কালো টাকা রোখার অস্ত্রে ধাক্কা কেন্দ্রের

অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল নিজেও সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছিলেন, কালো টাকা সংক্রান্ত মামলায় আইনের ওই ধারাটি কার্যকর অস্ত্র। কিন্তু তাতে মন গলেনি সুপ্রিম কোর্টের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২১
Share:

কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ধাক্কা খেল কেন্দ্র।

Advertisement

কালো টাকা লেনদেন প্রতিরোধ আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি রোহিংটন ফলি নরিম্যান ও বিচারপতি সঞ্জয় কিসান কউলের বেঞ্চের রায়, ওই আইনের ৪৫ নম্বর ধারায় জামিন পাওয়ার জন্য জোড়া শর্ত চাপানো রয়েছে। আর তাতে জামিন পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

নোট বাতিলের পর থেকে এই ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’-কেই প্রধান হাতিয়ার করেছিল মোদী সরকার। যে সব ভুয়ো সংস্থার বিরুদ্ধে কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ বা যাদের হেফাজত থেকে পুরনো নোট উদ্ধার হয়েছে, তাদের জেলে পুরতেও এই আইনই ছিল প্রধান অস্ত্র। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল নিজেও সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছিলেন, কালো টাকা সংক্রান্ত মামলায় আইনের ওই ধারাটি কার্যকর অস্ত্র। কিন্তু তাতে মন গলেনি সুপ্রিম কোর্টের।

Advertisement

বিচারপতিদের যুক্তি, আইনের মন্ত্র হল— জামিনই নিয়ম, জেল ব্যতিক্রম। আইনের এই ধারায় তা হয়ে দাঁড়িয়েছে, জেলটাই নিয়ম। জামিন ব্যতিক্রম। কারণ ৪৫ নম্বর ধারায় জামিনের জন্য দু’টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এক, সরকারি আইনজীবীকে জামিনের বিরোধিতার সুযোগ না দিয়ে জামিন দেওয়া যাবে না। দুই, যদি আদালত প্রাথমিক ভাবে মনে করে যে, অভিযুক্ত অপরাধে জড়িত নয়, তা হলেই একমাত্র জামিন দেওয়া যাবে। বিচারপতিদের যুক্তি, এর ফলে জামিন পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রথম যখন ১৯৯৯ সালে এই বিল সংসদে পেশ হয় এবং ২০০২ সালে পাশ হয়ে ২০০৫-এ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, তার মধ্যেও আইনি ভাষায় যথেষ্ট ফারাক রয়েছে।

কেন্দ্রের জন্য এর থেকেও বড় চিন্তার কারণ হল, আইনের ওই ধারা প্রয়োগ করে বিভিন্ন আদালতে যে সব জামিন খারিজের রায় দেওয়া হয়েছে, সেগুলিও শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। নির্দেশ দিয়েছে, নতুন করে ওই সব মামলার যত শীঘ্র সম্ভব শুনানি করতে হবে। কারণ অভিযুক্তরা জেলে বন্দি রয়েছেন। এর সঙ্গে তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত।

সুপ্রিম কোর্টে এই মামলায় মোদী সরকারের বর্তমান ও সদ্য প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে আইনি যুদ্ধও দেখা গিয়েছে। সরকারের পক্ষে আইনের শক্ত ধারার হয়ে লড়েছেন বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। অন্য দিকে নিকেশ তারাচাঁদ শাহদের মতো যাঁরা আইনের এই ধারার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাঁদের হয়ে সওয়াল করেছেন প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি। রোহতগির মূল যুক্তি ছিল, আইনের ওই ধারাটি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে। উল্টো দিকে বেণুগোপালের যুক্তি ছিল, সংবিধান সম্মত ভাবেও এই আইনকে কাজে লাগানো যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন