অযত্ন: তিনচুলে চা বাগান। দীর্ঘ দিন পাতা তোলা বন্ধ। অন্যান্য বাগানের মতো এটিও ভরেছে আগাছায়। বেড়ে গিয়েছে চা গাছের উচ্চতা। —নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ে বন্ধ উঠেছে। তা বলে এখনই তেমন ভাবে কাজে ফিরতে পারেনি দার্জিলিঙের চা বাগান। পরিস্থিতি যা, তাতে এ বার আর চা তৈরি আদৌ সম্ভব নয়।
চা গাছগুলি অস্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাগানও আগাছায় ভর্তি। সে সব সাফসুতরো করে গাছগুলিকে উৎপাদনযোগ্য করতেই যে-বিপুল খরচ, কর্মীদের বোনাস মেটানোর পরে তার পুরোটা বহন করতে তারা অক্ষম, দাবি চা শিল্পের। সেই ভার কিছুটা অন্তত লাঘব করতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের আর্জি জানিয়েছে তারা।
১০৪ দিন ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের জেরে পর্যটনের মতো মুখ থুবড়ে পড়েছে দার্জিলিং চায়ের ব্যবসাও। ফার্স্ট ফ্লাশের পরে এ বার আর কোনও চা তৈরি হয়নি সেখানে। ধর্মঘট উঠলেও এ বছরে আর চা তৈরির সম্ভাবনাও নেই। দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিটিএ) সেক্রেটারি জেনারেল কৌশিক বসু বুধবার জানান, বাগানগুলিতে গড় হাজিরা এখনও ৪০শতাংশের কম। ফলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঢিমেতালে কাজকর্ম চলছে। আগাছা সরিয়ে চা গাছ ছেঁটে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে হবে। বর্ষায় বাগানের অনেক রাস্তাও খারাপ হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু বাগানগুলির হাতে যা অর্থ রয়েছে তাতে বোনাস দেওয়ার পরে এ সব রক্ষণাবেক্ষণের কাজ মাস দেড়েকের মতো চালানো যাবে। তারপর পুঁজির সঙ্কট হবে। তাই বন্ধ ওঠার পরে আমরা রাজ্যের শ্রম দফতর ও টি বোর্ডের কাছে আর্থিক সুবিধা চেয়েছি। তা না-পেলে বেশি দিন এই কাজ চালান কঠিন।’’ তাঁদের হিসেব বলছে, সব মিলিয়ে বাগানগুলির খরচ হবে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এ প্রসঙ্গে জানান, দফতর খুললে বিষয়টি খোঁজ নেবেন। টি বোর্ডের ডেপুটি চেয়ারম্যান তথা বাণিজ্য মন্ত্রকের সচিব শ্যামল মিশ্রের দিল্লির অফিসে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, অফিসের বাইরে তিনি বৈঠকে ব্যস্ত। উল্লেখ্য, আগে একই দাবিতে একবার টি বোর্ডের দ্বারস্থ হয়েছিল চা শিল্প।
কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ মিলছে না কেন?
চা শিল্পের কর্তারা জানান, বাগানে মজুত চা ও ভবিষ্যতে উৎপাদন শুরুর আশ্বাসের ভিত্তিতে কার্যকরী মূলধন মেলে। কিন্তু এ বার তো কোনও চা-ই তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতের উৎপাদনও অনিশ্চয়তার গর্ভে। তাই নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে পারছে না।
বাগানে হাজিরা কম থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হতে দেরি হবে বলেও দাবি ডিটিএ-র। তাদের দাবি, হাজিরা বাড়লেও এই কাজ শেষ হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মার্চে চা গাছে পাতা আসে। কিন্তু এ বার মে মাসের আগে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে মরসুমের প্রথম পর্বের চা উৎপাদন (আদপে ফার্স্ট ফ্লাশ) অনেকটাই ধাক্কা খাবে। উল্লেখ্য, আগামী বছরে ফার্স্ট ফ্লাশের উৎপাদন অন্তত ৪০% কমবে বলে আগেই তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
পুজোর আগে বন্ধ চলাকালীনই বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ডিটিএ-র দাবি, কর্মীদের হাজিরা কম থাকায় সব বাগানের সমস্ত কর্মীকে বোনাস এখনও মেটানো যাচ্ছে না।