Bengaluru Apartment’s Justice System

আবাসনে চলত দেদার মাদকসেবন, চুরি, যৌননিগ্রহ, মোটা জরিমানা দিলেই ‘সাত খুন মাফ’! তদন্তে উঠে এল ভয়াবহ সত্যি

দক্ষিণ-পশ্চিম বেঙ্গালুরুর দোদ্দাবেলের একটি বড় আবাসন। তাতে বাস করেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন। পড়াশোনার সূত্রে আসা বহু ছাত্র-ছাত্রীরও বাস এই আবাসনে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৫
Share:
০১ ১৬

শহরের মধ্যেই ‘খাপ পঞ্চায়েত’। দেশের অন্যতম আধুনিক শহর। একাধিক নামীদামি প্রযুক্তি সংস্থার ঝাঁ-চকচকে কার্যালয় রয়েছে এই শহরটিতে। অথচ উন্নত, সাজানো-গোছানো শহরের পিছনে রয়েছে একটি অন্য দুনিয়া। আলোর দ্যুতিতে ঝলমল করা শহরের একটি আবাসনে চলত সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা।

০২ ১৬

দক্ষিণ-পশ্চিম বেঙ্গালুরুর দোদ্দাবেলের একটি বড় আবাসন। তাতে বাস করেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন। পড়াশোনার সূত্রে আসা বহু ছাত্র-ছাত্রীরও বাস এই আবাসনে। ঠিক যেন ‘মিনি ভারত’। সম্প্রতি এই আবাসনকে ঘিরে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

Advertisement
০৩ ১৬

বেঙ্গালুরু পুলিশ একটি অ্যাপার্টমেন্টের রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এবং একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতেই প্রকাশ্যে এসেছে এক অদ্ভুত তথ্য। পুলিশের অভিযোগ, আবাসনের সামগ্রিক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংগঠন সমান্তরাল প্রশাসনিক ব্যবস্থা কায়েম করে রেখেছে।

০৪ ১৬

কোনও আইনি ছাড়পত্র বা কর্তৃত্ব ছাড়াই বেমালুম আবাসনের বাসিন্দাদের উপর শাস্তির খাঁড়া নামিয়ে এনেছে রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাটি। নিজস্ব সমান্তরাল আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জারি করে বাসিন্দাদের থেকে যথেচ্ছ জরিমানা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাগুলি পুলিশের নজরে পড়তেই ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।

০৫ ১৬

ছোটখাটো ঝগড়া থেকে শুরু করে চুরি, যৌন হয়রানি, এমনকি আবাসন চত্বরের মধ্যে মাদকদ্রব্য ব্যবহার বা রাখার মতো গুরুতর অপরাধ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিচারের শাসনদণ্ড নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে সংগঠন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বাসিন্দাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সমস্ত ক্ষমতা নিজেদের হাতেই রেখেছিলেন আবাসন পরিচালনা কর্তৃপক্ষ।

০৬ ১৬

সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, অপরাধের শাস্তি হিসাবে যে জরিমানা নেওয়া হত, তা কোনও আইনি সমর্থন ছাড়াই আরোপ করা হয়েছিল বাসিন্দাদের উপর। পুলিশের দাবি, এই সমান্তরাল শাসনব্যবস্থার ফলে বন্ধ দরজার পিছনে অপরাধগুলি গোপনেই ‘নিষ্পত্তি’ করা হয়েছিল।

০৭ ১৬

বেঙ্গালুরুর দক্ষিণ-পশ্চিমের কুম্বালাগোডু থানায় এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এফআইআরে প্রভিডেন্ট সানওয়ার্থ অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং টাইকো সিকিউরিটি সার্ভিসেসকে মূল অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান নিরাপত্তা আধিকারিক চন্দ্রহাসা, সংগঠনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কর্মী, সভাপতি, সচিব এবং কোষাধ্যক্ষ-সহ সমিতির বেশ কয়েক জন পদাধিকারীর এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

০৮ ১৬

পুলিশের মতে, আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে ভিন্‌রাজ্যের ছাত্রেরাও রয়েছেন। বেশ কয়েক জন বাসিন্দা ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যৌন হয়রানি, চুরি, অ্যাপার্টমেন্টে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং অবৈধ ভাবে মাদক মজুত রাখার মতো গর্হিত অপরাধের সঙ্গেও অনেকে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

০৯ ১৬

আবাসনটি অপরাধের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হওয়ার পরও পুলিশকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি সংশ্লিষ্ট পরিচালন কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাটি। উল্টে আবাসন পরিচালন সমিতি নিজস্ব আইন প্রণয়ন করেছে সেখানে। বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাটিও হাতে হাত মিলিয়ে সমিতিকে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ।

১০ ১৬

সমিতি এবং নিরাপত্তা সংস্থা বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তিদের এক্তিয়ার-বহির্ভূত ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে শাস্তির বিধান দিয়েছে। ২৫,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

১১ ১৬

ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অনিতা বি হাড্ডান্নাভার বলেন, “সংগঠনের কর্তারা আবাসনে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে জরিমানা আদায় করছিলেন। তাঁরা হয়রানি, চুরি এবং অবৈধ মাদকদ্রব্য রাখার মতো অপরাধের জন্য ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা নিতেন। এর মধ্যে অনেকগুলিই ফৌজদারি অপরাধ। আবাসনের ‘বাসিন্দা কল্যাণ সমিতি’ মর্জিমাফিক জরিমানা আরোপ করে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। আমরা এখন মামলা দায়ের করেছি।”

১২ ১৬

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, সমিতিটি তাঁদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিন মাসে নগদ এবং ইউপিআই ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। পুলিশকে জানানোর পরিবর্তে অননুমোদিত শাস্তিমূলক নিয়ম তৈরি এবং প্রয়োগ করে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। মামলাগুলি ধামাচাপাও দেওয়া হয়েছিল। অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে তারা।

১৩ ১৬

এফআইআরে আরও অভিযোগ, প্রধান নিরাপত্তা আধিকারিক অবৈধ ভাবে আবাসনে প্রবেশ করেছিলেন। কোনও আইনি অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি চালিয়েছিলেন। তল্লাশিতে পাওয়া মাদকদ্রব্য নিজেরাই উদ্ধার করে জরিমানা চাপিয়েছিলেন। এমনকি উদ্ধার হওয়া মাদক পুড়িয়ে দিয়ে সমস্ত প্রমাণ লোপাটও করে দেয় নিরাপত্তা সংস্থাটি।

১৪ ১৬

আইনি কর্তৃত্ব ছাড়াই বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা টাইকো সিকিউরিটি সার্ভিসেস। এমনকি মাদক মামলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির মায়ের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয়েছিল। অভিযুক্ত পরিবারকে অ্যাপার্টমেন্টটি খালি করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

১৫ ১৬

সমিতি বিভিন্ন অপরাধের জন্য জরিমানা নির্দিষ্ট করে নিজস্ব ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং’ পদ্ধতি তৈরি করেছে। সেই ‘আইন’ প্রয়োগের জন্য সেগুলি নিরাপত্তা সংস্থাটিকে দায়িত্ব দিয়ে দেয়। পুলিশ জানিয়েছে কোনও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলির ফৌজদারি অপরাধ তদন্ত বা জরিমানা আরোপের কোনও আইনি অধিকার নেই। সমস্ত অপরাধই পুলিশের নজরে আনা বাধ্যতামূলক।

১৬ ১৬

পুলিশের বক্তব্য, ২০০৩ সাল থেকে পার্কিংয়ে আইন লঙ্ঘন বা সাধারণ সম্পত্তির ক্ষতির মতো ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের জন্য সমিতির কাছে বৈধ ক্ষমতা ছিল। এই বছরের জুলাই মাস থেকে সেই ক্ষমতারই অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অভিযোগের শাস্তি দিতে ফতোয়া জারি করে সমিতি। বেশ কয়েকটি পরিবারকে বাড়িছাড়া করা হয়। এর ফলে তদন্ত কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমান।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement