কিংবা অতিরিক্ত পুঁজি জোগানোর পরিকল্পনা হচ্ছে।
রফতানিকারীদের অভিযোগ, জিএসটি-র জেরে কর জমা বাবদ তাদের নগদ আটকে থাকছে। টান পড়ছে পুঁজিতে। রফতানিকারীদের জন্য তাই জিএসটি-তে কিছু নিয়ম শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে উল্টো আশঙ্কাও রয়েছে। তা হল, ত্রাণ প্রকল্পের কড়ি গুনতে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হবে কি না। ২০০৮ সালের মন্দা সামাল দিতে গিয়ে যা হয়েছিল। পরে তার জেরে মাথাচাড়া দিয়েছিল মূল্যবৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রা আয়-ব্যয়ের চড়া ঘাটতি, টাকার দামে লাগাতার পতনের মতো সমস্যা। এ বার তাই জেটলিরও সেই পথে হাঁটা উচিত কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এখন ঘাটতির কথা ভাবার দরকার নেই বলে যেমন যুক্তি রয়েছে, তেমনই আগাম সাবধানতার কথাও বলছেন অনেকে। যেমন, ডিবিএস ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ রাধিকা রাওয়ের যুক্তি, ‘‘চটজলদি সমাধান করতে গিয়ে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। আমাদের মতে, বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করতে বাড়তি অর্থ ঢালা, সুদ কমানোর সুযোগ তেমন নেই।’’