প্রত্যাশা মতো চাহিদা বাড়ছে না বলেই বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য কয়লা খনির দরজা খুলতে দেরি করছে কেন্দ্র। ফলে আপাতত কয়লা ক্ষেত্রের সংস্কার থমকে গিয়েছে বলে হতাশ শিল্প মহলও।
২০২০ সালের মধ্যে দেশে কয়লা উৎপাদন ১০০ কোটি টনের উপরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। তা ছুঁতে গেলে শুধু কোল ইন্ডিয়ার উপর ভরসা করা যাবে না বলেই ধারণা তাদের। তাই বেশ কিছু খনি বাণিজ্যিক ভাবে খননের জন্য নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকেও দেওয়ার কথা জানায় কেন্দ্র। কয়লা শিল্পে এই সংস্কারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় বণিক মহলও। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষে কয়েকটি খনি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখনই বেসরকারি সংস্থার জন্য কয়লা খনি বণ্টন করা হচ্ছে না। সংবাদসংস্থা রয়টার্স-এর খবর অনুযায়ী এর ফলে কয়লা উৎপাদনের যে-লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল সেই অঙ্কে পৌঁছনো যাবে না।
কিছু দিন আগেও কোল ইন্ডিয়ার প্রতি অভিযোগ ছিল, চাহিদা মতো তারা কয়লার জোগান দিতে পারছে না। বিশেষ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করেছে কয়লা মন্ত্রকের কাছে। গত এক-দেড় বছরের মধ্যে সেই চিত্রটা বদলে গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি উৎপাদন যে-হারে বাড়িয়েছে, তাতে কয়লার জোগান নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারছে না। বরং ঋণের বোঝায় জর্জরিত বহু বিদ্যুৎ সংস্থা কয়লা কিনতে পারছে না। কিনলেও কম কিনছে। যে-কারণে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে আর্থিক ভাবে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রকে বিশেষ প্রকল্প (উদয়) ঘোষণা করতে হয়েছে। শিল্পমহলের অনেকের মতে, জ্বালানির চাহিদা হঠাৎ কমে যাওয়ায় মন্ত্রক ধীরে চলো নীতিই নিতে চাইছে।
রয়টার্সকে কয়লা সচিব অনিল স্বরূপ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ শিল্পে যে- সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে কয়লার চাহিদা কিছুটা বাড়বে। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য কয়লা শিল্পের দরজা খুলে দিতে আমরা প্রস্তুত। কিছু কারণে দেরি হচ্ছে।’’
সম্প্রতি কলকাতায় এসেও অনিল স্বরূপ জানিয়ে গিয়েছিলেন, বাণিজ্যিক খননের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলির দরজা খুলে দেওয়ার সময় এখনও হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছু দিন লাগবে। বাজারের পরিস্থিতির দিকে তাঁরা নজর রাখছেন বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি ছিল, বেসরকারি সংস্থাগুলি এখনই না-পেলেও আট-দশটি খনি তাঁরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির জন্য নিলামে তুলবেন। ওই খনিগুলি থেকে কয়লা তুলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বাজারে কয়লা বিক্রি করতে পারবে।
এখন কোল ইন্ডিয়া ও কয়েকটি ছোট-মাঝরি সরকারি সংস্থা কয়লা খনন করে দেশের বাজারে বিক্রি করতে পারে। পাশাপাশি, বিদেশ থেকেও প্রচুর কয়লা আমদানি করা হয়। কয়লা খনি শিল্পে বেসরকারি লগ্নি টানার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ৪০ বছর ধরে কোল ইন্ডিয়া যে- একচেটিয়া ব্যবসা চালিয়ে আসছে, তাতে লাগাম পরানো যাবে।
কিন্তু শিল্পমহলের অনেকেই মনে করছেন, এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে কয়লার জোগান অস্বাভাবিক বাড়ায় দামও কমেছে। সামগ্রিক ভাবে পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত বেসরকারি লগ্নিকারীরা। এই অবস্থায় কয়লা খনির দরজা বেসরকারি সংস্থার জন্য খুলে দিলে আদানি গোষ্ঠীর মতো কিছু ভারতীয় সংস্থা লগ্নিতে আগ্রহী হতে পারে। তবে বহুজাতিক সংস্থাগুলি কতখানি এগিয়ে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের।