Share Market

দুর্বার গতিতে ছুটছে সেনসেক্স, ফের নজির গড়ার অপেক্ষায় বাজার

বেশ কয়েক মাস ঝিমিয়ে থাকার পরে গত সপ্তাহে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে দুই সূচক। সোমবার মাত্র একটি কাজের দিনেই সেনসেক্স বেড়েছিল ২৯৭৫ পয়েন্ট।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৭:৪৬
Share:

নিফ্‌টি আবার উঠে গিয়েছে ২৫ হাজারের ঘরে। —প্রতীকী চিত্র।

সাত মাস বাদে সেনসেক্স ফের ৮২ হাজারে। নিফ্‌টি আবার উঠে গিয়েছে ২৫ হাজারের ঘরে।

বেশ কয়েক মাস ঝিমিয়ে থাকার পরে গত সপ্তাহে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে দুই সূচক। সোমবার মাত্র একটি কাজের দিনেই সেনসেক্স বেড়েছিল ২৯৭৫ পয়েন্ট। দৈনিক উত্থানের নিরিখে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। শুক্রবার অল্প সংশোধনের পরে সপ্তাহ শেষ করেছে ৮২,৩৩০ অঙ্কে। নিফ্‌টি হয়েছে ২৫,০২০। এই পর্বে মাঝারি মাপের (মিড ক্যাপ) এবং ছোট মাপের (স্মল ক্যাপ) শেয়ার সূচকও বেড়েছে দুর্বার গতিতে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পা রাখা সর্বোচ্চ জায়গা (৮৫,৮৩৬) থেকে সেনসেক্স এখনও ৩৫০৬ পয়েন্ট পিছনে ঠিকই। তবে গত সপ্তাহের উত্থানে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরা বেজায় খুশি।

উত্থানের পিছনে মূলত যে সব কারণ কাজ করেছে সেগুলি হল—

  • কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিদের হাতে পর্যটক হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চড়লেও, শেষ পর্যন্ত তা যুদ্ধে গড়ায়নি। বরং কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে ভারতের বিশেষ ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই।
  • এপ্রিলে খুচরো এবং পাইকারি, দুই বাজারেই মূল্যবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক জায়গায় নেমে এসেছে। এতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে টানা তৃতীয় বার সুদের হার কমানোর পথ চওড়া হল। সাধারণ মানুষ, শিল্পমহল, শেয়ার বাজার, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঋণের সুদ কমে আসা খুব জরুরি।
  • বাজারের আশা, আমদানি শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের গ্রহণযোগ্য সমঝোতা হবে। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।
  • ব্রিটেনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে, তাতে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • নির্ধারিত সময়ের কয়েক দিন আগে দেশে বর্ষা ঢুকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দফতর। তাদের অনুমান, এ বার দেশ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি বৃষ্টি পাবে।
  • আগের দু’মাসে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি কমলেও, বাজারে নগদের জোগান ভাল। বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির পুঁজি ফিরেছে শেয়ারে। জোরতালে লগ্নি করছে তারা। বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা এবং দেশে ঝিমিয়ে পড়া শেয়ার বাজার গত কয়েক মাস ধরে শেয়ার ভিত্তিক বা একুইটি ফান্ডে লগ্নি ক্রমশ কমারকারণ হতে পারে।
  • গত অর্থবর্ষে এবং তার শেষ তিন মাসে (গত জানুয়ারি-মার্চ) শিল্প সংস্থাগুলির আর্থিক ফল মোটের উপর খারাপ হয়নি।
  • পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থির ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গুরুত্ব পাচ্ছে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প। শেয়ার বাজারেও চাহিদা বেড়েছে এর আওতাভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ারের, যা সূচকের উত্থানে মদত জুগিয়েছে।
  • অনেকটা নীচে নেমেছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম। ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল রয়েছে ৬৫ ডলারের কাছে। সম্প্রতি তা নেমেছিল ৬০-৬১ ডলারে। এতে ভারতের আমদানি বিল কমেছে। এ জন্য অবশ্য দেশে পেট্রল ডিজ়েলের দাম কমেনি।

একসঙ্গে এতগুলি সদর্থক শর্ত বাজার অনেক দিন পায়নি। যে কারণে অল্প সময়ে সূচকের এমন নজর কাড়া উত্থান। পরিস্থিতি যা, তাতে লাভ ঘরে তোলার তাগিদে মাঝে মধ্যে সংশোধন হলে, সূচক আরও উপরে উঠতে পারে। এখন দেখার, কত দিনে তা গত সেপ্টেম্বরে গড়া নজির ভেঙে নতুন গড়ে। ভাল খবর এখনও আসছে। এপ্রিলে ভারতের রফতানি ৯.০৩% বেড়ে হয়েছে ৩৮৪৯ কোটি ডলার। টানা বিদেশি লগ্নি আসতে থাকায় দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার মজবুত হয়েছে। ৯ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে তা ৪৫০ কোটি ডলার বেড়ে পৌঁছছে ৬৯,০৬২ কোটি ডলারে।

আগামী মাসে আর এক দফা সুদ কমার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এর আগে দু’দফায় রেপো রেট (যে সুদের হারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) কমার কারণে ব্যাঙ্কগুলি যে হারে ঋণে সুদ কমিয়েছে, সকলে সেই অনুপাতে জমার উপর সুদ কমাতে পারছে না। ঋণে সুদ কমলে ঋণের চাহিদা বাড়ে। জমা কিন্তু সব সময় সেই অনুপাতে বাড়ছে না। কারণ শেয়ার বাজার তেজী থাকলে মোটা টাকা ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে শেয়ার এবং ফান্ডে লগ্নি হচ্ছে। অন্য দিকে, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদ এখনও বেশ উপরের দিকে থাকায়, তারাও মোটা লগ্নি টানছে। তাই আমানত ধরে রাখতে ব্যাঙ্কগুলি জমার উপরে এখনও পর্যন্ত সেই অনুপাতে সুদ কমাতে পারছে না। ফলে তাদের পক্ষে লাভের অঙ্ক বহাল রাখা শক্ত হচ্ছে। জমায় বেশি হারে সুদ না কমাতে পারা অবশ্য সুদ নির্ভর মানুষদের জন্যে ভাল।

গত কয়েক দিনে যে সব সংস্থা জানুয়ারি-মার্চের আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে লাভ বাড়াতে পেরেছে আইটিসি হোটেলস, টাটা স্টিল, বিড়লা কর্প, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, এল অ্যান্ড টি, কানাড়া ব্যাঙ্ক, টাইটান ইত্যাদি সংস্থা। তত ভাল ফল প্রকাশ করেনি যারা, তাদের মধ্যে আছে এশিয়ান পেন্টস, সিইএসসি।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন