দুই, তিন বা চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলে মিলবে সরকারি ভর্তুকি। পাশাপাশি, গাড়ি ‘চার্জ’ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তেও খরচ করবে কেন্দ্র। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রক এই বিশেষ প্রকল্প (ফেম) ঘোষণা করার পরেই নতুন উদ্যমে বাজার ধরতে নামছে ছোট-বড় বিভিন্ন গাড়ি সংস্থা। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে মহীন্দ্রা গোষ্ঠী, তেমনই আছে লোহিয়া অটো ইন্ডাস্ট্রিজ-ও।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড গাড়ির জন্য আগে শুধুমাত্র এককালীন কিছু সরকারি ভর্তুকি মিললেও, বছর তিনেক আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রচলিত জ্বালানির (পেট্রোল বা ডিজেল) গাড়ির থেকে প্রযুক্তিগত কারণে এ ধরনের গাড়ির দাম বেশি পড়ায় সরকারি ভর্তুকির অভাবে ভাটা পড়ে সেগুলির চাহিদায়। বহু বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা (মূলত দু’চাকার গাড়ি) ঝাঁপ বন্ধও করে দেয়।
ইউপিএ সরকারের আমলে অবশ্য ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য নয়া প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়। এনডিএ ক্ষমতায় আসার পরেও তা চালু থাকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই প্রকল্প ( ফাস্টার অ্যাডপশান অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অব হাইব্রিড অ্যান্ড ইলেকট্রিক ভেহিকল্স) অনুমোদনের কথা জানিয়েছে। নতুন প্রকল্পে অবশ্য চাহিদা বাড়াতে শুধু এককালীন আর্থিক সাহায্য নয়, ২০২০ সালের মধ্যে গবেষণা, চার্জ দেওয়ার পরিকাঠামো নির্মাণ, পাইলট প্রকল্প-সহ বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের সার্বিক পরিবেশ গড়ে তোলার উপরই জোর দেওয়া হয়েছে।
দু’টি পর্যায়ে এই প্রকল্প কার্যকর করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ’২০১৫-’১৬ এবং ২০১৬-’১৭, এই দুই আর্থিক বছরের জন্য মোট ৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে চলতি বছরে গাড়ির চাহিদা বাড়াতে সরকার ভর্তুকি দেবে ১৫৫ কোটি টাকা। মূলত গাড়ি কেনার সময় ওই টাকা ছাড় হিসেবে পাবেন ক্রেতা। চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে লক্ষাধিক টাকার সরকারি সাহায্য মিলবে। দু’চাকা ও তিন চাকার ক্ষেত্রে অবশ্য তা কম। আগামী বছর ক্রেতাদের ওই ভর্তুকি বেড়ে হবে ৩৪০ কোটি টাকা।
চার্জ দেওয়ার পরিকাঠামো গড়তে এ বছর ১০ কোটি টাকা এবং পরের বছর ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ভারী শিল্প মন্ত্রক। তবে এখনই দেশের সর্বত্র নয়, কিছু এলাকায় ফেম প্রকল্পে এই সব সুবিধা মিলবে। সেগুলি হল— প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটি, দিল্লি, গ্রেটার মুম্বই, কলকাতা-সহ মেট্রো শহর, সব রাজ্যের রাজধানী, ১০ লক্ষের বেশি বাসিন্দার অন্যান্য শহর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহরগুলি।
বৈদ্যুতিক স্কুটার ও তিন চাকার গাড়ি তৈরি করে লোহিয়া অটো ইন্ডাস্ট্রিজ। সংস্থাটির সিইও আয়ুষ লোহিয়ার মতে, ফেম প্রকল্পটি এ ধরনের গাড়ির বাজার বাড়াতে সাহায্য করবে। তিনি জানান, উত্তর ভারতের পরে এ বার তাই পূর্বাঞ্চলের বাজার ধরতে আগ্রহী তাঁরা। এ জন্য কলকাতা-সহ পূর্বাঞ্চলে শীঘ্রই ৮ জন ডিলার নিয়োগ করবেন তাঁরা।
মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট ও চিফ এগজিকিউটিভ (অটোমোটিভ) প্রবীণ শাহ-ও মনে করেন, ফেম প্রকল্প দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজার বাড়াবে। কারণ গাড়ি কিনলে যে ‘ইনসেন্টিভ’ দেওয়ার কথা কেন্দ্র বলেছে, তার পুরো সুবিধাই পাবেন ক্রেতা। বস্তুত, আগের থেকে তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘ইটুও’-র দাম (দিল্লিতে) ১৬% কমবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।