ঠিক যেন আবোল তাবোলের সেই খুড়োর কল!
সুকুমার রায়ের সেই কবিতায় যতই দৌড়ও, খাবার কখনও নাগালে আসেনি। ঠিক তেমনই ‘অচ্ছে দিনে’র গাজর সামনে ঝুলিয়ে রেখেও তা হাতে পাওয়ার সময় ক্রমশ পিছোচ্ছে মোদী সরকার। পরের বছর সরকারের মেয়াদ শেষ। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে ২০২২ সালে নতুন ভারত গড়ার ডাক। এ বার আরও এক দশক পিছিয়ে ২০৩২ সালে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক শক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি শুরু করে দিল মোদী সরকার। সৌজন্যে প্রস্তাবিত নতুন শিল্প নীতি।
অর্থনীতির মাপে এখন ভারত ষষ্ঠ। কেন্দ্রের দাবি, ২০৩২ সালে আমেরিকা, চিনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম হবে তারা। সেই স্বপ্ন দেখিয়েই নতুন শিল্প নীতি আনতে চলেছে তারা। লোকসভা ভোটের আগে যাকে সব আর্থিক সংস্কারের গুরুঠাকুর হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র।
সূত্রের খবর, শিল্প নীতির মোড়ক খোলার পরে মোদী সরকারের দাবি হবে, এর হাত ধরে ২০২০ সালে বৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি হবে। ২০২৫-এর মধ্যে অর্থনীতির বহর পৌঁছবে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে। এখন যা ৩ লক্ষ কোটিরও কম। আর তার মাত্র সাত বছর পরে দেশের অর্থনীতির মাপ নাকি ছোঁবে ১০ লক্ষ কোটি ডলার।
গত বছর থেকেই মোদী সরকার নতুন শিল্প নীতি তৈরির কাজ শুরু করেছিল। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, খসড়া প্রায় তৈরি। সায় পেতে শীঘ্রই তা যাবে মন্ত্রিসভায়। বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু আগেই দাবি করেছেন, এই নতুন নীতি নাকি দেশকে এগিয়ে দেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে!
শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদেরও যুক্তি, এ’টি দেশের তৃতীয় শিল্প নীতি। স্বাধীনতার পরে নেহরুর জমানায় ১৯৫৬ সালে প্রথম শিল্প নীতি তৈরি হয়। ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় শিল্প নীতি তৈরি হয় দেশকে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট থেকে বার করতে। সেখানে এখন অর্থনীতির ভিত পোক্ত। মূল্যবৃদ্ধি, ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে। তাঁদের মতে, এটাই সময় সংস্কারে গতি আনার। যাতে জিডিপিতে কারখানার ভাগ বাড়ে। যা এখন ২৯%। অথচ চিনে ৪৪%।
সরকারি সূত্রের খবর, এই নীতিতে প্রয়োজনে চাষি, গরিব পরিবার ছাড়া অন্যদের বিদ্যুতে ভর্তুকি ছাঁটাই হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে জিএসটি পরিষদের ধাঁচে মঞ্চ তৈরি হতে পারে। তাহলে এত দিন মেক ইন ইন্ডিয়ার ঢাক পিটিয়ে কি লাভ হল, তার উত্তর সে ভাবে নেই।
শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তারই টিপ্পনি, ‘‘জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিতে সবুর তো করতেই হবে।’’